পরম্পরাগত কৃষির তুলনায় গ্ল্যাডিয়লাস ফুলের চাষ (Gladiolus flower) করে কৃষক সাধারণত অনেক বেশি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। গ্ল্যাডিয়লাস ফুলের ব্যবহার সবথেকে বেশী হয়ে থাকে অনুষ্ঠানে সাজসজ্জার জন্য। এই ফুলের চাষ যেহেতু অত্যন্ত লাভজনক সেই কারণে খোলা জমিতে এর চাষবাসকে কৃষকরা অনেক বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে, এর ফলে কৃষকদের চাষের খরচ কম ও লাভ অনেক বেশী হচ্ছে।
এই ফুলের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক (Cultivation Method) -
খোলা ক্ষেতে হওয়া গ্ল্যাডিয়লাস ফুলের চাষ খুব ভালো হয়, তাই এই ধরণের ফুলের চাহিদা অনেক বেশি, ফলে কৃষকেরা খোলা মাঠে ফুলের চাষ করে বেশি পয়সা উপার্জন করছে। সবজি উৎকৃষ্টতা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক ডঃ পাওয়ার বলেছেন আমাদের দেশে বিভিন্ন উৎসব ও ঘরোয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাজসজ্জার জন্য বর্তমানে গ্ল্যাডিয়োলস ফুলের ব্যবহার সবথেকে বেশী হচ্ছে, তাই বছরভর বাজারে এর চাহিদা থাকে সবসময়ই প্রায় ঊর্দ্ধমুখী। আর বিয়েশাদির মরশুমে তো এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাই কৃষকরা স্বাভাবিকভাবেই এই ফুল উৎপাদন করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।
আগষ্ট সেপ্টেম্বরে শুরু হয় এই ফুলের চাষ -
ছয়মাসের সাধারণ প্রথাগত ও পরম্পরাগত চাষে যেখানে কৃষক মাত্র কয়েক হাজার টাকা মাত্র উপার্জন করে সেখানে আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এই গ্ল্যাডিয়োরস ফুলের চাষ করে ওই কৃষকই তিন মাস পর কয়েক লক্ষ টাকা উপার্জন করে থাকে। এই কথা বলে রাখা ভালো যে, প্রথম বৎসর এই ফুল চাষের জন্য বীজের খরচ তো করতেই হবে, তবে দ্বিতীয় বৎসর থেকে এর বীজের জন্য আর কোনো টাকা খরচ করার প্রয়োজনীতা নেই। প্রতি একর জমিতে এই ফুলের ৬০ থেকে ৮০ হাজার বীজ লাগানো যেতে পারে। গ্ল্যাডিয়োলস এর একেকটি ফুলের দাম চড়ে প্রায় ৫ টাকা পর্যন্ত। সাদা গ্ল্যাডিয়োলসে পোস্পেরিটী, হোয়াইট স্টার, ও ট্রেডিয়াম থাকে, যেখানে লাল গ্ল্যাডিয়োলসে ইয়ুরোভিশন, রেড বিউটি, রেড কিং ইত্যাদি রয়েছে, এছাড়া গোলাপী ফুলের মধ্যে বিখ্যাত রোজ সুপ্রিম, কমলা রঙের মধ্যে রয়েছে পীটস পর্স, হলুদের মধ্যে রয়েছে নোবা লাক্স ইত্যাদি।
সার প্রয়োগ -
সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হয়। শেষ চাষ দেয়ার সময় প্রতি বর্গমিটারে ৫-৬ কেজি গোবর সার, ৬০ গ্রাম এসএসপি এবং ৩০ গ্রাম এমওপি সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। গ্লাডিওলাসে বেশি ইউরিয়া সার দেয়া উচিত নয়। কারণ এতে পুষ্পদন্ড বেশি লম্বা ও দূর্বল হয়ে যায়। প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম ইউরিয়া এর অর্ধেক রোপণের ২০-২৫ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক পুষ্পদন্ড বের হওয়ার সময় উপরিপ্রয়োগ করা উচিত।
সেচ (Irrigation) -
ভাল ফুল পাবার জন্য মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকতে হবে। কর্ম মাটিতে লাগানোর পর জমিতে হালকা সেচ দিতে হবে, যাতে কর্মগুলি মাটিতে লেগে যেতে পারে। পরবর্তীতে আবহাওয়ার অবস্থা বুঝে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। সেচের পরিমাণ কম থাকলে গাছের বৃদ্ধি কমে যাবে। জমিতে পানির পরিমাণ বেশি হলে কর্ম পচে যেতে পারে।
আগাছা দমন –
গ্লাডিওলাস ফুলের উৎপাদনে নিয়মিতভাবে গভীর শিকড় যুক্ত আগাছা দমন খুবই জরুরী। আগাছানাশক হিসাবে অনুমোদিত আগাছানাশক ১.৮ কেজি/একর স্প্রে করতে হবে। আগাছানাশক ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কর্ম ও কর্মেল ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
সবজি উৎকৃষ্টতা কেন্দ্র স্থাপন হওয়ার পর থেকে কৃষকরা সংরক্ষিত ও প্রথাগত চাষবাসে কিছুটা বদল ঘটিয়েছে। সবজি চাষের পরবর্তি চাষ হিসাবে কেন্দ্র থেকে ফুলের চাষে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই স্থানে কৃষকরা নিজেদের জমি অথবা পলিহাউস বানিয়ে এই লাভজনক ফুলের চাষ শুরু করেছে।