আদিকাল থেকে কৃষিকাজে গবাদি পশুর জৈব কার্যাবলী খুবই প্রয়োজনীয় | এটি মাটিকে উর্বর করে তোলে এবং মাটির জৈবিক গুণাবলীও বাড়িয়ে তোলে | গাছের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য উপাদান একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে সরবরাহ করা মাটির সহজাত অভ্যাস। একেই মাটির উর্বরতা বলা হয়। গাছের বৃদ্ধি মাটিতে উপস্থিত প্রয়োজনীয় পরিপোষক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির শস্য উৎপাদন ক্ষমতাকে মাটির উৎপাদিকা শক্তি বলে। মাটির সহজাত উর্বরতা শক্তি উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও অন্যান্য উপকারী প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। ক্রমাগত রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়ায় কমে যাচ্ছে কৃষিজমির উর্বরতা৷ এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক অঞ্চলের মাটিতেই ন্যূনতম ৩.৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকার কথা থাকলেও সেখানে এর পরিমাণ এক শতাংশেরও নীচে | তাই, বেশি পরিমনে গবাদি পশু চাষে তাদের মল-মূত্র ব্যাবহারে মাটির উর্বরতা (Soil Fertility)পুনরায় বৃদ্ধি পাবে | এই নিবন্ধে জেনে নিন, কোন কোন কৃষক কিভাবে পশু-প্রাণীদের কাজে লাগিয়ে মাটির উর্বরতা বাড়িয়েছেন;
মহিলা কৃষক কমলা বেগমের খামার (Organic Farm) :
দেশজুড়ে যখন রাসায়নিক সার ও জিনগতভাবে পরিবর্তন করা বীজ ছড়িয়ে পড়ছে, তখন স্রোতের উলটো দিকে গেছেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের কিষানি কমলা বেগম৷ নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন জৈব খামার৷ কমলা বেগম কেঁচোকে ব্যবহার করেন জৈবসার উৎপাদনে৷ ইংরেজীতে এই পদ্ধতিতে উৎপন্ন সারকে বলা হয় ‘ভার্মি কম্পোস্ট (Verming Compost) ৷ এই পদ্ধতিতে গাছের পাতা, খড়, গোবর, লতাপাতা, পচনশীল আবর্জনা খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে৷ সেই মল থেকেই তৈরি হয় কেঁচো সার৷ এই সার ফলন বৃদ্ধিতে দারুন সহায়ক |
মিচিগানের কৃষক স্টিভ ম্যাকেলরোয়:
শুধু ভারতেই নয়, সুদূর মিচিগানের কৃষকও একই পন্থা ব্যাবহার করেছেন | স্টিভ ম্যাকেলরোয় একজন জৈব কৃষক নামে পরিচিত | তিনি তার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি জন্য ৮টি হাইফের পুষেছিলেন | তাদের মল-মূত্র জমিতে সার হিসাবে ব্যবহার করেন | তিনি লক্ষ্য করেন, এতে ফলন যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে |
জৈব পদার্থের গুরুত্ব (Importance Of Organic substance) :
মাটির ভৌতিক ও রাসায়নিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য জৈব পদার্থের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি উদ্ভিদের খাদ্যোপাদান সরবরাহ, মাটির অম্ল ও ক্ষারত্বের তারতম্য রক্ষা এবং রাসায়নিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। তাই জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গোবর সার, কম্পোস্ট, খামারজাত সার ইত্যাদি প্রয়োগ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা নেয়া উচিত। সবুজ সার ও বিভিন্ন ফসলের অবশিষ্টাংশ মাটিতে মিশিয়ে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। আদর্শ মাটিতে কমপক্ষে ৫% জৈব পদার্থ থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুবই কম। সুতরাং যত বেশি পারা যায় জমিতে জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।
কেন জৈব পদ্ধতিতে চাষ গুরুত্বপূর্ণ (Importance of organic fertilizer):
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাস ও নগরায়নের প্রয়োজনে অবকাঠামো নিশ্চিত করতে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি৷ হিসেব অনুযায়ী, গত ১১ বছরে ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩১ একর কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ায় কমে গেছে ধান চাষ৷ এ অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন কৃষিজমির উৎকৃষ্ট ব্যবহার৷ সেক্ষেত্রে জৈব পদ্ধতিতে চাষ সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ এই পদ্ধতির সুবিধা হলো, এতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয় স্বল্পমাত্রায় | জৈব সার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ও সব্জির উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব | জৈব সার রাসায়নিক সারের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ খরচ কমায়৷ তবে এর উৎপাদন বৃদ্ধি করতে যেহেতু হরমোন বা কৃত্রিম সার ব্যবহৃত হয় না, তাই আখেরে দাম একটু বেশিই পড়ে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Crop Care - গাছের বৃদ্ধি কমে যাচ্ছে অথবা অপরিপক্ক অবস্থায় ফল ঝরে যাচ্ছে? জানুন প্রতিকারের উপায়
আরও পড়ুন - Orchid Farming: আধুনিক পদ্ধতিতে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে অর্কিডের চাষ