গ্রাম বাংলার একটি জনপ্রিয় ফল চালতা। আচার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এই ফল বাজারেও প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। শহর ও গ্রামাঞ্চলে চালতার বিভিন্ন রকম আচার আমরা খেয়ে থাকি। চালতা যখন কচি থাকে তখন তা সবজি হিসাবে রান্না করা হয়। উপমহাদেশে যে সব ফলের উৎপত্তি হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম এই চালতা।
চালতা চাষের উপযুক্ত জলবায়ু (Climate)
আর্দ্র ও উর্বর জমিতে চালতার চাষ ভালো হয়। চালতা চাষের জমির মাটি কিছুটা অম্ল হয় ভালো। চালতার গাছ কষ্টসহিষ্ণু হওয়ায় এর তেমন পরিচর্যা লাগে না।
চালতার পুষ্টিগুণ(Nutrition)
১০০ গ্রাম চালতায় থাকে-
আমিষ ০.৮ গ্রাম
শ্বেতসার ১৩.৪ গ্রাম
চর্বি ০.২ গ্রাম
খনিজ ০.৮ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম
শক্তি ৫৯ কিলোক্যালোরি
চালতার গুণাগুণ (Health Benefit)
কচি চালতা যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে, তাদের খাওয়া উচিত। এছাড়াও কফ দূর করতে, এবং বাতের ওষুধ হিসাবেও চালতা খুব ভালো ওষুধ। পিত্তনাশক হিসাবেও চালতা খাওয়া যেতে পারে। পাকা চালতার রস চিনি দিয়ে খেলে সর্দিকাশি অনেকাংশে দূর হয়।
রোপনের উপযুক্ত সময়(Planting Time)
চালতার চারা রোপনের সময় মে থেকে অগাস্ট মাসের ভেতর।
চালতার বংশবিস্তার
বীজ থেকে সাধারণত চালতার বংশবিস্তার ঘটে। পাকা চালতা থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা বা পলিব্যাগে বীজ রোপন করতে হবে। চালতার বংশবিস্তার গুটিকলমের মাধ্যমেও হয়। ১০-১২ মাস বয়সী ডাল সংগ্রহ করে জুলাই থেকে অগাস্ট মাস নাগাদ গুটিকলম তৈরী করতে হবে। শিকড় গজাতে ১-১.৫ মাস সময় লাগে। গুটি কলম ১০-১১ মাসের মধ্যে রোপনের উপযুক্ত হয়ে পড়ে।
রোপন পদ্ধতি(Planting):
সাধারণত চালতার চারা বর্গাকার পদ্ধতিতে সমতলে লাগানো হয়ে থাকে। অসমতল জমিতে কন্টুর পদ্ধতি মেনে চালতার চারা রোপন করতে হয়।
মাদা তৈরি
৭মি x ৭ মি করে প্রতি গাছে দূরত্ব রাখতে হবে। ১মি x ১ মি x ১ মি আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে। চারা পোঁতার ২০ দিন আগে ১৫-২০ কেজি জৈব সার, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০ গ্রাম এমওপি-র ভালভাবে মিশ্রণ তৈরী করে গর্ত ভরাট করতে হবে। জল দিয়ে তারপর তা ভিজিয়ে দিতে হবে।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
চারা পোঁতার আগে যে সার দেওয়া হয়, তাই সার হিসাবে যথেষ্ট। কিন্তু গাছ পূর্ণবয়স্ক হয়ে গেলে, তাতে গোবর সার, টিএসপি, এমওপি, ইউরিয়া প্রভৃতি সার দেওয়া যেতে পারে। নিচে সারের পরিমাণ উল্লেখ করা হল:
গোবর সার ১৫-২০ কেজি
ইউরিয়া ১ কেজি
টিএসপি ৫০০ গ্রাম
এমওপি ৫০০ গ্রাম
সমান ভাবে এই সার গুলি দুই ভাবে ভাগ করে বর্ষাকাল শুরু আগে ও শেষে প্রয়োগ করা উচিত। সার শুধু প্রয়োগ করলেই হবে না। তার সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমানে জল সেচও দিয়ে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: Brand New ‘TAFE’ MF 7235 DI Tractor: ভারতে এল TAFE কোম্পানির নতুন ট্রাক্টর
আগাছা পরিষ্কার (Weed control):
গাছের পরিচর্যা হিসাবে গাছের চারিদিকে আগাসহ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। খরা মৌসুমে জন্মানো আগাছা ভীষণই ক্ষতিকর গাছের পক্ষে। গাছের চারপাশের আগাছা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। হাত দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করলেও বেশ ভালো।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন (Pest and Disease management):
চালতা গাছে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এই পোকা চালতা গাছের কচি পাতা খেয়ে নেয়। এই পোকার আক্রমণ দেখা দিলে, জলের সাথে ২ মিলিলিটার সুমিথিয়ন মিশিয়ে, ১০-১৫ দিন বাদে বাদে গাছে স্প্রে করে দেওয়া উচিত।
ফল সংগ্রহ (Harvest):
চালতার রং হালকা হলুদ বা ফ্যাকাশে সবুজ বর্ণ নিলে বুঝতে হবে ফল পেকে গেছে। ঠিক এই অবস্থাতেই চালতা গাছ থেকে পেড়ে নেওয়া উচিত। অগাস্ট-অক্টবর মাস নাগাদ চালতা পাকে। ভাল মানের চালতা পাড়ার পর রোদে কিছুক্ষণ ছড়িয়ে রেখে পরে শুষ্ক ও ঠান্ডা স্থানে তা সংরক্ষণ করা উচিত।
পূর্ণ বয়স্ক চালতা গাছ থেকে কম করে ৩০০ টির বেশি ফল পাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: Profitable Mushroom Farming - দারিদ্র দূরীকরণে দিশা দেখাচ্ছে মাশরুম, চাষে আয়ের সম্ভবনা প্রচুর