বাঁধাকপি বাঙ্গালীর একটি অতিপ্রিয় খাদ্য। কিছুদিন আগে পর্যন্ত কেবলমাত্র শীতকালে চাষ হতো বলে অনেকে অন্য মরশুমে খাওয়ার জন্য বাঁধাকপি কেটে শুকিয়ে ঘরে রাখতেন—এতটাই জনপ্রিয় সব্জী এই বাঁধাকপি। বাঁধা কপি (Cabbage) রবি মৌসুমের একটি প্রধান সবজি ফসল, এর বৈজ্ঞানিক নাম (Brassica oleraea var capitata)। ভারতের প্রায় সব অঞ্চলেই বাঁধাকপি চাষ হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকম খনিজ পদার্থের পাশাপাশি বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’ বর্তমান। হাইব্রীড বা সংকর জাতের বাঁধাকপি চাষের প্রচলন হওয়ার পর থেকে এখন প্রায় সারাবছরই টাটকা বাঁধাকপি পাওয়া যায়।
মাটি ও জলবায়ু
সব ধরণের মাটিতেই বাঁধাকপি চাষ করা যায়। সবথেকে বেশি ভালো হয় দো-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটি । অত্যধিক বেলে মাটি ছাড়া ও অধিক অম্লীয় বা লাল মাটিতে বাঁধাকপি ভালে জন্মায় না ।অম্লত্বের মান ৬.০-৮.০ বাঁধাকপি চাষের উপযোগী।সাধারণভাবে ২০-২৫ সেলসিয়াস উষ্ণতা বাঁধাকপি চাষের পক্ষে আদর্শ। তবে, অধিক উষ্ণতা সহনশীল জাতের বাঁধাকপি ৩৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও চাষ করা চলে।
চারা রোপণ
বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর চারা রোপণের উপযুক্ত হয়। উত্তমরূপে জমি তৈরি করার পর ১৫-২০ সেমি উঁচু ১ মিটার প্রশস্ত জমি তৈরি করতে হয়। পাশাপাশি ২টি জমির মাঝখানে ৩০ সেমি প্রশস্ত নালা রাখতে হবে। জমির উপর ৬০ সেমি দূরত্বে ২টি সারি করে সারিতে ৪৫ সেমি দূরে দূরে চারা লাগাতে হয়।বাধা কপির চারা প্রথমে বীজতলায় উৎপাদন করতে হয় এবং পরবর্তী সময়ে জমিতে লাগানো হয় । বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত।
পরিচর্যা
গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চারা রোপণের পর মাটি ঝুরঝুরে রাখতে হবে। এজন্যে পানি সেচ দেয়ার পর জমিতে জোঁ এলে কোদাল দ্বারা হালকা কোপ দিয়ে মাটির উপরের আস্তরণ ভেঙে দিতে হবে। প্রতি শতকে গোবর ১২৫ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ৮০০ গ্রাম, এমওপি ৬৫০ গ্রাম সার দিতে হবে। সার দেওয়ার পর পরই সেচ দিতে হবে। গাছ বড় হবার সাথে সাথে দুই সারির মাঝখান থেকে মাটি তুলে সারি বরাবর আইলের মতো করে দিতে হবে। ফলে দু’সারির মাঝে নালা তৈরি হবে। এতে সেচ দিতে বেশ সুবিধে হবে।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফল চাষের জন্য ৩৫ হাজার টাকা ভর্তুকি প্রদান করছে সরকার
বাঁধাকপির চাষে সেচ প্রদান
সার দেওয়ার পর পরই জমিতে সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া জমিতে জলের অভাব দেখা দিলে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সেচ দেওয়ার সুবিধার জন্য গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে দুই সারির মাঝখান নালা তৈরি করে দিতে হবে।
পোকা মাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনা
ডায়মন্ড ব্যাক মথের লাল বাঁধাকপির পক্ষে এক ক্ষতিকর পোকা হিসাবে বিবেচিত হয়। এই পোকা বাঁধাকপির পাতাকে খেয়ে নেয়, যার ফলে পাতা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। এই পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন উচ্ছে চাষের আধুনিক উপায়
ফসল সংগ্রহ
মুল জমিতে চারা রোপণের ৬০-৯০ দিনের মধ্যে বাঁধাকপি সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি বাঁধাকপি গড়ে ২.৫ কেজি ওজন হয়ে থাকে। হেক্টরে ৭৫-৮০ টন ফলন হয়ে থাকে।প্রভাতী জাতের বাঁধাকপির ১১০-১১০ টন/হেক্টর ফলন হয়ে থাকে।