এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 7 August, 2021 3:20 PM IST
Wheat Farming

আমরা যে আটার রুটি খাই তার মূল ফসল হল গম। ধানের পরেই আমাদের রাজ্যে গমের চাহিদা সবথেকে বেশি। আমাদের রাজ্যে যে পরিমাণে ধানের চাষ হয় সে অনুপাতে গমের চাষ হয় না। কিন্তু গম একটি অর্থকরী ফসল। দেশের বহু রাজ্যে গমের চাষ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গেও বহুল পরিমানে বর্তমানে গমের চাষ করা হচ্ছে। গম চাষ করে বহু কৃষক লক্ষ্মী লাভ করছেন। আগামী দিনেও গম চাষ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম একটি প্রধান অর্থকরী চাষ হতে চলেছে।

চাষের সময় (Timing of Cultivation)

নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত গম চাষের উপযুক্ত সময়। তাপ সহনশীল গমের প্রজাতি ডিসেম্বর মাসের ১৫-২০ তারিখ পর্যন্ত রোপন করা যেতে পারে।

জলবায়ু (Climate)                                                                

গ্রীষ্ম ও অবগ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু থেকে শুরু করে নাতিশীতোষ্ণ ও তুন্দ্রাঞ্চলীয় জলবায়ুতেও গম জন্মায়।  বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৩৮০-১১৪৩ মিলিমিটার গম চাষের জন্য দরকার, তবে ২৫৪-১৭৭৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বার্ষিক বৃষ্টিপাতেও গমের উৎপাদন ভালো হয়।

মাটি (Soil)

দো-আঁশ মৃত্তিকা গম চাষের জন্য আদর্শ মাটি। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে গম চাষ খুব ভালো হয়। মাঝারি নিচু জমিতেও গম চাষ করা সম্ভব।  দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটি গম চাষের জন্য সবথেকে উপযুক্ত মাটি।  সহজে জল নিষ্কাশিত হয় এমন ভারী অর্থাৎ এঁটেল ও এঁটেল-দোঁআশ মাটিতেও গমের চাষ করা চলে৷

চাষ পদ্ধতি (Farming Process)

পশিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেই গমের চাষ বেশি হয়ে থাকে। গম চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি জমি বেশি উপযোগী। তবে মাঝারি নিচু জমিতেও গম চাষ করা যায়। দোআঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি গম চাষের জন্য সর্বোত্তম। আবার সহজে পানি নিষ্কাশিত হয়, এমন এঁটেল ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতেও গমের চাষ করা যায়। লবণাক্ত মাটিতে গমের ফলন কম হয়। বোনার জন্য একর প্রতি গম বীজের প্রয়োজন হয় ৪৮ কেজি বা বিঘা প্রতি ১৬ কেজি। বীজ গজানোর ক্ষমতা ৮৫% বা তার বেশি হলে ভালো হয়। ৮০% এর নিচে হলে প্রতি ১ ভাগ কমের জন্য একরপ্রতি ৪০০ গ্রাম গম বীজ বেশি বুনতে হয়। তবে ৬০% এর নিচে হলে সেই গম বীজ বোনা উচিত নয়। বোনার আগে গম বীজ প্রোভেক্স-২০০ (প্রতি কেজি বীজে ৩ গ্রাম হারে) বা কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম হারে) দিয়ে শোধন করে নিতে হয়। বীজ শোধন করলে বীজবাহিত রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং নতুন গজানো চারা সুস্থ ও সবল থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, এতে গমের ফলন শতকরা ১০-১২ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সারিতে অথবা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। তবে সারিতে বুনলে জমি তৈরির পর লাঙ্গল দিয়ে বা বীজ বপন যন্ত্রের সাহায্যে সরু নালা করে ২০ সেমি. দূরত্বের সারিতে ৪-৫ সেমি. গভীরতায় বীজ বুনতে হয়। ধান কাটার পরপরই পাওয়ার টিলারচালিত বীজ বোনার যন্ত্রের সাহায্যে স্বল্পতম সময়ে গম বোনা যায়। এই যন্ত্র দিয়ে একসঙ্গে জমি চাষ, সারিতে বীজ বপন ও মইয়ের কাজ করা যায়।

সার প্রয়োগ (Fertilizer)

গমের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য জমি চাষ করার সময়ই প্রতি শতকে ৩০-৪০ কেজি জৈব সার প্রয়োগ করা ভালো। সেচসহ শেষ চাষের সময় প্রতি শতাংশে ৬০০-৭০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০-৭০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০-৪০০ গ্রাম এমওপি এবং ৪৫০-৫০০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হয়। সেচ সহ চাষের বেলায় চারার ৩ পাতা হলে প্রথম সেচের পর দুপুরে মাটি ভেজা থাকা অবস্থায় প্রতি শতাংশে ৩০০-৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হয়। অন্যদিকে সেচ ছাড়া চাষের বেলায় সব ইউরিয়া (শেষ চাষের সময়+উপরি প্রয়োগের সময় দেয়) সার একত্রে শেষ চাষের সময় অন্যান্য রাসায়নিক সারের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হয়। জমিতে বোরনের ঘাটতি দেখা দিলে বা বোরন ঘাটতি থাকলে প্রতি শতাংশে ২৫ গ্রাম করে বোরিক এসিড শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। যেসব জমিতে দস্তা সারের ঘাটতি থাকে এবং আগের ফসলে দস্তা সার ব্যবহার করা হয়নি সেসব জমিতে শতকপ্রতি ৫০ গ্রাম করে দস্তা সার প্রয়োগ করতে হয়। দস্তা সার শেষ চাষের সময় দেয়া ভালো।

রোগবালাই ও দমন (Disease management system)

গমের পাতার মরিচা রোগ:

পাকসিনিয়া রিকন্ডিটা নামক ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রথমে পাতার উপর ছোট গোলাকার হলুদ দাগ পড়ে। শেষ পর্যায়ে এই দাগ মরিচার মত বাদামী বা কালচে রংয়ে পরিনত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে মরিচার মত গুড়া হাতে লাগে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নীচের পাতায় , তারপর সব পাতায় ও কান্ডে দেখা যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: Dhyan Chand Khel Ratna Award: রাজীব গান্ধী নয়, এবার থেকে ধ্যান চাঁদ খেল রত্ন পুরস্কার পাবেন ক্রীড়াবিদরা

প্রতিকার:

১) রোগ প্রতিরোধী গমের জাত  কাঞ্চন, আতবর , অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরবের চাষ করতে হবে।

২) সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

৩) টিল্ট ২৫০ ইসি ১ মিলি আড়াই লিটার জলে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

গমের পাতার দাগ রোগ:

বাইপোলারিস সরোকিনিয়ানা নামক ছত্রাক এ রোগ ঘটায়। গাছ মাটির উপর আসলে প্রথমে নীচের পাতাতে ছোটছোট বাদামী ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে দাগসমূহ বাড়তে থাকে এবং গমের পাতা ঝলসে দেয়। রোগের জীবাণু বীজে কিংবা ফসলের পরিত্যাক্ত অংশে বেঁচে থাকে। বাতাসের অধিক আর্দ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা ( ২৫ ডিগ্রী সে. ) এ রোগ বিস্তারের জন্য সহায়ক।

প্রতিকার:                                   

১। রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

২। গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

৩।প্রতি কেজি গম বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

৪। টিল্ট ২৫০ ইসি  ১ মিলি  প্রতি আড়াই লিটার জলে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ (Harvest)

গম পেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করলে চৈত্র মাসের প্রথম থেকে মধ্য চৈত্র (মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম) পর্যন্ত কেটে গম সংগ্রহ করতে হয়। উপযুক্ত যত্ন  নিলে  একর প্রতি ১৫০০ থেকে ২০০০ কেজি পর্যন্ত গমের ফলন পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: Gladiolus Flower Farming: জেনে নিন আকর্ষণীয় গ্ল্যাডিওলাস ফুলের চাষ পদ্ধতি

English Summary: Easiest way of Wheat Farming
Published on: 07 August 2021, 12:49 IST