বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় ডাল মুসুর ডাল। প্রচুর পরিমাণে এই ডালের মধ্যে আমিষ থাকায় দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষ এই ডাল খেয়ে থাকেন। প্রোটিনে সমৃদ্ধ এই ডাল মাংসের পুষ্টি মেটাতে সক্ষম। এই ডাল সবধরনের খাবারের সঙ্গে খাওয়া যায়। মুসুর ডাল চাষ করে আমাদের বাংলার বহু চাষি লাভবান হয়েছেন। মুসুরের সর্বত্র চাহিদা থাকায় এই ডালের চাষ করে প্রচুর লাভও করা সম্ভব।
মুসুর ডাল চাষের উপযুক্ত মৃত্তিকা এবং চাষের সময় (Soil and Cultivation Time):
সব ধরনের মাটিতেই এই ডাল চাষ করা গেলেও, বেলে দোআঁশ মৃত্তিকা এই ডাল চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি হিসাবে ধরা হয়। গোটা কার্তিক মাস ধরে এই চাষ করা গেলেও, পৌষ মাসে এই চাষ করলে ফলন ভালো হওয়ার অনেক বেশি সুযোগ থাকে।
চাষের জমি তৈরী (Land Preparation):
মুসুর ডালের জমি তৈরি করতে হলে, জমিতে ৩ থেকে ৪ টি আড়াআড়ি চাষ এবং মই দিতে হবে। চাষের জন্য মাটি ভালো করে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। মুসুর ডাল চাষ করতে হলে প্রত্যেক বিঘায় ৬ থেকে ৮ কেজি মুসুর বীজ লাগবে।
মসুর ডাল চাষের বীজ বপন (Seed Sowing):
জমিতে ছিটিয়ে এবং সারিতে এই দুই ভাবেই মুসুর বপন করা যায়। তবে সারিবদ্ধ ভাবে মসুর চাষে বেশি ফলন পাওয়া যায়। গভীর ভাবে মুসুর বপন করা উচিত। এর ফলে বীজের অঙ্কুরোদগমের ম্যান ভালো হবে। মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণ রস থাকলে জমির উপরিভাগ থেকে কমপক্ষে ১.৫-২.৫ সে.মি. নিচে বীজ বপন করতে হবে। গভীর ভাবে বীজ বপন করলে পাখি পক্ষিও বীজ নষ্ট করতে পারবে না।
মসুর ডাল চাষের প্রয়োজনীয় সার সারের পরিমাণ
ইউরিয়া ৬-৮ কেজি
টিএসপি ১২-১৫ কেজি
এমওপি সার ৫-৬ কেজি
অনুজীব সার ৩০০ গ্রাম/ বিঘা
মসুর ডাল চাষের সার প্রয়োগ পদ্ধতি (Fertilizer):
শেষ বার চাষ দেওয়ার সময় উপরিল্লেখিত সারগুলি দিতে হবে। মুসুর চাষ আগে যেই জমিতে করা হয়নি, সেই জমিতে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৯০ গ্রাম হারে অণুজীব সার প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ (Irrigation):
যেই জমিতে মুসুর ডাল চাষ হচ্ছে, সেই জমিতে যদি জলের ভাগ কম থাকে, তাহলে বীজ পটার আগে হালকা সেচ দিয়ে নেওয়া উচিত। অনেক সময় বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টি পড়লে, জমিতে জল দাঁড়িয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে উপযুক্ত উপায়ে জল বার করার পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।
আরও পড়ুন: Seaweed Farming: জেনে নিন সামুদ্রিক শৈবাল চাষ পদ্ধতি
কীটপতঙ্গ রোগবালাইয়ের প্রতিকার (Pest and Disease Control):
১) মরিচা রোগ মুসুর ডালের পক্ষে ভয়ানক এক অসুখ। এর ফলে গাছ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রোগগ্রস্থ গাছের পাতা ও কাণ্ডে মরিচ রঙের গুটি এইসময় লক্ষ্য করা যায়।
২) জাব পোকা মুসুরের খুবই ক্ষতি করে। এই পোকার আক্রমণে গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়, সাথে সাথে গাছের বাড় বাড়ন্ত হ্রাস পায়।
এই সমস্ত অসুখ ও কীটপতঙ্গের থেকে মুসুর গাছকে বাঁচাতে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত।
পরিচর্যা(Caring):
মুসুর ডাল চাষে অন্যতম প্রধান সমস্যা হল, আগাছা। তাই বীজ পোঁতার ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর আগাছাগুলি পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। মাটি ঝুরঝুরে রাখার জন্য মাটির ভারী ঢেলাগুলো ভেঙে দেওয়া উচিত।
ফসল সংগ্রহ (Harvest):
মুসুর ফসল সংগ্রহের সঠিক সময় ফাল্গুন থেকে চৈত্র মাস। অবশ্যই এই সময়টাতে মুসুর ডাল সংগ্রহ করে নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: Shifting Cultivation: স্থানান্তর কৃষির ভূমিকা ও প্রভাব