প্রধানমন্ত্রী-কিষাণ প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয় তহবিল অস্বীকার করার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সরকারের উপর বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেন। রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য সরাসরি নগদ স্থানান্তর ব্যবস্থা চালু করতে অস্বীকার করায় উঠেছে বিতর্ক।
মিঃ অমিত শাহ তার দু'দিনের রাজ্য সফর শেষে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে বলেন যে, বাংলা সরকার কৃষক বিক্ষোভ সমর্থন করছে, তবে বিদ্রূপজনকভাবে এই বাংলার কৃষকরাই পি এম কিষাণের মত প্রকল্পের সুফল পান না। তিনি আরও যোগ করেছেন যে, রাজ্যের কৃষকরা প্রধানমন্ত্রী মোদীর দেওয়া অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছেন দীর্ঘদিন যাবত।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম বিরোধী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কৃষি আইনগুলির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বলেছেন, বিজেপির উচিত কৃষি আইন বাতিল করা বা সংশোধন করা।
তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ধারাবাহিকভাবে বলেছেন যে, তিনি কৃষকদের দাবি সমর্থন করেন। একাধিক টুইটের মাধ্যমে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আইনগুলি প্রত্যাহার না করা হলে তিনি দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু করার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি টুইটে বলেছেন যে, কৃষক বিরোধী বিলগুলি GOI-এর দ্বারা বাদ দিতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে তা না করা হলে বাংলা সরকার রাজ্য ও জাতিজুড়ে আন্দোলন করবে। মুখ্যমন্ত্রী এবং তার দলের সদস্যরা প্রথম থেকেই দৃঢ়ভাবে এই কৃষকবিরোধী বিলের বিরোধিতা করে আসছেন।
কৃষকদের সরাসরি নগদ সুবিধা প্রদান করতে পশ্চিমবঙ্গের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে এখন বিজেপি পাল্টা আক্রমণ করছে। পিএম কিষাণের মত প্রকল্প না আসায় এখানে বহু কৃষক বার্ষিক ৬০০০ টাকার সুবিধাভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিজেপি চিফ জেপি নদ্দা থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর- সকলেই সাম্প্রতিক সময়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন। মিঃ শাহ মুখ্যমন্ত্রীকে দোষারোপ করে বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার রাজ্যের অর্থনীতি নষ্ট করেছে।
মিঃ অমিত শাহ বলেছেন, সরকারের মূল লক্ষ্য বাংলাকে এর ‘সোনার বাংলা’ খেতাব ফিরিয়ে দেওয়া। স্বাধীনতার পর থেকে জিডিপির জন্য পশ্চিমবঙ্গের অবদান সবসময়ই এক-তৃতীয়াংশ ছিল, তবে এর পরে ধীরে ধীরে এটি হ্রাস পেতে শুরু করে।
শিল্পের উন্নয়নে বাংলার অবদান স্বাধীনতার পরে ৩০ শতাংশ ছিল। এখন এটি ৩.৫ শতাংশ। ১৯৬০ সালে বাংলা বিশ্বের অন্যতম ধনী রাজ্য ছিল। ১৯৫০-এর দশকে বাংলায় ৭০ শতাংশ ঔষধি পণ্য তৈরি হত আর এখন তা মাত্র ৭ শতাংশ। বাংলার পাটকলগুলিও বন্ধ হয়ে গেছে, চাকরির ক্ষেত্র ক্রমশই কমছে।
এর পূর্বেও এক চিঠি মারফৎ, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখর রাজ্য সরকারকে পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার জন্য অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর উপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে চিঠি লিখেছিলেন এবং এতে দাবি করেছিলেন যে, রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে বাংলার কৃষকরা প্রধানমন্ত্রী কিষাণ প্রকল্পের আওতায় ৮,৪০০ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
তিনি টুইট বার্তার মাধ্যমেও জানান যে, "নিষ্ক্রিয়তা এবং ব্যর্থতার কারণে পশ্চিমবঙ্গে কৃষকরা এ পর্যন্ত PMKisan এর ৮,৪০০ কোটি টাকা পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।"
সমসাময়িক সময়ে তিনি আরও লিখেছেন: "সারা দেশে কৃষকরা এ পর্যন্ত প্রায় ৯২,০০০ কোটি টাকা পেয়েছেন এবং বাংলায় কৃষকরা কিছুই পাননি।" রাজ্যপাল তাঁর চিঠিতে বলেছিলেন যে, এটি বাস্তবায়ন করা হলে ৭০ লক্ষ কৃষক রাজ্যে উপকৃত হতে পারতেন। তিনি সরকারকে "তাৎক্ষণিক সংশোধন" করার জন্যও বলেছিলেন।
তিনি আরও বলেন যে, রাজ্য সরকারের কেবল কৃষক পরিবারগুলি চিহ্নিত করা দরকার যাতে তারা এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।