সুনামগঞ্জ দোয়ারা বাজার উপজেলার আজমপুরের গ্রামের কৃষক আব্দুছ সাত্তার মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির ৫ একর জমিতে আমন ধান চাষ করছেন। আশা করেছিলেন খুব ভালো ফলন হবে। সেই ধান বিক্রি করে মহাজনের ঋণ পরিশোধ করে ছেলে-মেয়ে নিয়ে শান্তিতে দিন কাটাবেন।
কিন্তু সেই আশা দুরাশায় পরিণত হলো। কারণ ধান গাছে ‘পাতামোড়ানো পোকায় আক্রমণ শুরু হওয়ায় ধানের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। শুধু আব্দুছ সাত্তারের জমিতে নয় সুনামগঞ্জের সদর ও দোয়ারা উপজেলায় ধান গাছে ‘পাতামোড়ানো পোকায় আক্রমণ শুরু হয়েছে। ফলে দুই উপজেলার কৃষকরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।
সদর উপজেলার সুরমা ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এবং দোয়ারা উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের জমিতে এই পোকার আক্রমণ ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে। পোকা নিধনে ওষুধেও কাজ হচ্ছে না। ফলে দুশ্চিন্তায় কৃষকের মাথায় হাত। দোয়ারা বাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের কাটাখালী, আজমপুর, ইদনপুর, জালালপুর, নোয়াগাঁও, চন্ডিপুর, পান্ডারগাঁও এলাকার আমন জমিতে এই পোকার আক্রমণ হয়েছে। এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ঢালাগাঁও, কৃষ্ণনগর, নলুয়া, বেরীগাঁও, কোনাগাঁও, বানীপুর, রাজানগর, আমপারা, সৈয়দপুর, বালাকান্দা, মঙ্গলকাটা, ঢালারপাড় প্রভৃতি এলাকায় আমন ধানের জমিতেও পোকার আক্রমণ হয়েছে।
সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের কৃষক জামাল মিয়া বলেন, অনাবৃষ্টি ও টানা খরতাপে পোকার আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে মারাত্মকভাবে। ধান গাছের পাতা প্রথমে সাদা আকৃতির ছাপ ছাপ হয়, পরে লালচে হয়ে পড়ে। পোকায় কেটে দিলে ডিগা ঝরে পড়ে। তাই ধানের ফলন নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন |
একই এলাকার কৃষক মতিন মিয়া বলেন, পোকা নাশক ‘বলিউম ফ্লেকসি’ নামক ওষুধ বাজারে ৩৩০ টাকা দরে পাওয়া যেতো। ওষুধ ব্যবহার করলে কাজও হতো। এখন এই নামের নকল ওষুধ বাজারে বেরিয়েছে। দাম অত্যন্ত কম। তবে এই ওষুধ ব্যবহারে কোনো লাভ হয় না। অনেক আশা নিয়ে ঐ বছর আমন ক্ষেত করছি কিন্তু সেই আশায় এখন পূরণ হলো না। ফসল ভালো না হলে নিঃশ্ব হয়ে যাবো।
আরও পড়ুন -Soil borne diseases of crops: জেনে নিন ফসলের মাটিবাহিত রোগের ক্ষয়-ক্ষতির সমাধান
দোয়ারা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক আজাদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমন ধানের পোকায় আক্রমণ করেছে। ওষুধেও কাজ হচ্ছে না। পোকার আক্রমণ থেকে জমি রক্ষা করতে না পারায় আমরা কৃষকেরা এখন হতাশ হয়ে পড়েছি। একই গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক আমন ধানের জমিতে পোকায় আক্রমণ করেছে। এখন যদি বৃষ্টি হয়, তবে পোকা কিছুটা দমন হবে। নইলে ধানের জমির মারাত্মকভাবে ক্ষতি হতে পারে। অন্য বছর পোকা নিধনের যে ওষুধ কাজ করতো এই ওষুধের বিপরীতে নকল ওষুধ বাজারে বেরিয়েছে। এই বিষয়টিও খোঁজে বের করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, বৃষ্টির অভাবে পোকায় ধরেছে আমন জমিতে। পোকার আক্রমণ থেকে জমি বাঁচাতে কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিয়ে আসছি। পোকা নাশক ‘বলিউম ফ্লেকসি’ নামক ওষুধ বাজারে আছে, তবে দাম বেশি। কম দামি ওষুধে কাজ হয় না, এটাও ঠিক। ‘নাইট’ ও ‘ছবি কল’ নামের ওষুধের দাম কম আছে। এই ওষুধ কিছুটা কাজ করে। ধান গাছ নিধনকারী পোকার নাম ‘পাতামোড়ানো’ পোকা। আশা করি দ্রুত কৃষকদের জমি ঐ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে।
আরও পড়ুন -Weed management methods: দেখে নিন ক্ষেতের আগাছা দমন করার উপায়