লেবু একটি অত্যন্ত চাহিদাযুক্ত ফসল | সারাবছরই কৃষকবন্ধুরা লেবু চাষ (Lemon cultivation) করে থাকেন | বর্তমানে করোনা আবহে লেবুর চাহিদা বাড়ছে কারণ, এতে রয়েছে ভিটামিন সি যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী | কিন্তু, অনেক সময় দেখা গেছে লেবু চাষে কৃষকদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় | লেবুর ক্ষেতে বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হয়। এই নিবন্ধে, লেবু গাছের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
১) শিকড় পচা(Root rot) রোগ:
ক) চারা গাছে এই রোগের আক্রমণ হলে তা নেতিয়ে পড়ে এবং বড় গাছে আক্রমণ হলে তা ঢলে পড়ে। Macrophomina phaseolina এবং Rhizoctonia bataticola নামক ছত্রাকের আক্রমনে এই রোগ হয়ে থাকে।
খ) বাকলের ভিতরের অংশ এবং কাঠের উপরের অংশ কালো হয়ে যায়। প্রথমে গাছের শাখা শিকড়ে পচন ধরে এবং পরে প্রধান শিকড়ও নষ্ট হয়ে যায়।
গ) বীজতলার চারা গাছে এই রোগ বেশী হয়। এই রোগে আক্রান্ত গাছের শিকড়ের বাকল নরম হয়ে যায়।
প্রতিকার:
ক) বীজ বপন করার আগে বীজতলার মাটি এবং গাছ লাগানোর আগে গর্তের মাটি ফরমালিন দ্বারা শোধন করে নিতে হবে।
খ) গাছের গোড়া যেন ভেজা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ গাছের গোড়া ভেজা থাকলে রোগের জীবাণু দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
আরও পড়ুন -Papaya Farming Method: জেনে নিন পেঁপের সহজ চাষাবাদ পদ্ধতি
গ) ফরমালিন মিশ্রিত জল সেচের পরে গাছের গোড়ায় কলা গাছের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
২) স্ক্যাব(Scab)রোগ:
ক) Elsinoe fawectti নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। লেবু গাছের পাতায়, কচি ডালে ও ফলে এই রোগ হয়ে থাকে।
খ) এই রোগাক্রমণের কয়েকদিনের মধ্যে আক্রান্ত স্থানের তন্তু ঈষৎ সাদা রঙের ফোস্কার মতো উঁচু হয়ে বের হয়ে আসে। পাতার ও দাগের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দাগের আকৃতি ও রঙ বদলাতে থাকে।
গ) পাতার মতো ডালপালার উপরও স্ক্যাব রোগ ছোট ছোট ফোস্কার আকার নিয়ে বের হয়ে আসে।
প্রতিকার:
ক) রোগদূষিত পাতা, ডাল ও ফল সতর্কতার সাথে পুড়িয়ে ফেলতে হবে
খ) বসন্ত কালে নতুন পাতা গজানোর আগে একবার ও ফুল ফোটার পর এর দুই তৃতীয়াংশ পাপড়ি ঝরে পড়ার পর বোর্দোমিক্সচ্যার বা অন্য কোন ছত্রাকনাশক ছিটিয়ে দিতে হবে।
৩) এনথ্রাকনোজ(Anthracnose)রোগ:
ক) Gloeosporium limiticolum ও Celletotrichum gloeosporoides নামক ছত্রাকদ্বয়ের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে।
খ) এনথ্রাকনোজ রোগ পাতার আগায় ও কিনারায় বেশী হয়। এই রোগে আক্রান্ত গাছ আগা থেকে শুরু করে নীচের দিকে আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়।
গ) ডাল শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে পাতা ঝরে পড়ে | এই রোগের প্রকোপ বেশী হলে বড় ডালগুলি রোগা হয়ে যায় এবং হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
ঘ) এই রোগ আস্তে আস্তে গাছের পাতা থেকে ফলের বোঁটায়ও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বোঁটা আক্রান্ত হলে তা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফল ঝরে পড়ে।
প্রতিকার:
ক) এই রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য নীরোগ বীজতলায় চারা উৎপাদন করে পরে তা রোগমুক্ত জমিতে রোপন করতে হবে।
খ) জানুয়ারি মাসে একবার ও সেপ্টেম্বর মাসে আর একবার ৪ : ৪ : ৫০ অনুপাতে রোজিন বোর্দোমিক্সচ্যার গাছে ছিটাতে হবে।
গ) গাছের শিকড়ের চারপাশে উপযুক্ত সার ও নিয়মিত সেচ দিতে হবে। অতিরিক্ত গরম বাতাস যে দিক হতে আসে সেই দিকে অন্য গাছ লাগিয়ে বেড়া দিতে হবে |
৪) আঠা হওয়া(Gummosis)রোগ:
ক) এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কাণ্ডের গোড়ার দিকে বড় বড় জলে ভেজা দাগ দেখা যায়। শীঘ্রই এই দাগগুলি বাদামী রঙ ধারণ করে এবং কাণ্ডের বাকলে ফাটল দেখা দেয় |
খ) পরবর্তীতে এই ফাটল হতে আঠাজাতীয় পদার্থ বের হয়ে আসে।
গ) এই রোগে আক্রান্ত গাছের ফল ছোট হয়। Phytophthora নামক ছত্রাকের একাধিক প্রজাতির আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে।
প্রতিকার:
ক) এই রোগে আক্রান্ত অংশ ভালভাবে ছেঁটে ছত্রাকনাশকের পেস্ট লাগাতে হবে। এছাড়াও সেচের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় জল স্পর্শ না করে।
খ) গ্রাফটিং (grafting) বা জোড়কলম পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করতে হবে। গ্রাফটিং এর সময় রোগ প্রতিরোধী জাতের লেবুগাছের গোড়া ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন -Hydroponics Farming: হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতিতে চাষ করে হয়ে উঠুন লাভবান