আমরা ধারাবাহিকভাবে তথ্য পাচ্ছি যে রবি ফসলের বা খরিফ ফসলের এমএসপি (MSP) বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে এই রবি শস্য, খারিফ শস্য এবং জায়েদ শস্য কী কী তা আপনি জানেন?
শস্য অর্থাৎ উদ্ভিজ্জ ফসল যা ক্ষেতে কৃষকরা রোপণ করেন এবং সময় বিশেষে উত্থিত করেন। কৃষিক্ষেত্র হ'ল প্রাথমিক ক্রিয়াকলাপ, যা মানুষের খাদ্য এবং কাঁচামাল সরবরাহ করার জন্য খাদ্যশস্য উত্পাদন করে। ভারতীয় জনসংখ্যার ৭০% এরও বেশি মানুষ খাদ্য ও অর্থের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। ফসলের চাষ মূলত আবহাওয়া এবং মাটির অবস্থার উপর নির্ভর করে।
শস্যের প্রকার (Type Of Crops) -
খরিফ শস্য (Kharif Season Crop) -
খরিফ ফসল, বর্ষা ফসল বা শরতের ফসলের বর্ষা মৌসুমে চাষ ও পরিপক্ক হলে ফসল উত্তোলিত হয়। কৃষক বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বীজ বপন করেন এবং মৌসুমের শেষে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে তা সংগ্রহ করেন। খরিফ ফসলের যথাযথ বিকাশের জন্য প্রচুর জল এবং শুষ্ক আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়।
উদাহরণ: ধান, ভুট্টা, মিলেট, সয়াবিন, অড়হর, তুলা ইত্যাদি।
চীনের পরে বিশ্বের ধান উৎপাদনে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ভারত বিশ্বের চাল উত্পাদনের প্রায় ২০% উত্পাদন করে। ধান প্রধানত উচ্চ বৃষ্টিপাতের অঞ্চলে জন্মায়। এটির জন্য গড় তাপমাত্রা প্রয়োজন হয় ২৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এবং সর্বনিম্ন ১০০ সেমি বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। জলাবদ্ধ ধানের জমিতে এটি উত্পাদিত হয়। উত্তর-পূর্ব সমভূমি এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলি দেশের প্রধান প্রধান ধান উত্পাদনকারী অঞ্চল।
রবি শস্য:
রবি শব্দের অর্থ আরবি-তে বসন্ত। শীতের মৌসুমে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই শস্য জন্মায় এবং বসন্তের মৌসুমে (এপ্রিল-মে) উত্তোলিত করা হয়, এই ফসলগুলিকে রবি ফসল বলা হয়। এই ফসলের বীজ অঙ্কুরোদ্গম এবং পরিপক্কতার জন্য একটি উষ্ণ আবহাওয়া প্রয়োজন এবং তাদের বিকাশের জন্য একটি শীতল পরিবেশ প্রয়োজন। শীতে বৃষ্টিপাত রবি ফসলের ক্ষতি করে তবে তা খরিফ ফসলের জন্য ভাল।
উদাহরণ: গম, ছোলা, বার্লি, মটর, ওটস, মটরশুঁটি, তিসি, সরিষা ইত্যাদি।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক। কৃষি আয় এই রবি ফসলের উপর নির্ভরশীল। গম মূলত উত্তর অঞ্চলে ভারতীয়দের মধ্যে প্রধান খাদ্য।
বর্ধমান মৌসুমে গমের জন্য শীতল তাপমাত্রা প্রয়োজন ১৪ ডিগ্রী - ১৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মধ্যে। বৃষ্টিপাতের প্রয়োজনীয়তা ৫০ সেমি থেকে ৯০ সেমি। তবে, ফসল সংগ্রহের জন্য উজ্জ্বল রৌদ্র এবং সামান্য উষ্ণ আবহাওয়া প্রয়োজন। উত্তরপ্রদেশ হ'ল হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের পরে ভারতের বৃহত্তম গম চাষকারী রাজ্য।
জায়েদ ফসল:
জায়েদ ফসলগুলি খরিফ ও রবি মৌসুমের মধ্যে অর্থাৎ মার্চ থেকে জুনের মধ্যে জন্মায়। এই ফসলের বৃদ্ধির জন্য শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন। জায়েদ ফসল কৃষকদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি কৃষকদের দ্রুত নগদ অর্থ প্রদান করে এবং দুটি প্রধান ফসল খরিফ ও রবির মধ্যবর্তী সময় পূরক হিসাবেও পরিচিত।
উদাহরণ: শসা, কুমড়ো, উচ্ছে, তরমুজ, কস্তুরী, ইক্ষু, চিনাবাদাম, ডাল ইত্যাদি।
সাধারণ পরিভাষায়, আমরা ফসলগুলিকে দুটি বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করি: খাদ্য ফসল এবং নগদ শস্য।
খাদ্য শস্য –
খাদ্য শস্য হ'ল ফসল যা মানুষের জনগণের খাদ্যের জন্য উত্থিত হয়।
অর্থকরী ফসল -
বিক্রয় থেকে লাভ উপার্জনের জন্য নগদ ফসল চাষ করা হয়। এখনকার বেশিরভাগ ফসল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসায়ের জন্য উত্পন্ন নগদ ফসল।
শস্য আবর্তন -
শস্য আবর্তন হ'ল একই জমিতে বিভিন্ন ফসল ফলানোর অভ্যাস।
যেমন, এক বছরের আবর্তন শস্যের ভুট্টা-সরিষা, গম-ধান। এটি মাটির উর্বরতায় সহায়তা করে, রাসায়নিক সারের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে, কীট এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ করে। একই মাটির প্রস্তুতিতে একের পর এক বেশ কয়েকটি ফসল ফলানো যেতে পারে।
আরও পড়ুন - বর্তমান যুগের লাভজনক চাষ কীভাবে করবেন?
বীজ বপনের সময় এবং চাষাবাদ অঞ্চল বিশেষে পরিবর্তিত হতে পারে, ওই অঞ্চলের আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, বর্ষা জুনের শুরুতে কেরালায় পৌঁছায়, তার সাধারণত ১০ দিন পরে মুম্বইয়ে প্রবেশ করে এবং এরপর ধীরে ধীরে তা জুনের শেষে ও জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানী দিল্লি সহ, পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতে বাকি অংশে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন - শস্য আবর্তন কেন আবশ্যক? এর মাধ্যমে কৃষকরা কতটা লাভবান হবেন, জানুন বিস্তারিত