অর্কিডের সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতা যে কাউকে বিস্মিত করে তোলে। এপিফাইটিক ও টেরেস্ট্রিয়াল আমাদের দেশে সহজলভ্য। এই অর্কিডগুলি জনপ্রিয় কারণ এরা বাড়িতে ভাল জন্মায়। এপিফাইটিক হলো পরজীবি উদ্ভিদ অর্থাৎ অন্য কোনো বড় গাছের উপর নির্ভর করে বেছে থাকে। আর টেরেস্ট্রিয়াল অর্কিড মাটিতেই জন্মায়। তাই বাসায় লাগানোর জন্য টেরেস্ট্রিয়াল অর্কিডই সুবিধাজনক।
অর্কিডের যত্নে করণীয় (Crop Care) -
মাটি -
নতুন অর্কিড বাগানীরা প্রায়শই যেই ভুল করে তা হল, অর্কিডকে অন্যান্য প্রস্ফুটিত ফুলের মতো মাটিতে পট করা দরকার। এটি একটি গুরুতর ভুল। বেশিরভাগ অর্কিডের শিকড় বায়ুথলি সমৃদ্ধ, এরা পরিবেশ থেকে বায়ুথলির সাহায্যে বাতাস নেয়। যা কিনা মাটি দিয়ে পট করা অর্কিডকে বাধাগ্রস্থ করে। সুতরাং পটিং মিক্স ও কোকোডাস্ট দিয়ে পট তৈরি করুন।
তাপমাত্রা -
উষ্ণতা প্রিয় অর্কিডগুলো দিনের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং ২৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে বেড়ে ওঠে। এর মধ্যে ফ্যালেনোপসিস অর্কিড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সাধারণত নার্সারিগুলিতে বিক্রি হওয়া অর্কিডগুলি বেশিরভাগই উষ্ণতাপ্রিয় হয়ে থাকে।
আর্দ্রতা -
বেশিরভাগ অর্কিডগুলি বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭০ শতাংশ আর্দ্রতা পছন্দ করে যা আমাদের বেশিরভাগ ঘরের তুলনায় অনেক বেশি। সুতরাং, অর্কিডকে অতিরিক্ত আর্দ্রতা সরবরাহ করার চেষ্টা করতে হবে। অর্কিডের জন্যে সাধারণত স্প্রে বোতল দিয়ে কৃত্রিম আর্দ্রতা তৈরি করাই ভাল। যদি উদ্ভিদের শিকড়গুলির বায়ুথলি পাত্রের থেকে বেড়ে বাইরে চলে আসে, তবে সেই শিকড়গুলির জন্যে কিছুটা আর্দ্রতার দরকার হবে। বাড়িতে আপনি একটি ট্রেতে ছোট ছোট চারা রোপন করতে পারেন। জল এবং নুড়ি দিয়ে এটি পূরণ করে নিন। জল বাষ্পীভূত হয়ে এটি অর্কিডে কিছুটা অতিরিক্ত আর্দ্রতা সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এই কৌশলটি নিঃসন্দেহে খুবই কার্যকরি।
পুষ্টি -
অর্কিড বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন, সালফার, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন। শীতকালে অর্কিডের বৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন জাতের ক্ষেত্রে সার দেওয়ার হার বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। নিচে কিছু জাতের কথা উল্লেখ করা হলঃ
অর্কিড চাষ (Orchid Farming) -
অর্কিড ছায়াযুক্ত সুনিষ্কাশিত কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে চাষ করা যায়। প্রখর সূর্যের আলোতে এ ফুল ভালো হয় না। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের জন্য জমিতে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়, যাতে ৪০-৬০% সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে। টবে চাষের ক্ষেত্রে বড় গাছের নিচে এ ফুলের চাষ করা যেতে পারে। এ জাতটি বহুবর্ষজীবী।
উৎপাদন -
গাছের ফুল বা ফুল কাটার পর প্রতিটি গাছ থেকে পার্শ্বীয়ভাবে সাকার বের হয়। এই সাকারগুলো গাছে লাগানো অবস্থায় যখন শেকড় বের হয়, তখনই গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মূল জমিতে লাগানো যেতে পারে। এছাড়া কেটে ফেলা ফ্লাওয়ার স্টিকের ফুল শেষ হয়ে গেলে তা থেকেও চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। এজন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।
জমি তৈরি -
বিভাজন প্রক্রিয়ায় গাছ থেকে সাকার সংগ্রহ করে অথবা টিস্যু কালচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চারা তৈরি করে জমিতে লাগাতে হয়। পচা গোবর বা কম্পোস্ট, নারিকেলের ছোবড়া, ধানের তুষ ও বেলে দো-আঁশ মাটির সমপরিমাণ মিশ্রণের মাধ্যমে বেড তৈরি করতে হয়।
রোপণ -
সাকার লাগানোর সময় সারি থেকে সারি ৩০-৪০ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছে ২৫-৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হয়। সাকার লাগানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে শেকড়গুলো পুরোপুরি মাটির নিচে থাকে।
সার প্রয়োগ (Fertilizer) -
ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সমৃদ্ধ ২০:২০:২০ মিশ্র সার বেশ উপযোগী। সার পানিতে গুলিয়ে সপ্তাহে এক বা দু’দিন গাছে স্প্রে করতে হয়। স্প্রে করার সময় গাছের পাতা যেন ভালোভাবে ভিজে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জল নিষ্কাশন -
মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকতে লাগানোর পর হালকা সেচ দিতে হয়, যাতে সাকারগুলো মাটিতে লেগে যায়। পরবর্তীতে আবহাওয়ার অবস্থা বুঝে সেচ দিতে হবে। এছাড়াও এ ফুল চাষের জন্য বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০ ডিগ্রি বজায় রাখতে হলে স্প্রিংকলার দিয়ে মাঝে মাঝে জল স্প্রে করতে হয়। জমিতে দাঁড়ানো জল এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর।
রোগ-বালাই -
ফুলটিতে সাধারণত কোনো রোগ বা পোকার আক্রমণ দেখা যায় না। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। ফুলের কুঁড়ির কীড়া দমনের জন্য যেকোনো সিস্টেমিক বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফুল কাটা -
সাকার থেকে গাছ লাগানোর একবছরের মধ্যেই ফুল আসে। মূলত ফুল আসার সময় ফাল্গুন-চৈত্র মাস। অপরদিকে টিস্যু কালচার থেকে পাওয়া চারা থেকে ফুল পেতে কমপক্ষে আঠারো মাস সময় লাগে। বাণিজ্যিক চাষের ক্ষেত্রে স্টিকের এক বা দু’টি ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কাটতে হবে। বাগানে বা টবে সৌখিন চাষের ক্ষেত্রে ফুল কাটার প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে গাছে প্রায় ৩০-৪৫ দিন পর্যন্ত ফুল টিকে থাকে।
আরও পড়ুন - Crop Care - গাছের বৃদ্ধি কমে যাচ্ছে অথবা অপরিপক্ক অবস্থায় ফল ঝরে যাচ্ছে? জানুন প্রতিকারের উপায়
ফলন -
প্রতি হেক্টরে প্রথম বছর ৮ হাজার স্টিক, দ্বিতীয় বছর ১৫ হাজার স্টিক এবং তৃতীয় বছর ২৫ হাজার স্টিক পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতিবছর গাছ থেকে চারা রেখে ২-৫টি সাকার সংগ্রহ করা যায়।
আরও পড়ুন - Brown Plant Hopper – ধান চাষে ব্রাউন হপার-এর আক্রমণ হলে কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?