বাণিজ্যিক হোক অথবা খাবারের পাতে সব দিকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাবার ডাল ও ছোলা। এ ছাড়া ডাল জাতীয় শস্য প্রোটিনের প্রধান উৎস। যারা আমিষ জাতীয় খাবার খান না তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী। একজন মানুষকে প্রতিদিন পরিপূর্ণ পুষ্টি দিতে হলে ডালের প্রয়োজন।
তাই ডাল উৎপাদনে অনেক জোর দেওয়া হচ্ছে, কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাল উৎপাদন না হলে আমাদের দেশে ডাল আমদানি করতে হবে, বেশি বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে। শুধু আমদানি রপ্তানি নয় ডাল চাষেও চাষিদের প্রচুর লাভ রয়েছে। কারণ ভারতের আবহাওয়া ডাল চাষের জন্য উপযোগী। পাশাপাশি ডাল চাষের জন্য জল কম পরিমাণে খরচ হয় তাই যে সমস্ত জায়গায় পর্যাপ্ত সেচের অভাব রয়েছে সেখানে ডাল চাষ করা যেতে পারে। তাছাড়াও ডাল চাষের পর মাটির স্বাস্থ্য খুব ভালো হয়।
তবে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ভালো দাম না পাওয়ায় কৃষকরা ডাল চাষ করছিলেন না। ডাল ফসলের জমিও কমছিল। লাভের অভাবে চাষিরা ডাল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও সরকারের প্রচেষ্টায় এখন এই চাষ করার জন্য প্রচার হচ্ছে। শস্য সুরক্ষা প্রচার করা হচ্ছে। দেশের কৃষিবিদদের প্রচেষ্টায় স্বল্প মেয়াদী ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ ছাড়া এখন ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। এতে সরকারের প্রচেষ্টায় আবারও ডালের আবাদের পরিমাণ বেড়েছে। এতে উৎপাদন ১৫ কোটি টন থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫ কোটি টনে।
ডালে থাকে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন। তাই এতে পোকামাকড় ও রোগের প্রভাব বেশি থাকে। লেবুজাতীয় ফসলে রোগের কারণে 20 শতাংশ ক্ষতি হয় এবং কীটপতঙ্গের কারণে উৎপাদন 25 শতাংশ হ্রাস পায়। পাশাপাশি পড বোরর নামক পোকার প্রভাবে ডাল ফসলের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়।
আরও পড়ুনঃ ফ্রি লেপটপ এবং স্মার্টফোন দেবে রাজ্য সরকার ,জেনে নিন বিস্তারিত
ডাল বা ছোলায় সাধারণত তিন প্রকার সমস্যা দেখা যায়। সেগুলি হল কাইট প্রারম্ভিক ব্লাইট, শিকড় পচা এবং ফুসকুড়ি। প্রারম্ভিক ব্লাইটে ছোলা পাতায় একটি বাদামী দাগ থাকে, তারপরে পাতা শুকিয়ে যায়, তারপর পুরো গাছটি শুকিয়ে যায়। দ্বিতীয় রোগ হল শিকড় পচা, যাতে গাছ শুকিয়ে যায়। ছোলা উঠলে তৃতীয় যে রোগটি হয়, তাকে উইল্টও বলা হয়। এই রোগ শুরু হওয়ার পর ওষুধ দিয়ে তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এই কারণে কখনও কখনও 100% ক্ষতি হয়।
তবে সমস্যা থাকলে তার সমাধান থাকবে এটিই চিরসত্য। ডাল চাষের ক্ষেত্রে যদি চাষিরা উপরিক্ত সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে এই পন্থা গুলি অবলম্বন করুন।
১. জিনেব ও ম্যাকোজেব ছত্রাকনাশক হেক্টর প্রতি দুই কেজি দ্রবণ ৫০০-৬০০ জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
২. শিকড় পচা রোগ প্রতিরোধে বীজ শোধন ও মাটি শোধন করতে হবে। বীজ শোধনের জন্য দুই ভাগ থিরাম ও এক ভাগ কার্বেন্ডাজিম মিশিয়ে এক কেজি বীজ শোধন করা যায়।
৩. ভালো ফলনের ক্ষেত্রে মাটির শোধনও জরুরি। মাটি বিশুদ্ধ করার জন্য ট্রাইকোডমা পাউডার প্রতি হেক্টর জমিতে 60 থেকে 70 কেজি গোবরের সঙ্গে জলে মিশিয়ে শুকানোর পর বীজ বপনের সময় জমিতে ব্যবহার করুন।
এই সমস্ত পন্থা গুলি অবলম্বন করলে চাষিরা ফসলের ক্ষতির মুখ থেকে কিছুটা লাভবান হবেন। পাশাপাশি ডাল চাষের প্রবণতাও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।