উচ্ছে তেতো হ’লেও অতি পুষ্টিকর সবজি। স্বাদে তিক্ত হ’লেও এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। বাজারে অধিকাংশ সময় এটা উচ্চমূল্যে বিক্রি হয় ।উচ্ছে সারাবছর বাজারে পাওয়া যায়। উচ্ছে আকারে একটু ছোট হয়। করলার অনেক ঔষধি গুণ আছে । এর রস বহুমূত্র, চর্মরোগ, বাত এবং হাঁপানী রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহূত হয় । উচ্ছে - এ দেশের প্রায় সব জেলাতেই চাষ করা হয়। আগে শুধু গরম কালে বা খরিপ মৌসুমে উচ্ছে উতপাদিত হলেও এখন জাতের গুণে সারা বছরই চাষ করা যায়।
মাটি
সুনিষ্কাসিত জৈব পদার্থযুক্ত দোআশ ও বেলেদোআশ মাটি উচ্ছে চাষের জন্য ভাল। এগুলো ছায়া জায়গায় ভাল হয় না । জল জমেনা এ ধরনের প্রায় সব রকমের মাটিতেই উচ্ছের চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থযুক্ত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি উচ্ছে চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
জলবায়ু
ভারত এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া উচ্ছে চাষের জন্য উপযোগী । উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় উচ্ছে ভালো জন্মায় । উচ্ছে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু উপযোগী ফসল। এটি বৈরি পরিবেশ সহিষ্ণু উদ্ভিদ। মোটামুটি শুষ্ক আবহাওয়াতেও এর ফলন সম্ভব। উচ্ছে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না । আবার অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পরাগায়ন বিঘ্নিত হতে পারে।
বীজ বপন
বছরের যেকোন সময়ে উচ্ছে লাগানো যায়। তবে খরিপ মৌসুমে অর্থাৎ গ্রীষ্ম ও বর্ষা কালে এ সবজি ভাল হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বীজ বুনলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। বীজ বপন করার আগে মাটি ভালোভাবে জল দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে ১৫-২০ দিন বয়সের চারা পরেরদিন বিকালে রোপণ করতে হবে। চারা মাটির দলাসহ লাগাতে হবে। তারপর গর্তে জল দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃচালু হল দেশের প্রথম 'মোবাইল হানি প্রসেসিং ভ্যান'
পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ
করলার সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ফল ছিদ্রকারী পোকা। এই পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে মাঝে মাঝে করলা গাছে ভাল কীটনাশক স্প্রে করতে হবে । তাহলে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। চারা গজানোর পর মাদা শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হয়। সেচ দেবার পর মাদার মাটি শুকিয়ে চটা বেধে গেলে নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। গাছের গোড়া থেকে কিছু ডগা বের হয়, এগুলো ভেঙে দিলে ফলন বাড়ে। চারা রোপনের বা চারা গজানোর ১০ দিন পর ১ম কিস্তি, ৩৫ দিন পর ২য় কিস্তি, ৫৫ দিন পর ৩য় কিস্তি এবং ৭৫ দিন পর ৪র্থ কিস্তিতে ইউরিয়া ও এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি কিস্তিতে প্রতি মাদায় ইউরিয়া ১০ থেকে ১৫ গ্রাম এবং এমওপি ১০ থেকে ১৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ অসময়ে বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ ৫.৫০ লক্ষ একর ফসল,৬০০ কোটি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা
ফসল সংগ্রহ
চারা গজানোর ৪৫-৪৫ দিন পর উচ্ছের গাছ ফল দিতে থাকে। স্ত্রীফুলের পরাগায়নের ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুমাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ফলন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে উচ্ছে হেক্টর প্রতি ফলন যথাক্রমে ৭-১০ টন (৩০-৪০ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়।