ফসল চাষে কৃষকরা অনেক সময় উদ্ভিদের পাতার রং পরিবর্তিত হতে দেখে কারণ বুঝতে পারেন না। পাতার রং বা আকৃতি পরিবর্তিত হয় অনুখাদ্যের অভাবে। সাধারণ চাষীরা ফসলে অনুখাদ্য ব্যবহার আজ থেকে ১২-১৫ বছর আগে সার্বিক ভাবে শেখা শুরু করেছে। কিন্তু এখনো যদি প্রত্যন্ত গ্রাম গুলিতে দেখা যায় যে চাষীরা সেভাবে অনুখাদের ব্যবহার করছেন না। মূল সার গুলি দিয়েই তাঁরা নিরস্ত থাকছেন।
অনুখাদ্যের ব্যবহার না করার কারণ অনুসন্ধান করলে যে সব তথ্য জানা যায় তা হলো, মূলতঃ অনুখাদ্যের ব্যবহারের গুরুত্ব ঠিক মতো না বোঝা ও দিন দিন রাসায়নিক সার এর পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে করতে তাদের খরচের পরিমান এতটা বেড়ে গেছে উপরন্তু উৎপন্ন ফসল অনেক সময়ই ফসলের সঠিক দাম না পেয়ে তাঁরা চাইছেন যেভাবেই হোক তাঁদের খরচা কমুক।তাই অনেক ক্ষেত্রই দেখা গেছে অনুখাদের বিষয়টি অবহেলার জায়গায় থেকে গেছে।
চাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গাছে অনুখাদ্যের অভাব প্রথমেই পরিলক্ষিত হয় পাতায়। তাই পাতা দেখে সহজেই অনুখাদ্যের অভাব চিহ্নিত করা যায়। পাতার রং এবং আকারের পরিবর্তন দেখে সহজে বুঝে নিন কোন অনুখাদ্যের প্রয়োজন।
সালফার (S) –
পাতার রঙ হালকা সবুজ থেকে হলদেটে হয়ে যায়। শিরাগুলি ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। পাতায় কোন ছোপ পড়েনা।
ম্যাঙ্গানিজ (Mn) –
পাতা সম্পূর্ণ হলদে ভাব ধারণ করে। মূল শিরা এবং উপশিরাগুলি গাঢ় সবুজ থাকে – পাতার চেহারা খোপ খোপ আকার নেয়।
জিঙ্ক (Zn) –
পাতা সরু এবং ছোট হয়ে যায়। উপরের স্তর হালকা হলুদ হয়ে যায়। সারা পাতায় বাদামী লালচে ছোপ পড়ে – শিরায়, পাতার শেষে, পাশে এবং সর্ব স্থানে।
ম্যাগনেশিয়াম(Mg) -
পাতায় হলুদ রং দেখা যায়, কোন ছোপ পড়ে না, শিরা সবুজ থাকে, পাতার মাথা ও পাশগুলি বেঁকে কুঁকড়ে যায়। বেশী অভাবে পাতা পঁচে গিয়ে ঝড়ে পড়ে।
ফসফরাস (P) –
অভাবে গাছ বেঁটে ও অস্বাভাবিক সবুজ হয়। পাতা খাড়া ও অস্বাভাবিক সরু হয়। বেশী অভাবে পাতার রং বাদামী সবুজ থেকে কালো হয়ে যায়। পাতার পিছনের দিকটা তামাটে হয়ে আসে।
ক্যালসিয়াম (Ca) –
গাছ পুরো সবুজ থাকলেও মাথার দিকের পাতা ফ্যাকাসে ও আংটার আকার নেয়। পাতার মাথা ও পাশগুলো শুকাতে থাকে ও ক্রমে পাতাগুলি মরে যায়।
আয়রন(Fe) –
অভাবে পাতার ধারগুলি হলুদ ও মাঝখানটি সাদাটে হয়ে যায়। কোন ছোপ পড়ে না। শিরাগুলি স্বাভাবিক সবুজ থাকে।
কপার (Cu) –
পাতার নিচের দিক ঝুকে পড়ে, শিরা হলুদ হয়ে যায় ও সহজেই ঝড়ে পড়ে।
মলিবডেনাম (Mo) –
পাতার রং সোনালী হলুদ থেকে কমলা হয়ে যায়। পাতার উপর বাদামী ছোপ পড়ে, পাতার নিচের দিকে চ্যাটচ্যাটে ভাব দেখা যায়।
পটাশিয়াম (K) –
পাতা হলদে হয়ে যায়, পাতার বোঁটার দিক হলদে থাকে, মাথা ও পাশগুলি বাদামী লালচে রং ধারন করে। পাতার মাথার দিক জংধরার মত দেখায়। পাতা কুঁকড়ে বেকে যায়।
নাইট্রোজেন (N) -
অভাবে গাছ বেঁটে ও অস্বাভাবিক হালকা সবুজ হয়ে যায়। হলকা সবুজ থেকে হলুদ হয়। বিশেষ অভাবে ঝলসানো চেহারা নেয়।
আরও পড়ুন - Organic Farming: অর্গ্যানিক ফার্মিং বা জৈব কৃষিকাজে ফলছে সোনার ফসল
তাহলে কৃষকবন্ধুরা জেনে গেলেন তো, আপনাদের ফসলে ঠিক কীসের ঘাটতি রয়েছে বা হচ্ছে? সুতরাং, অধিক লাভ করতে হলে এবার আর দেরী না করে শীঘ্রই আপনার সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করুন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে। অথবা রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন –এও যোগাযোগ করতে পারেন যে কোন রকম কৃষি সংক্রান্ত সমস্যার জন্য। টোল ফ্রি হেল্পলাইন নম্বর ১৮০০ ৪১৯ ৮৮০০-এ ফোন করলে কৃষকরা যে কোন বিষয়ে কৃষি সংক্রান্ত সহায়তা পাবেন।
আরও পড়ুন - বর্ষায় আপেল ফসলে সহজ পদ্ধতিতে রোগ নিয়ন্ত্রন