অনুষ্ঠান অথবা পুজো, যাগযজ্ঞ অথবা বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব, এই সবকটি উপাচারের সঙ্গে জলজ একটি ফুলের নাম জড়িত। পদ্ম। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অনুষঙ্গেও এই বিশেষ প্রজাতির ফুলটির যোগাযোগ ঘনীভূত হচ্ছে। অত্যন্ত সুন্দর দেখতে এই ফুলটি, শতদল, সহস্রদল, কোকোনোদ নামেও মানুষের কাছে পরিচিত। পুরাণ কথা বা ভারতীয় মহাকাব্যগুলিতেও এই ফুলের অস্তিত্ত্ব বিদ্যমান। ভারতের জাতীয় ফুল হিসাবেও পদ্ম ফুল নিজের জায়গা করে নিয়েছে। বাঙালি মননে-সাহিত্যেও এই পদ্ম ফুলের ভূমিকা বার বার উঠে এসেছে।
গোটা ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্রায় সব জায়গাতেই এই ফুলের চাষ হয়। বাংলার ‘ক্ষীরাই’ অঞ্চল পদ্মফুলের উপত্যকা বলে বহুদিন ধরে বিখ্যাত। গোটা রাজ্যের পদ্ম ফুলের ৫০ শতাংশ এই অঞ্চলেই চাষ হয়। পশ্চিমবঙ্গের দুই মেদিনীপুর, বাগনান, হুগলী, দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং রূপনারায়ণ নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলিতে উন্নত মানের পদ্ম চাষ হয়। পদ্মফুল সাধারণ জমিতে বা জলাশয়ে চাষ হয়। বাড়িতেও অনেক সৌখিন মানুষ পদ্ম ফুলের চাষ করে থাকেন।
পদ্ম চাষের ব্যবসায়িক সাফল্য: (Lotus Farming business profit)
সঠিক উপায়ে পদ্ম ফুলের চাষ এই চাষ নতুন করতে আসা কৃষকদের স্বচ্ছলতা অনেকাংশে তৈরী করবে। এই ফুলের চাষ ব্যসায়িক ভাবেও সফল বলে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। পশ্চিমবঙ্গের অনেক কৃষক নিজস্ব জলাভূমিতে পদ্মের চাষ করেন আর চাষের জন্য নিজেদের জলাশয় নেই তারা অন্যের মালিকানার জলাভূমিতে পদ্মের চাষ চুক্তিভিত্তিতে করে থাকেন। বাংলার পদ্ম ফুল বাইরের বেশ কয়েকটি রাজ্যে রফতানি হয়, যারমধ্যে রাজস্থান, পাঞ্জাবের নাম উল্লেখযোগ্য।
পদ্ম ফুলের সর্বাধিক চাহিদার সময়: (Demands of Lotus Flower)
এই ফুলের চাহিদা সারাবছর থাকলেও, নবরাত্রি আর দুর্গা পুজোর সময়টাতে এর চাহিদা তুঙ্গে থাকে। এই সময় পদ্ম চাষিদের লাভের পরিমাণ সর্বাধিক হয়। এই ফুলের পাতাগুলির চাহিদা খাবার খাওয়ার পাত্র হিসাবেও প্রচুর। পাতা বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
চাষের উপযুক্ত সময়: (Cultivation Time)
জুলাই-অগাস্ট মাসে পদ্ম চাষ করা হয়। পদ্ম ফুল মূলত লাল, গোলাপী, হলুদ, সাদা এই রংগুলিতেই অধিক পরিমাণে বাজারে মেলে। গাছগুলি বীজ বা কন্দ থেকে জন্মাতে পারে। প্রথমে বীজগুলিকে ক্লোরিনমুক্ত উষ্ণ জলে রাখতে হবে। পদ্মের বীজ থেকে কন্দ না বের হওয়া পর্যন্ত নিয়ম করে জল পরিবর্তন করা উচিত। লক্ষ্য রাখতে হবে কন্দ যেন জলে ভাসমান অবস্থায় থাকে এবং যথেষ্ট সূর্যের আলো পায়। বীজ থেকে কন্দ বার হওয়ার সপ্তাহ কয়েক হওয়ার পরেই তা রোপণ করার জন্য তৈরী হয়ে যায়। পাতা বড় হতে শুরু করলে উদ্ভিদ গভীর জলে রোপণের জন্য সাধারণত তৈরী হয়ে যায়।
পদ্ম চাষের জন্য কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত: (Lotus Cultivation Precautions)
বীজ থেকে পদ্মের চাষ করতে হলে বৃদ্ধির প্রথম বছরে নিষিক্ত করা যাবে না। পদ্ম কন্দে ছ’টি পাতা ফোটার পরে সার প্রয়োগ শুরু করা উচিত।প্রতি তিন থেকে চার সপ্তাহ বাদে বাদে সার প্রয়োগ করতে হবে। উদ্ভিদ সুপ্ততা প্রস্তুতির জন্য জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে প্রয়োগ বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তরল কীটনাশক পদ্ম চাষের উপযুক্ত নয়, এই বিশেষ শ্রেণীর কীটনাশক প্রয়োগে পদ্ম পাতা পুড়ে যেতে পারে। মিলডিউ এবং রটিং থেকে পদ্মকে বাঁচাতে লাইভ স্প্যাগনাম মশে সংরক্ষণ করা উচিত।
আরও পড়ুন: African Horned Melon – ভিন দেশের এই সবজী কীভাবে চাষ করবেন, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি
বর্তমানে বাংলার অনেক কৃষক পদ্ম ফুল চাষে স্বতোৎপ্রনোদিত ভাবে এগিয়ে আসছেন। পদ্ম ফুল চাষে প্রচুর পরিমাণে লাভের জন্য বহু তরুণও এই বিশেষ কৃষি ব্যবস্থায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অস্বীকারের কোনও জায়গায় নেই, পদ্ম চাষে লাভ বৈকি ক্ষতির কোনও সম্ভাবনাই নেই।
আরও পড়ুন: Chrysanthemum flower cultivation: চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ করে চাষি ভাইদের লক্ষাধিক আয়