সমগ্র বিশ্বে পেঁয়াজ উৎপাদনে চিন ও ভারত অন্যতম প্রধান দুটি দেশ। মহারাষ্ট্রের নাসিকে সবথেকে বেশি পেঁয়াজের উৎপাদন হয়৷ এছাড়া গুজরাট, দক্ষিণ ভারত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ চাষ হয়৷
১) চোষী পোকা (Thrips) -
বিজ্ঞানসম্মত নাম- থ্রিপস ট্যবাকি
সংক্ষিপ্ত বিবরণ- এই পোকা ছোট ও হলদে-সাদা বর্ণের হয়। এই পোকার ডানায় চিরুনির মতো লম্বা রোম থাকায় একে চিরুনি পোকাও বলা হয়। বাচ্ছা ও পূর্ণাঙ্গ পোকাগুলিকে পাতায় দেখা যায়। পাতার নিচে দিকে ডিম পাড়ে।
ক্ষতির লক্ষণ -
চোষি পোকা দলবদ্ধ হয়ে পাতা থেকে রস শোষণ করে খায়। আক্রান্ত পাতা রুপালী-সাদা হয় ও পরে বাদামী হয়ে যায়। পাতার ডগা থেকে রোগের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এই পোকার তীব্র আক্রমণ দেখা গেলে চারাগাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। সবশেষে গাছটি নেতিয়ে পড়ে ও শুকিয়ে মারা যায়। এই পোকার আক্রমণের ফলে কন্দের আকার ও আকৃতি তথা উৎপাদন ব্যহত হয়।
আক্রমণের তীব্রতার মাপকাঠি- লাগানোর ১৫ দিন পর প্রতিগাছে ১৩-১৫ টি পোকা দেখা গেলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিতে হবে।
উন্নত জাত যেমন (Variety) -
এগ্রিফাউন্ড ডার্ক রেড, বসন্ত ৭৮০, ভিমা রেড ইত্যাদি চাষ করতে হবে।
নিয়ন্ত্রণ-
-
জমি আগাছা মুক্ত করতে হবে। জমিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে পোকার আক্রমণ অনেকটাই কম হয়।
-
বেড়া ফসল হিসাবে ভুট্টার চাষ করুন।
-
পোকার আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় নিম জাতীয় ওষুধ অ্যাজাডিরাক্টিন ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে আঠার সাথে স্প্রে করুন।
-
পরজীবী বন্ধুপোকা, সেরানিসাস মেন্স এবং পরভোজী বন্ধুপোকা, ছিলোমেন্স সেক্সমাকুলাটা জমিতে ছাড়তে হবে।
-
বীজ বপনের ৩০ দিন পর সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ৫ গ্রাম প্রতি লিটার বা বিউভেরিয়া ব্যাসিয়ানা ১০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
-
আক্রমণ তীব্র হলে ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮% ১ মিলি/৩ লিটার জলে বা ডাইমিথোয়েট ৩০% ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে আঠা সহযোগে স্প্রে করুন।
-
ফিপ্রোনিল ১ মিলি প্রতি লিটার বা স্পাইনোস্যাড ২.৫ মিলি/১০ লিটার বা অ্যাসিটামিপ্রিড ১ গ্রাম/৪ লিটার জলে বা ডাইফেনথিউরন ১ গ্রাম/২ লিটার জলে ১৫ দিন অন্তর দুবার আঠা সহযোগে স্প্রে করুন।
২) পেঁয়াজের মাছি -
বিজ্ঞানসম্মত নাম- হাইলিমিয়া অ্যান্টিকুয়া
সংক্ষিপ্ত বিবরণ- পূর্ণাঙ্গ মাছি আকারে ৬ মিমি লম্বা, ধূসর রঙের হয় ও কাঁটাযুক্ত ডানা থাকে। ম্যাগট সাদা ও পা বিহীন হয়।
ক্ষতির লক্ষণ-
মাছির শূককীট পাতা খেয়ে মাটির নীচে চলে যায় এবং পেঁয়াজের কন্দের চাকতি অংশের ক্ষতি করে। আক্রান্ত গাছ ক্রমশ হলদে-বাদামী বর্ণ ধারন করে ও সবশেষে শুকিয়ে মারা যায়। আক্রান্ত কন্দগুলি সংরক্ষণ কালে পিথিয়াম নামক ছত্রাকের আক্রমণে পচন বৃদ্ধি হয়।
আক্রমণের তীব্রতার মাপকাঠি- লাগানোর ১৫ দিন পর প্রতিগাছে ১ টি পূর্ণাঙ্গ মাছি দেখা গেলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিয়ন্ত্রণ-
-
শস্য আবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ একই ফসল একই জমিতে বারবার চাষ করা চলবে না।
-
আক্রমণ প্রবণ এলাকায় মাটি তৈরির সময় প্রতি একরে ৩০০ কেজি নিমখোল প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
-
পরভোজী বন্ধুপোকার (গ্রাউন্ড বিটল, রোভ বিটল) সংখ্যা জমিতে বাড়াতে হবে।
-
চারা লাগানোর আগে জমিতে ভালোভাবে দানাদার কীটনাশক ফোরেট ১০জি ৬০০ গ্রাম/১০ শতকে প্রয়োগ করতে হবে।
৩) পেঁয়াজের ল্যাদা পোকা -
বিজ্ঞানসম্মত নাম- স্পোডোপটেরা লিটুরা
সংক্ষিপ্ত বিবরণ- ল্যাদা কালচে সবুজ ও মথ ধূসর বর্ণের হয়। স্ত্রী মথ পাতায় ডিম পাড়ে। ৩-৪ দিনের মধ্যে লার্ভা বের হয়ে পাতা খেতে শুরু করে। ল্যাদা সাধারণত দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে ও রাত্রে আক্রমণ করে।
ক্ষতির লক্ষণ -
ল্যাদা প্রথমে গাছের সবুজ অংশ আঁচড়ে খায়। পরে পাতা ফুটো করে খায় ও পাতার মধ্যে আশ্রয় নেয়। তারপর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ও মাটির নিচে প্রবেশ করে। পাতার কাটা অংশ ও মল দেখে আক্রমণ বোঝা যায়।
আক্রমণের তীব্রতার মাপকাঠি- চারা লাগানোর ১৫ দিন পর প্রতি গাছে ১ টি লার্ভা।
নিয়ন্ত্রণ-
-
কুমড়োগোত্রীয় ফসলের সাথে শস্য আবর্তন করতে হবে।
-
মূল জমি চাষের সময় জমিতে কারবোফিউরান ৫০ গ্রাম এ. আই/ হেঃ প্রয়োগ করুন।
-
আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় নিম জাতীয় ওষুধ অ্যাজাডিরাক্টিন ১%ইসি ৩ মিলি বা ১.৫ গ্রাম বিটি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
-
ফেরোমোন ফাঁদ প্রতি একরে ৩-৪ টি ব্যবহার করতে হবে।
-
পরজীবী বন্ধুপোকা ট্রাইকোগ্রামা প্রেটিওসাম ৪০,০০০ প্রতি একরে ছাড়তে হবে।
-
স্টেইনারনিমা ফেল্টি ২০-১২০ কোটি পোকাখাদক কৃমি প্রতি একরে স্প্রে করতে হবে।
-
আক্রমণ অধিক হলে নোভালিউরন ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
৪) নালী পোকা -
বিজ্ঞানসম্মত নাম- ফাইটোমাইজা জিম্নোসটোমা
ক্ষতির লক্ষণ- ক্ষুদ্র পোকাটি পাতার দুই ত্বকের মাঝে নালী করে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতার উপর আকাবাকা রেখার সৃস্টি করে। তাই একে চাষীভাইরা ম্যাপকাটা পোকা বলেও ডাকে।
নিয়ন্ত্রণ-
-
প্রাথমিক অবস্থায় গাছের পাতায় আক্রমণ দেখা গেলে পাতা তুলে নষ্ট করতে হবে।
-
কার্টাপ ৫০% ১ গ্রাম/লি জলে বা ইথোফেনপ্রক্স ১০% ১মিলি/ লি জলে গুলে স্প্রে করুন।
-
নিমজাত কীটনাশক অ্যাজাডিরাক্টিন ১% ইসি ৩ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
আরও পড়ুন - Organic Manure – সহজ পদ্ধতিতে কীভাবে বানাবেন জৈব সার, রইল খুঁটিনাটি