Weather Update: ঝেঁপে নামবে বৃষ্টি! শনিবার থেকেই আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তনের পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের “ট্র্যাক্টর কে খিলাড়ি” কৃষকদের 51 হাজার টাকা পর্যন্ত পুরস্কার “মিলিওনেয়ার ফার্মার অফ ইন্ডিয়া অ্যাওয়ার্ডস 2024” এবার জুরির সভাপতিত্বে নীতি আয়োগের সদস্য অধ্যাপক রমেশ চাঁদ
Updated on: 5 June, 2021 1:36 AM IST
Fruit management (Image Credit - Google)

সাইট্রাস ফসলের মধ্যে মালটা একটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। মালটা সাইট্রাস পরিবারভুক্ত একটি বিদেশি ফল। মালটা ফলটি জাম্বুরা (Citrus maxima) এবং কমলা (Citrus reticulata) এই দুই ফলের শংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর ইংরেজি নাম 'সুইট অরেঞ্জ' (Sweet orange), হিন্দিতে 'সান্তারা' এবং অসমীয়া ভাষায় একে 'সুমথিৰা টেঙা' বলা হয়।

জনপ্রিয় এই ফলটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা হয়তো অনেকেই জানি না। মালটাতে আছে, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, এবং চর্বিমুক্ত ক্যালরি। এগুলো ছাড়াও মালটাতে আর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, এর প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে (আহারোপযোগী) ২০০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন এবং প্রায় ৫০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে। অন্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে শর্করা, আমিষ, চর্বি, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২ এবং খাদ্যশক্তি রয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিগ্রাম, ১ মিলিগ্রাম, ০.২ মিলিগ্রাম, ৪০ মিলিগ্রাম, ০.৮ মিলিগ্রাম, ০.১১৩ মিলিগ্রাম, ০.০৪৬ মিলিগ্রাম এবং ২০০ কিলোক্যালরি। 

মালটা ফলের পুষ্টিগুণ (Health benefits) -

এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এর উৎস। এটি ত্বকে সজীবতা বজায় রাখে এবং ত্বকের বলি রেখা প্রতিরোধ করে লাবণ্য ধরে রাখে।

মালটা ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি প্রদাহ জনিত রোগ সারিয়ে তোলে।

এক গ্লাস মালটার জুসকে ভিটামিন সি এর সবচেয়ে কার্যকর উৎস বলে মনে করা হয়। এটাকে ভিটামিন সি ট্যাবলেট হিসেবেও গ্রহণ করা যায়।

মালটার ভিটামিন সি উপাদান আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরের কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের অন্যতম সেল প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

মালটা পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত কমলা খাওয়ার অভ্যাস পাকস্থলীর আলসার ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সুরক্ষা দেবে। পাকস্থলীকে রাখবে সবল।

উচ্চ মাত্রায় ওষুধ সেবনের সময় মালটার লো-কলেস্টরেল শরীরে ওষুধের পার্শ প্রতিক্রিয়া হতে করে।

বিশ্বের সর্বমোট উৎপাদিত সাইট্রাস ফসলের দুই তৃতীয়াংশ হলো মালটা। ভিয়েতনাম, উত্তর পশ্চিম ভারত ও দক্ষিণ চীন মালটার আদি উৎপত্তি স্থল। তবে বর্তমানে এই ফলটি বিশ্বের উষ্ণ ও অব–উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় বেশী চাষ করা হচ্ছে। উন্নত জাত ও আধুনিক চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে এর উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা আগেই তথ্য প্রদান করেছি। আজ আমরা এই ফসলের পরিচর্যা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করব কৃষক বন্ধুদের কাছে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই ফসলের পরিচর্যা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য (Crop Care) -

আগাছা পরিষ্কার (Weed management) -

আগাছা খাবারে ভাগ বসায়। ক্ষতিকর পোকার আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার হয়। তাই বাগান সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়া হতে একটু দূরে শুকনো লতাপাতা, খড়, কুটা বিছিয়ে মালচিংয়ের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। এতে আগাছা জন্মাবে না। মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

সেচ (Irrigation) -

ভালো ফলের জন্য শুষ্ক মৌসুমে বা খরার সময় নিয়মিত সেচ দেওয়া একান্ত দরকার। বর্ষার সময় গাছের গোড়ায় যেন জল না জমে, সে জন্য দ্রুত নিষ্কাশন ব্যাবস্থা করতে হবে।

ডাল-পালা ছাঁটাই (Cutting) -

মালটা গাছের জন্য ডালা ছাঁটাই অপরিহার্য। গাছ লাগানোর পরে ফল ধরার পূর্ব পর্যন্ত ধীরে ধীরে ডালা ছেঁটে গাছকে নিদিষ্ট আকার দিতে হবে, যাতে গাছ উচু না হয়ে চারদিকে ছড়াতে পারে। কারন পার্শ্ব ডালে ফল বেশী ধরে। কাণ্ডের এক মিটার উচ্চতার সকল ডালা ছাঁটাই করতে হবে। ডালা ছাঁটাইয়ের পরে কাঁটা অংশে বোর্দো পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে। এছাড়া জল তেউড় বা water sucker উৎপন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেটে ফেলতে হবে। মরা, শুকনা, রোগাক্রান্ত ডালা ছেঁটে ফেলতে হবে।

ফল পাতলাকরণ –

মালটা গাছে থোকা থোকা ফল ধরে .আর বারী মালটা ১ জাতের গাছে প্রতি বছর প্রচুর ফল আসে। সমস্ত ফল রাখা হলে ফল ছোট ও নিন্ম মানের হয়। এজন্য প্রতি পুস্প মঞ্জুরিতে সুস্থ্ ও সবল দেখে দুটি ফল রেখে, বাকীগুলো ছোট (মার্বেল আকৃতি) থাকা অবস্থায় ছাঁটাই করে দিতে হবে। কলমের গাছ প্রথম বা দ্বিতীয় বছর থেকে ফল দেওয়া শুরু করে। গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য প্রথম ২ বছর ফল না রাখাই ভালো। ফলের আকৃতি সবুজ হওয়ায় পাখি বা পোকার আক্রমণ কম হয়। তবে পরিপক্কতার পূর্বে ব্যাগিং করলে অবাঞ্ছিত পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ব্যাগিং -

ব্যাগিং করা মালটা চাষের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি । চীনে উৎপাদিত এ ব্যাগ এখন আমাদের দেশেও পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাগিং করলে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ হয় না। তাই ফল পরিপক্বতার আগেই ছত্রাকনাশক (টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলিলিটার/১ লিটার) প্রয়োগ করে ব্যাগিং করতে হবে। এর কিছু বাড়তি সুবিধাও আছে। যেমন - পাতার ঘর্ষণ থেকে ফলকে রক্ষা করে। তীব্র সূর্যকিরণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বিভিন্ন পাখি এবং বাদুড়ের উপদ্রব হয় না। ফল নিরাপদ হয়। পরিবেশ ভালো থাকে। বাজার মূল্য পাওয়া যায় বেশি। এ ব্যাগ দুই-তিন বছর ব্যবহার করা যায়। দেশীয় পদ্ধতিতে পলিথিন, কাপড় কিংবা বাটার পেপার দিয়ে ব্যাগিং করা যেতে পারে।

ফল সংগ্রহ-

ফলের পরিপক্কতার সাথে সাথে ফলের সবুজ বর্ণ, হালকা সবুজ বর্ণে বা ফ্যাকাশে সবুজ হতে থাকে। বারী মালটা- ১ সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে আহরন করা যায়। ফল সংগ্রহের পর নষ্ট বা আঘাত প্রাপ্ত ফল আলাদা করতে হবে। ভালো মানের ফলগুলি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ঠাণ্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।

মালটা ফসলে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় এবং রোগের আক্রমণ হতে পারে। পোকার মধ্যে সাইলিড সবচেয়ে ক্ষতিকর। এছাড়া রয়েছে পাতা সুড়ঙ্গকারি পোকা, ফল ছিদ্রকারি পোকা, খোসা পোকা, উঁই পোকা।

এই ফলের কিছু রোগ হলো আগামরা রোগ, গ্রিনিং, ক্যাংকার এবং আঠাঝড়া।

রোগ নিয়ন্ত্রণ (Disease management) -

১) আগামরা রোগ-

এ রোগ দেখা দিলে পুরো গাছ বা গাছের ডাল আগা থেকে শুরু করে ক্রমে নিচের দিকে মরে যায়। রোগটি ছত্রাকের আক্রমণে হয়। প্রতিকার হিসেবে কিছুটা সুস্থ অংশসহ আক্রান্তস্থান কেটে পুড়ে ফেলা এবং কর্তিত অংশে বোর্দোমিশ্রণ বা নোইন (ছত্রাকনাশক) ২ গ্রাম/লিটার অথবা কুপ্রাভিট ৭ গ্রাম/ লিটার হারে জলেতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

২) গ্রিনিং রোগ-

এ রোগে পাতার মধ্যশিরা হলদে হয়ে যায় এবং শেষ পর্যায়ে হলুদাভ রং ধারণ করে। শিরা উপশিরাগুলো ক্রমশ গাঢ় সবুজ হতে থাকে, শিরা দুর্বল ও পাতা কুঁকড়ে যায়। এটি ভাইরাসজনিত রোগ। সাইলিড পোকা এর বাহক। তাই পোকা দমন (ব্যবস্থাপনা পূর্বে দেওয়া আছে) করতে হবে। আক্রান্ত হলে অন্য গাছে রোগ যেন না ছড়ায় সেজন্য গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

কীট নিয়ন্ত্রণ (Pest management) -

সাইলিড পোকা-

পোকার বাচ্চা গাছের পাতা, পাতার বোঁটা, কচি ডগা এবং ফলের রস চুষে খায়। এতে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। রস চোষার সময় এরা গাছের রসের মধ্যে গ্রিনিং রোগের ভাইরাস ছড়ায়। সেই সাথে মিষ্টি আঠালো পদার্থ নির্গত করে। প্রতিকার হিসেবে পোকাসহ আক্রান্ত পাতা বা ডাল অপসারণ করতে হবে। মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে একবার ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক যেমন: অ্যাডমায়ার বা ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক যেমন: সুমিথিয়ন ২ মিলিলিটার/ লিটার পানিতে মিশিয়ে মালটা গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। তাহলে ডিম ও পোকা থাকলে তা ধ্বংস হবে এবং গ্রিনিং রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

পাতা সুড়ঙ্গকারি পোকা-

এ পোকা ছোট অবস্থায় (কীড়া) মালটাপাতায় আক্রমণ করে। এরা রাতের বেলা গাছের কচি পাতায় গর্ত খুঁড়ে আঁকাবাঁকা দাগের সৃষ্টি করে। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে যায়। প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলতে হয়। তামাক নির্যাস ও সাবান গোলা জল স্প্রে করা যেতে পারে। আক্রমণ বেশি হলে ইটাপ ৫০ এসপি ১.২০ গ্রাম হারে প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন -  Ruck tomato cultivation : জেনে নিন আধুনিক পদ্ধতিতে টমেটো চাষাবাদের কৌশল

মালটা নামক লেবু গোত্রীয় এই ফলের ব্যাপক চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতে প্রতি বছর মালটা আমদানির জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয় । তাই এই জাতটির চাষ সম্প্রসারিত হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করার পাশাপাশি ভিটামিন সি এর অভাব অনেকাংশে পূরণ হবে এবং কৃষক বন্ধুরা এই ফল বিক্রি করে লাভবান হবেন।

আরও পড়ুন - আসন্ন মরসুমে পেয়ারা চাষ করে কৃষকবন্ধুরা করতে পারেন দ্বিগুণ অর্থোপার্জন

English Summary: Know the crop care and easy management system of malta fruit
Published on: 25 May 2021, 08:56 IST

எங்களுக்கு ஆதரவளியுங்கள்!

প্রিয় অনুগ্রাহক, আমাদের পাঠক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো পাঠকরা আমাদের কৃষি সাংবাদিকতা অগ্রগমনের অনুপ্রেরণা। গ্রামীণ ভারতের প্রতিটি কোণে কৃষক এবং অন্যান্য সকলের কাছে মানসম্পন্ন কৃষি সংবাদ বিতরণের জন্যে আমাদের আপনার সমর্থন দরকার। আপনার প্রতিটি অবদান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান।

এখনই অবদান রাখুন (Contribute Now)