ফসল উৎপাদনে কৃষকবন্ধুদের অন্যতম সমস্যা হলো, মাটির তীব্র অম্লতা | যার জন্য ফসলের প্রাপ্ত ফলন পাওয়া যায়না | প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহারের মাধ্যমে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মাটির অম্লত্ব। অনেক সময়ে মাটি হয়ে যাচ্ছে বন্ধ্যা এবং হারিয়ে যাচ্ছে মাটির সাধারণ জৈবিক গুণাবলী | এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো জমিতে সুপারিশকৃত মাত্রা অনুসারে ডলোচুনের ব্যবহার। সাধারণত ডলোচুন হলো এক ধরনের সাদা পাউডার জাতীয় দ্রব্য। এটিকে ডলোচুন (Dolomite Lime powder) ডলোঅক্সিচুন বা ডলোমাইট পাউডারও বলা হয়।
মাটির অম্লত্বের তীব্রতা নির্ধারণ করা হয় মাটির অম্লমান বা পিএইচ দ্বারা। মাটির অম্লমান সর্বাধিক ১৪ পর্যন্ত হতে পারে। মাটির অম্লমান ৭-এর নিচে বা কম হলে তা অম্লীয় মাটি। আর ৭-এর উপরে বা বেশি হলে তা ক্ষারীয় মাটি। অম্লমান-৭ থেকে যত কমতে বা নামতে থাকবে মাটি তত বেশি অম্লীয় হবে। আর মাটির অম্লমান ৫.৫ বা এর কম হলে তা তীব্র অম্লীয় মাটির পর্যায়ে পড়ে। ফলে সুপারিশকৃত মাত্রায় ডলোচুন ব্যবহার করলে তীব্র অম্লীয় মাটিকে সংশোধন (Corrects soil acidity) করা যায়। ডলোচুনে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা তীব্র অম্লীয় মাটির অম্লত্ব হ্রাস করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন -Diseases management in okra: বর্ষায় ঢেঁড়স গাছের রোগ দমনের প্রতিকার শিখে নিন
ডলোচুন প্রয়োগ মাত্রা(Amount of Dolomite lime powder):
অধিক অম্লীয় মাটিতে প্রয়োগের মাত্রা হলো শতকে ০৪ কেজি বা একরে ৪০০ কেজি বা হেক্টরে ১০০০ কেজি। কোনোভাবেই এর মাত্রা কম বেশি করা যাবে না। কোনো জমিতে একবার ডলোচুন প্রয়োগ করলে পরে ৩ বছর আর ডলোচুন প্রয়োগ কয়ার প্রয়োজন হয় না।
ডলোচুন ব্যবহারের নিয়ম(How to use):
কোনো জমিতে ডলোচুন প্রয়োগের আগে সুপারিশকৃত মাত্রা অনুসারে মোট ডলোচুনকে সমান ২ ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। জমির মাটিতে জো থাকা অবস্থায় উত্তর-দক্ষিণ বরাবরে অর্ধেক পরিমাণ ডলোচুন ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক পরিমাণ ডলোচুন পূর্ব-পশ্চিম বরাবর বা আড়াআড়িভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। ডলোচুন প্রয়োগের সাথে সাথে আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কমপক্ষে ৭ দিন পর জমিতে প্রয়োজনীয় চাষ ও মই দিয়ে ফসল বুনতে বা গাছ রোপণ করতে হবে। ডলোচুন প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে বীজ বপন করলে বীজের অঙ্কুরোদগমের হার কমে যেতে পারে বা অঙ্কুরিত গাছের মূল ও কাণ্ডের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। জমি যদি শুকনো হয় বা রস কম থাকে তাহলে ডলোচুন ব্যবহারের নিয়ম হলো ফাঁকা জমিতে প্রয়োজন মতো ডলোচুন আড়াআড়িভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এরপর চাষ দিতে হবে। মই দিয়ে সমান করতে হবে। সাথে হালকা সেচ দিতে হবে। অতঃপর কমপক্ষে ৭ দিন পর জমিতে প্রয়োজনীয় চাষ ও মই দিয়ে ফসল বুনতে বা গাছ রোপণ করতে হবে।
ডলোচুন ব্যবহারের সুবিধা(Benefits of dolomite lime):
১) ডলোচুন প্রয়োগ করা সহজ, খরচ কম এবং বাজারে সহজলভ্য।
২) গম, ভুট্টা, আলু, সরিষা, ডাল, মসলা ও সবজি জাতীয় ফসলের ফলন শতকরা ১০-৫০% বৃদ্ধি পায়।
৩) ডলোচুন ১ বার প্রয়োগ করলে পরবর্তী ৩ বছর প্রয়োগ করতে হয় না।
৪) ডলোচুন ১ বার প্রয়োগ করলে ম্যাগনেসিয়াম সারের প্রয়োজন পড়ে না।
৫) ফসলের গুণগতমান বৃদ্ধি পায় যেমন আলুর স্কেব রোগ কম হয়, সবজি ফসলের রঙ উজ্জ্বল হয়, পাটের কালো পট্টি রোগ কম হয়।
৬) জমিতে সমানভাবে ফসলের বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
কি কি ফসল ফলানো যায়(High yield crops):
আমন ধান কাটার পরে ফাঁকা জমিতে বা রবি মৌসুমে ডলোচুন প্রয়োগের উত্তম সময়। ডলোচুন যেহেতু মাটির অম্লতা সংশোধন করে মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করে, ফসল উৎপাদন উপযোগী করে তোলে তাই সব ধরনের ফসল গম, ভুট্টা, আলু, সরিষা, পাট, ডালজাতীয় ফসল, তেলজাতীয় ফসল, মসলাজাতীয় ফসল এবং শাকসবজি জাতীয় ফসলের ফলন বৃদ্ধি ও গুণগতমানের ফসল পাওয়ার জন্য অম্লীয় মাটিতে ডলোচুন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডলোচুন ব্যবহারের সতর্কতা(Warnings):
১) ডলোচুন প্রয়োগের সাথে সাথে চাষ ও মই দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
২) মাঠে ফসল আছে এমন অবস্থায় ডলোচুন প্রয়োগ করা যাবে না।
৩) বেশি বাতাসের সময় ডলোচুন মাটিতে ছিটানো যাবে না।
৪) জমির দাঁড়ানো জলে বা কাদা অবস্থায় ডলোচুন প্রয়োগ করা যাবে না।
আরও পড়ুন -Pokkali Rice Farming: বিশ্বের প্রাচীনতম ও দীর্ঘতম ধান হলো পোক্কালি