এই খরিফ মরসুমে ধান চাষে উন্নত ফলন পেতে হলে এই সময় চাষে যে রোগ-পোকার আক্রমণ ঘটে, তা দমন করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। কীভাবে চাষী ভাইরা শস্য সুরক্ষার বিষয়টি পরিচালনা করবেন, সে নিয়েই আজ আলোচনা করা হবে। মনে রাখতে হবে, ভালো ফলন ও ভালো লাভের জন্য শস্য সুরক্ষা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কারণ, সঠিক সময়ে তা নিয়ন্ত্রণ না করলে প্রভূত ক্ষতির সম্ভবনা থাকে।
আমন ধানে যে সকল পরিচর্যা করতে হবে, তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
ম্যাগনাপারফি গ্রিসা নামক ছত্রাক দ্বারা ব্লাস্ট রোগটি হয়। এটি শুধু ধানে হয় গম বার্লি রাই ফসলেও এই রোগ দেখা যায়।
এ রোগটি ধানগাছের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে ধান পাকা পর্যন্ত যে কোন সময়ে হতে পারেন। এ রোগে ধানগাছের পাতা, গিঁট ও শিষের গোঁড়া আক্রান্ত হয়। তাই এ রোগ তিনটি নামে পরিচিত। যেমন, পাতাব্লাস্ট, গিটব্লাস্ট ও শিষ ব্লাস্ট।
পাতা ব্লাস্টে প্রথমে পাতায় ছোট ছোট ডিম্বাকৃতি দাগ হয়। আস্তে আস্তে দাগ বড় হয়ে দুপ্রান্ত লম্বা হয়ে চোখের আকৃতি ধারণ করে। দাগের চারদিকের অংশ গাঢ় বাদামি ও মাঝের অংশ সাদা-ছাই বর্ণ ধারন করে। অনেকগুলো দাগ একত্রে মিধে গিয়ে পুরো পাতাই মরে যায়। এ রোগের কারণে জমির সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে এ রোগ বোরো মৌসুমেই বেশি হয়। পাতার ব্লাস্ট না হলেও শিষব্লাস্ট হয় এবং এতে শিষ ভেঙে পড়ে ও ধান চিটা হয়।
রোগপ্রবণ ধানের জাত, বেলে জাতীয় মাটি এবং বেশি ইউরিয়া সার প্রয়োগ এ রোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া রাতে ঠাণ্ডা, দিনে গরম ও সকালে পাতায় শিশির জমে থাকলেও এ রগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রনের উপায় (Disease management) -
১। জমিতে সব সময় জল ধরে রাখা।
২। সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করুন। আক্রান্ত জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি-প্রয়োগ বন্ধ রাখুন।
৩। প্রতি লিটার জলে (টেবুকোনাজল ৫০% + ট্রাইফ্লুক্সিট্রোবিন ২৫%) জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন: নাটিভো ৭৫ ডব্লিউপি ০.৬০ গ্রাম মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করা।
৪। অথবা প্রতি লিটার জলে ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: ট্রপার ৭৫ ডব্লিউপি বা জিল ৭৫ ডব্লিউপি ০.৮১ গ্রাম বা অন্যান্য নামের এ রোগের জন্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করা।
আরও পড়ুন - Tuberose Disease Management - রজনীগন্ধা ফুলের বিভিন্ন রোগবালাই দমনের পদ্ধতি ও চাষের কৌশল
৬। রোগ প্রতিরোধশীল জাত, যেমন বিপ্লব (বিআর৩), দুলাভোগ (বিআর৫), গাজী (বিআর১৪), মোহিনী (বিআর১৫), শাহীবালাম (বিআর১৬), শ্রাবণী (বিআর২৬), ও ব্রি ধান৩৩ এর চাষ করুন।
পাতা, কান্ড ও শিষ আক্রান্ত হয়। প্রথমে পাতায় ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে যার দু প্রান্ত লম্বা হয়ে চোখাকৃতি ধারণ করে। দাগের মধ্যভাগ ছাই রংয়ের ও বাইরের দিকের প্রান্ত গাঢ় বাদামী হয়। অনেকগুলি দাগ একত্রিত হলে পাতাটি মরে যেতে পারে।