কৃষিভিত্তিক এই ভারতে দিন দিন বাড়ছে জনসংখ্যা ।সেই সাথে বাড়ছে খাদ্য়ের চাহিদা।কিন্তু বাড়ছে না কৃষি জমির সংখ্য়া,উল্টে কমছে চাষের জমি। কৃষি জমিতেও গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি,শিল্পকারখানা,দালানকোঠা।
তাই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে আমাদের দেশের কৃষকেরা উদ্ভাবন করেছেন একটি বিশেষ ভাসমান কৃষি পদ্ধতি।মাটি ছাড়া জলের উপর কচুরীপানা,টোপাপানা ,দুলালী লতা , শ্যাওলা সহ আরও নানান জলজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরী বেডের উপর এই ভাসমান চাষ পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক ভাবে বলা হয় হাইড্রোপনিক পদ্ধতি।
যেভাবে প্রস্তুত করা হয়
কচুরীপানা,টোপাপানা ,দুলালী লতা , কলমিলতা ,শ্যাওলা সহ নানান জলজ উদ্ভিদ স্তরে স্তরে সাজিয়ে দুই থেকে তিন ফুট পুরু করে বাঁশ ও দড়ি দিয়ে বেঁধে ধাপ ও ভাসমান বীজতলা তৈরী করা হয়।
আরও পড়ুনঃ Floating Agricultural System: বর্ষায় ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের অভিনব কৌশল
ধাপ পদ্ধতিতে ফসল চাষের সময়কাল
যেসব এলাকা সারা বছর বা বছরের কিছু সময়ে জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকে এবং সেসব জলাবদ্ধ স্থানে যদি কচুরীপানা থাকে, তবে শুধুমাত্র সেই কচুরীপানা ব্যবহার করে সারা বছর ধাপ তৈরি করে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন বা সারা বছর উৎপাদিত হয় এমন সব্জির চারা উৎপাদন করা যায়। সাধারণত মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে পার্শ্ববর্তী নদী, খাল অথবা জলাভুমি থেকে এই কচুরীপানা সংগ্রহ করা হয়। যেসব এলাকায় সারা বছর জলাবদ্ধ থাকে না বা জল থাকে না সেসব এলাকায় স্বাভাবিক নিয়মে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভাসমান ধাপে মৌসুমি সব্জি চাষ করা যায়।
ভাসমান পদ্ধতিতে ফসল চাষের সুবিধা
১. চাষের খরচ অনেক কম হয় |
২. সেচের প্রয়োজন হয়না |
৩. অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ফসলের কোনো ক্ষতি হয়না |
৪. স্থায়ী জলাবদ্ধ এলাকায় (খাল, হ্রদ ) সারা বছর এ পদ্ধতিতে সব্জি ও মশলা চাষ করা যায়।
৫. নিচু ও পতিত জলমগ্ন অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় এনে, কর্মসংস্থান হয় |
৬. সারের পরিমানও খুব কম ব্যবহৃত হয় |
আরও পড়ুনঃ ছোলা ফসলে বেণি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, বাঁচাতে এসব ওষুধ স্প্রে করুন
ভাসমান চাষ পদ্ধতির আয়-ব্যায়
সাধারণত ৫০-৬০ মিটারের একটি ভাসমান ধাপ তৈরীতে খরচ হয় ৩-৫ হাজার টাকা।সেই ধাপ থেকে চারা বিক্রি করা যায় ২৫০০-৩০০০ টাকার।১০০ ফুট লম্বা একটি ধাপ তৈরী করতে এবং চারা উৎপাদনে ৫ মাসে ব্যায় হয় ১৫ হাজার টাকা । প্রথমবার ব্যবহৃত ধাপ বিক্রি করা যায় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়। সব মিলিয়ে কৃষক চাইলে ভাসমান চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে বছরে একর প্রতি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারেন।