দেশের জলবায়ু-আবহাওয়ার সাথে কৃষিকাজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর আবহাওয়া বিষয়ে আমাদের সর্বদাই পূর্বাভাস দেয় ইন্ডিয়া মেটিরিওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (IMD)৷ তাই বর্ষাকালে কৃষিকাজের ক্ষেত্রে সময় থাকতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে যা চাষিভাইদের বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে পারে৷
আইএমডি-র পূর্বাভাস অনুযায়ী সবকিছু না হলেও কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা যেতেই পারে৷ সেগুলি কী কী চলুন দেখে নেওয়া যাক৷
শস্য নির্বাচন (Crop Selection)-
শুষ্ক অঞ্চলের চাষাবাদের ক্ষেত্রে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ যেমন, কম সময়ের মধ্যে কোন শস্য চাষ করে ফেলা সম্ভব, আবার বর্ষাকালে ওই অঞ্চলে কোন শস্য চাষ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম৷ এই বিষয়টি মাথায় রাখলে বর্ষাকাল খামখেয়ালি আচরণ করলেও ক্ষতির পরিমাণ কমে৷ কিছুক্ষেত্রে লাভের মুখও দেখতে পারেন চাষিভাইরা৷ মিলেট, ডালের উৎপাদন এ সময়ের জন্য উপযুক্ত হতে পারে৷
ইন্টিগ্রেডেড ফার্মিং সিস্টেম (Integrated farming system)-
ইন্টিগ্রেডেড ফার্মিং সিস্টেমও করা যেতে পারে৷ কৃষিকাজের পাশাপাশি, উদ্যানপালন (horticulture) এবং পশুপালনও (animal husbandry) এসময় করতে পারেন কৃষকেরা এবং পশুখাদ্যের জন্য যেমন নিজের ফার্মের ফসল ব্যবহার করতে পারেন, তেমনই চাষের জমিতে সারের জন্য রাসায়নিকের পরিবর্তে গৃহপালিত পশুর বর্জ্য, জৈব সার ব্যবহার করতে৷
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং কৃষিকাজে ব্যবহার (Rainwater Harvesting Projects)-
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে তা প্রয়োজনের সময় কৃষিকাজে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ পদ্ধতিটি কষ্টসাধ্য হলেও অসম্ভব বলা যায় না৷ এতে অসময়ে অনেক সময় কৃষকদের সেচের কাজে সুবিধা হতে পারেষ বিশেষ করে শুষ্ক অঞ্চলের জন্য এটি লাভজনকও হতে পারে৷ তাই বর্ষাকালে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের চেষ্টা করা যেতে পারে৷
শস্যের আবর্তন (Crop Rotation) -
একই জমিকে চাষের জন্য একাধিক বা ততোধিকবার (Alternate land use) ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এবং সেই অনুযায়ী শস্য নির্বাচন করে চাষ করা যেতে পারে৷ এতে কম সময়ের মধ্যে কম বিনিয়োগে যেমন বিভিন্ন ধরণের ফসল পাওয়া যেতে পারে, তেমনই অনেকক্ষেত্রে মাটির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায় এই পদ্ধতিতে চাষ করার ফলে৷
সঠিক পরিকল্পনা –
রুক্ষ জমিতে প্রথমিকভাবে কৃষক খরা প্রতিরোধী দেশীয় জাতগুলি লাগাতে পারেন যাতে কম জল লাগে। সাথে জমির একটা অংশে ছোট ছোট পুকুর বানিয়ে রাখলে বৃষ্টির জল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যায়। পুকুরের জল বেড়ে গেলে সেখানে রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি কাটাপোনা মাছ চাষ করা যাবে। পুকুরের জল চাষের কাজে ব্যবহার করা যাবে।
অ্যাজোলা চাষ –
এই সমস্ত ছোট পুকুরে অ্যাজোলা চাষ করা যেতে পারে যা গরু, পোলট্রি এমনকি মাছেরও উৎকৃষ্ট পুষ্টিকর আহার যা গরুর দুধ উৎপাদন ও পোলট্রির ডিম উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যাজোলা পুকুরের জলের বাস্পীভবন কমিয়ে জলকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
রুক্ষ এলাকায় অপর্যাপ্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাত ও হঠাৎ মুশলধারে বৃষ্টিপাতে হড়কা বাণে ভূমিক্ষয় হয় আর এর দরুণ প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। তাই রুক্ষ জমির জলধারণ ক্ষমতা বাড়াতে, টপ সয়েল বা মাটির উপরিভাগকে সুরক্ষিত করার কিছু পদ্ধতি উপরিউক্ত অংশে বর্ণনা করা হল, যাতে কৃষকরা খরা ভূমিতে চাষ করেও লাভের মুখ দেখতে পারেন। এছাড়া অতিরিক্ত লাভের জন্য বর্ষাকালে চাষের (Monsoon Cultivation) আগে মাটির অবস্থা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাপনাও (Soil Management) গ্রহণ করতে হবে৷
আরও পড়ুন - Wetland Farming: জলাভূমিতে কৃষিকাজ ও তার গুরুত্ব