চিচিঙ্গা চাষ (Snake Gourd) পদ্ধতি ও তার রোগ-ব্যবস্থাপনা

Snake Gourd Farmingপশ্চিমবঙ্গ বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর অঞ্চল। এখানে যেমন বৃষ্টিবহুল অঞ্চল রয়েছে, তেমনি পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম এর মতো খরাপ্রবণ অঞ্চলও বিদ্যমান। বৃষ্টিবহুল অঞ্চল কৃষিসহায়ক পরিবেশ যথেষ্ট অনুকূল হলেও খরাপ্রবণ অঞ্চলে চাষাবাদ যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের বিষয়। তবে কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে এক পক্ষকাল অন্তর জল দেওয়ার মতো পরিকাঠামো যদি কোনো খরা প্রবণ অঞ্চলের থাকে, তবে সেই সব অঞ্চলে হালকা সেচের মাধ্যমে চিচিঙ্গা চাষ বেশ লাভজনক।

KJ Staff
KJ Staff

চিচিঙ্গার কয়েকটি উন্নতমানের বীজ হল - CO 1, CO 2, PKM 1, MDU 1 , PLR (SG) 1 এবং PLR 2।

চিচিঙ্গা চাষ পদ্ধতি -

মৃত্তিকা – ভালো নিকাশি ব্যবস্থাসহ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটি এর সর্বাধিক উত্পাদনের জন্য উপযুক্ত। মাটির পিএইচ ৬.৫-৭.৫ আদর্শ। বৃদ্ধির সময়ে পর্যাপ্ত তাপমাত্রা প্রথম পর্যায়ে ১৮-২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং পরবর্তী পর্যায়ে ২৪-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস ফসলটির জন্য উপযুক্ত।

জমি প্রস্তুতি -

বীজ বপনের আগে তা শোধনের জন্য সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ১০ গ্রাম বা ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৪ গ্রাম/কেজি ব্যবহার করতে পারেন। চিচিঙ্গা চাষের জন্য জমিতে ভালো করে লাঙ্গল দিতে হবে। চাষে সর্বাধিক ফলন পেতে গেলে ভূমি কর্ষণ অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। পিটের গভীরতা হবে ৩০-৪০ সেমি এবং ৫০-৬0 সেমি ব্যাস বিশিষ্ট। পিটগুলির একটি থেকে অপরটির ব্যবধান ২.৫ * ২.৫ মি. রাখতে হবে।

ফার্টিলাইজিং(Fertilizing process of Snake Gourd) 

জমি প্রস্তুত করার সময় ডিকম্পোস্ট এফওয়াইএম প্রয়োগ করতে হবে। এরপর ১০০ গ্রাম এনপিকে ৬:১২:১২ অনুপাতে/পিট এবং নাইট্রোজেন ১০ গ্রাম/পিট বীজ বপনের ৩০ দিন পরে যথাক্রমে প্রয়োগ করা দরকার। অন্তিম ভূমি কর্ষণের আগে এফওয়াইএম ৫০ কেজি, ১০০ কেজি নিম কেক, ফসফোব্যাক্টেরিয়া এবং অ্যাজোস্পিরিলিয়াম ২ কেজি/হেক্টর, সিউডোমোনাস ২.৫ কেজি/হেক্টর প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ -

চিচিঙ্গা চাষের জন্য জলবায়ু অবস্থার উপর নির্ভর করে ২-৩ দিনের ব্যবধানে জমিতে জল দেওয়া প্রয়োজন। তবে গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রে, নিয়মিত সেচের প্রয়োজন হতে পারে। অতিরিক্ত জলে যাতে উদ্ভিদটির কোন ক্ষতি না হয়, সেই ঝুঁকি এড়াতে ফুরো সেচ একটি খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ উপায়। এছাড়া জমিতে যাতে অতিরিক্ত জল জমে উদ্ভিদের কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে জল নিকাশি ব্যবস্থা অবশ্যই ভালো রাখতে হবে। যে জায়গাগুলিতে বৃষ্টিপাত কম হয়, সেখানে গাছের গোড়ায় প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে।

চিচিঙ্গা চাষের রোগ-প্রতিকার ও কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা -

Aphid vector (এফিড ভেক্টর) -

এক ধরণের অত্যন্ত ক্ষতিকারক ভাইরাস এটি। এর নিয়ন্ত্রণে ইমিডাক্লোপ্রিড ০.৫ মিলিলিটার /লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

Powedery Mildew (পাউডারি মিলডিউ) -

এর নিয়ন্ত্রণে কার্বেনডাজিম ০.৫ গ্রাম/লিটার বা ডায়নোক্যাপ ১ মিলি/লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

Downy Mildew (ডাউনি মিলডিউ) - ম্যানকোজেব ২ গ্রাম/লি. জলে মিশিয়ে ১০ দিনের ব্যবধানে স্প্রে করতে হবে।

কীট নিয়ন্ত্রণ –

Leaf caterpillars & bettles - ট্রাইক্লোরফোন স্প্রে ৫০% (ইসি) ১.০ মিলি/লিটার বা ডিক্লোরভস স্প্রে ৭৬% (ইসি) ৬.৫ মিলি ১০ লিটার জলে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

আগাছা নিয়ন্ত্রণ -

শস্যের আগাছা নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগাছা সময়মতো পরিষ্কার না করা হলে তা ফলনে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আগাছানাশক প্রয়োগের পরিবর্তে মাসে দু’বার হস্তচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে নিড়ালে তা ভালো হয়।

সাধারণভাবে, চিচিঙ্গা ফসল প্রস্তুত হতে সময় লাগে ১৩০-১৫০ দিন। উন্নত বীজ এবং সারের উপর নির্ভর করে এর প্রত্যাশিত গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১৫-১৮ টন। বাজার দর অনুযায়ী কৃষক ১১০০ টাকা/ক্যুইন্টাল তা বিক্রী করলে লাভবান হবেন। পশ্চিমবঙ্গের মত বৈচিত্র্যপূর্ণ জলবায়ুর অঞ্চলে চিচিঙ্গা চাষ যথেষ্ট লাভজনক।

স্বপ্নম সেন

তথ্যসূত্র - ফার্মিং ইন্ডিয়া

Published On: 14 May 2020, 04:30 PM English Summary: Snake Gourd Farming & It’s Pest Management

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters