এই বর্ষায় ঢেঁড়স চাষ (Okra farming) বেশ লাভজনক | শুধু বর্ষাকাল নয়, সারাবছরই প্রায় ঢেঁড়স চাষ করে লাভবান হয়ে যায়, বাজারে এই সবজির চাহিদাও বেশি | কিন্তু, অনেক সময় চাষীভাইরা ঢেঁড়স চাষে সমস্যার সম্মুখীন হয় | ঢেঁড়সের বিভিন্ন রোগ (Lady finger plant diseases) চাষীদের দুশ্চিন্তায় ফেলে | তাই, এই নিবন্ধে ঢেঁড়সের বিভিন্ন রোগবালাই ও তার সহজ দমন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো,
১)গোড়া ও কাণ্ড পচা(Foot and stem rot)রোগ:
ম্যাক্রোফোমিনা ফেসিওলিনা (Macrophomina phaseolina) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। রোগটি বীজ, মাটি ও বায়ু বাহিত। সাধারণত মে মাসের দিকে এই রোগ দেখা যায় এবং জুন-জুলাই মাসে মারাত্মক আকার ধারণ করে।
মাটি সংলগ্ন গাছের গোড়া নরম হয়ে পচে যায়। আক্রান্ত শিকড়ে ও কালো কালো বিন্দুর মতো দেখা যায়। রোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে ২-৩ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গাছ শুকিয়ে যায়।
প্রতিকার:
সুস্থ বীজ বপন করতে হবে। মৌসুমের শুরুতেই ক্ষেতের গাছ শিকড়সহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন+থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে। মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-ডাইথেন এম ৪৫) প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম হারে অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-সানভিট ৫০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার জলে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - Lemon diseases and remedies: শিখে নিন লেবু গাছের রোগ দমনের দুর্দান্ত প্রতিকারসমূহ
২)পাতায় দাগ(Leaf spot)রোগ:
অলটারনারিয়া ও সারকোসপোরা (Alternaria and Cercospora) প্রজাতির ছত্রাকদ্বয়ের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। গাছের পরিত্যক্ত অংশ থেকে রোগের জীবাণু এক জমি থেকে অন্য জমি অথবা এক গাছ হতে অন্য গাছে ছড়ায়।
পাতায় বিভিন্ন আয়তনের গোলাকার, বাদামি ও চক্রাকার দাগ দেখা যায়। সাধারণত দুর্বল গাছে এই রোগ বেশি হয়। পাতার নিচের দিকে ঘন কালো গুঁড়ার আস্তরণের সৃষ্টি করে। রোগের প্রকোপ বেশি হলে পাতা মুচড়িয়ে যায় এবং পরে ঝলসে ঝড়ে পড়ে।
প্রতিকার:
পরিমিত সার ও সময়মতো সেচ প্রয়োগ করতে হবে। কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন+থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে। অলটারনারিয়া পাতায় দাগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ইপ্রোডিয়ন গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-রোভরাল ৫০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম অথবা ডাইফেনোকোনাজল+এ্যাজোক্সিস্ট্রবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-এমিস্টার টপ ৩২৫ এসসি) প্রতি লিটার জলে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
৩)মোজাইক ভাইরাস (yellow vein mosaic)রোগ:
ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে | এ রোগে পাতাগুলোতে হলুদ ও সবুজ রংয়ের মোজাইক দেখা যায়। পাতা কুঁকড়ে যেতে পারে এবং গাছের বৃদ্ধি ও ফলন খুব কমে যায়।
প্রতিকার:
আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট করে দিতে হবে। জমিতে জল নিষ্কাশন করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ থেকে বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়। এ রোগ সাধারণত সাদা মাছি দ্বারা বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি দমনের জন্য টাফগর / সানগর ২ মিলি,/ এডমায়ার ০.৫ মিলি/ একতারা ০.২৫ গ্রাম/ রগর বা রক্সিয়ন ২ মিলি / লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া ভাইরাস প্রতিরোধক জাত ব্যবহার করা ভালো।
৪)শিকড় গিট (Root knot)রোগ:
মেলোয়ডোগাইন (Meloidogyne spp.) প্রজাতির কৃমির আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। চারা অবস্থায় কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং গাছ খর্বাকৃতির হয়। পাতা হলুদাভ সবুজ বা হলুদ রঙ ধারণ করে ও পাতা ঝড়ে পড়ে। গাছে ফুল ও ফলের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। আক্রান্ত গাছের মূলে ও মূলরোমে অসংখ্য গিট দেখা যায়।
প্রতিকার:
হেক্টরপ্রতি ৪০ কেজি কার্বোফুরান গ্রুপের কীটনাশক (যেমন-ফুরাডান ৫জি) অথবা ইসাজোফস গ্রুপের কীটনাশক (যেমন-মিরাল ৩জি) মাটিতে ছিটিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।
আরও পড়ুন -Pokkali Rice Farming: বিশ্বের প্রাচীনতম ও দীর্ঘতম ধান হলো পোক্কালি