মাশরুম খাননি এমন মানুষ দুনিয়াতে খুব কমই আছে। রান্না করা মাশরুম পেলে ছেলে থেকে বুড়ো সবার জিভে জল চলে আসে। খাদ্যরসিক মানুষদের সবার প্রিয় এই ব্যাঙের ছাতা 'থুড়ি' মাশরুম। তবে আজকাল আর সাধারণ মানুষ মাশরুম খাওয়া নিয়েই মেতে নেই। অনেকে আবার রোজগারের আশায় মাশরুম চাষেও নেমে পড়েছেন, তাও আবার ঘরে! শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি। মাশরুম চাষে অতিরিক্ত রোজগারের পরিমাণ অনেকটাই, যার জন্য বর্তমানে বহু মানুষ বিকল্প আয়ের জন্য মাশরুম চাষকে বেছে নিচ্ছেন সানন্দে। পরিবারের মহিলা সদস্যরাও মাশরুম চাষ করে নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলছেন।
হাই প্রোটিনযুক্ত এই ছত্রাক জাতীয় পরজীবী উদ্ভিদ খাদ্য হিসাবে অত্যন্ত পুষ্টিকর। খুব সহজেই এই চাষ ঘরে বসে করা যায়। ডাক্তারি মতে মাশরুমে প্রোটিন বাদে অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন আছে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
আমাদের দেশের জলবায়ুতে অয়েস্টার মাশরুমের চাষই ভালো হয়, তাই আজ জেনে নেওয়া যাক এই বিশেষ শ্রেণীর মাশরুম চাষের পদ্ধতি।
অয়েস্টার মাশরুম চাষ( Oyster Mushroom Farming)
অয়েস্টার মাশরুম চাষের জন্য মূলত তিন ধরনের উপকরণ দরকার। স্পন অর্থাৎ মাশরুমের বীজ, খড় এবং পলিথিনের ব্যাগ। এই তিনটি উপকরণ মজুদ থাকলেই মাশরুমের চাষ অনেকাংশে সহজ হয়ে যায়।
অয়েস্টার মাশরুম চাষের পদ্ধতি (Procedure of Oyster Mushroom Farming)
সবার প্রথমে আধ থেকে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত গরম জলে প্রায় ২০ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। ব্লিচিং পাউডার ও চুন মেশানো পরিষ্কার জলে গোটা একটা দিন ভিজিয়ে রাখলেও হবে। এরপর এমন করে শুকনো করতে হবে যাতে খড় চিপলে জলও না পড়ে কিন্তু হাতে একটা ভেজা ভাব থাকবে। এবার পলিথিনের ব্যাগের ভেতর দু’ তিন ইঞ্চি পুরু খড় বিছিয়ে তার উপর ব্যাগের ধার ঘেঁষে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে।
বীজের উপরে আবার খড় দিতে হবে আবার খড়ের উপর বীজ, কম করে সাত-আটটা স্তর একইরকম ভাবে তৈরি করে পলিব্যাগের মুখ কয়েকটা প্যাঁচ কষে বন্ধ করে দিতে হবে। প্রত্যেকবার খড় বিছানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কিছুতেই খড়ের ফাঁক দিয়ে হাওয়া না ঢোকে। তারই জন্য স্তর করার জন্য হাত দিয়ে চেপে চেপে খড় বিছাতে হবে।
মাশরুম বদ্ধ প্যাকেটে এবার ছোট ছোট ছিদ্র করে তা তুলো দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। এর ফলে হাওয়া চলাচল স্বাভাবিক ভাবেই হবে। এবার মাশরুমের বীজ ভর্তি পলিথিনের প্যাকেটগুলো অন্ধকার ঘরে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: Easiest way of Arahar/Tur Dal Cultivation সহজে শিখুন অড়হর চাষ
মনে রাখা দরকার, ঘর অন্ধকার হলেও তা যেন একেবারে বদ্ধ না হয়। হাওয়া চলাচলের অবকাশ যেন সেই ঘরে থাকে।
কিছু দিন পরেই প্যাকেটে সাদা আস্তরণ দেখা দেবে, যাকে মাইসেলিয়াম বলে। কয়দিনের মধ্যে পুরো ব্যাগটা মাইসেলিয়ামে ভরে যাবে। তুলোগুলো বার করে নিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগে আর কয়েকটা ফুটো করে নিয়ে, ব্যাগটাকে আলোর মধ্যে রেখে দিতে হবে।
মাইসেলিয়াম পরিপূর্ণ ব্যাগ এবার সামান্য আলোয় ঘরের মধ্যে রেখে দিতে হবে। মনে রাখা দরকার আলো যেন তীব্র না হয়। আর্দ্রতা বুঝে নিয়ে, প্যাকেটে মাঝে মাঝে জলের ছিটে দিতে হবে। লক্ষ্যণীয় বিষয়, প্লাস্টিকের ছিদ্রগুলি দিয়ে মাশরুমের পিনহেডগুলো কয়েকদিন পরেই বেরিয়ে আসতে শুরু করবে। এরপর ২০ থেকে ২৫ দিনের মাথাতেই মাশরুম খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়ে যাবে। অতএব এবার মাশরুমগুলিকে বাজারজাত করাই যায়। লাভের বিষয় হল একটা প্যাকেট থেকেই তিনবার মাশরুম ফলন পাওয়া যায়, যা অবশ্যই একটা অতিরিক্ত পাওনা।
আরও পড়ুন: Drum Seeder - ধান চাষে বীজ বপনের এই আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে পাবেন ধানের বাম্পার ফলন