মটরশুঁটি কেই না খেতে ভালোবাসে। শিমজাতীয় এই উদ্ভিদের বীজ যেকোনও অবস্থায় খাওয়া যায়, মানুষের কাছে তাই এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। কাঁচা অবস্থায় যেমন মটরশুঁটি খাওয়া যায় তেমনি ভেজে নিয়ে স্বাদ আস্বাদনেও এর জুড়ি মেলা ভার। পুষ্টিসমৃদ্ধ এই সবজি উদ্ভিজ্জ আমিষের এক অন্যতম সেরা উদাহরণ। মটরশুঁটি চাষের মাধ্যমে অনেক চাষিভাই বহুল উপকৃত হয়েছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক মটরশুঁটি চাষের নিয়মকানুন।
উপযুক্ত মাটি ও জলবায়ু (Soil and Climate)
এই জাতীয় সবজি চাষের জন্য দোআঁশ মাটি ব্যবহার সবথেকে ভালো। এঁটেল মাটিতে চাষ করলে মটরশুঁটির চারা অনেকসময় মারা যায়। শীত প্রধান এলাকায় মটরশুঁটির চাষ খুব ভালো হয়, এছাড়াও আংশিক আর্দ্র জলবায়ু সম্পন্ন এলাকাতেও এই চাষ করা যায়। ১০-১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হল মটরশুঁটি চাষের সবচাইতে সুবিধাকর তাপমাত্রা।
মটরশুঁটির বিভিন্ন জাত
আরকেল, আলাস্কা, গ্রীন ফিস্ট, সুগার স্ন্যপ নামের এই মটরশুঁটির জাতগুলি চাষিভাইদের কাছে অধিক জনপ্রিয়। বারি মটরশুটি-১, বারি মটরশুঁটি-২, বারি মটরশুঁটি-৩, ইপসা মটরশুটি-১, ইপসা মটরশুটি-২, ইপসা মটরশুটি-৩ প্রভৃতি মটরশুঁটির জাতগুলিরও চাহিদা কৃষসমাজে ভালোই রয়েছে
জমি তৈরি পদ্ধতি (Land Preparation)
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারীর এই চারটে মাস মটরশুঁটি চাষের অনুকূল সময় বলে ধরা হয়। তবে চাষিভাইদের মতে মটরশুঁটির বীজ পোঁতার সবচাইতে ভালো সময় হল নভেম্বর মাস । অক্টোবর মাসে বীজ বোনা গেলেও অধিক বৃষ্টি হওয়ার জন্য এই সময়টায় চাষের জন্য জমি তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে। চারা অবস্থায় মটরশুঁটি গাছ দুর্বল থাকার জন্য জমি যত্নসহকারে তৈরি করে ৪/৫টি চাষ সাথে মই দেওয়া উচিত।
সারি দিয়ে মটরশুঁটির বীজ পোঁতা ভালো। জমি তৈরি করে ৪০ সেমি দূরত্বে সারি করে ২০ সেমি পর পর বীজ পোঁতা হলে ফলন ভালো হয়। জোড়া সারি পদ্ধতি মটরশুঁটি চাষের সবচেয়ে ভালো উপায়। হেক্টর প্রতি প্রায় ৬০-৭০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয় মটরশুঁটি চাষের জন্য।
মটরশুঁটির ক্ষেত পরিচর্যা (Caring)
মটরশুঁটি চাষের জন্য প্রতি শতাংশ জমি অনুযায়ী ৪০ কেজি গোবর সার, ৬০০ গ্রাম টিএসপি, ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া সারের প্রয়োগ দরকার পড়ে। ইউরিয়া ও টিএসপি বাকি জমি চাষের সময় ও বাকি অর্ধেক দু' কিস্তিতে পরে দিলেই হবে। একদম শেষ চাষের সময়, সার দেওয়ার কম করে ৭-১০ দিন বাদে মটরের বীজ বপন করা উচিত।
সেচকার্য ও জল নিষ্কাশন (Irrigation)
মটরশুঁটির জমিতে শুখা মৌসুমে ২ থেকে ৩ টি সেচ দিতে হবে, এরফলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। ফল ধরার পর কমকরে একবার সেচ দেওয়া উচিত। ভালো ফসল পাওয়ার জন্য অবশ্যই বাউনি দিতে হবে। সারি অনুযায়ী খুঁটি পুঁতে সুতলি দেওয়ার মাধ্যমে বাউনি দিতে হয়। জমিতে যাতে কোনওরকম ভাবেই জল না দাঁড়ায়, সেজন্য জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: Tilapia Fish Farming: জেনে নিন তেলাপিয়া মাছ চাষের কৌশল
আগাছা দূর করার পদ্ধতি (Weed management)
সময় নিয়ে জমির অতিরিক্ত আগাছা উপড়ে ফেলে নিড়ানি দিলে মটরশুঁটির ফলন ভালো হয়। নিড়ানির মাধ্যমে সারির দু' দিকের আগাছা সাফের মধ্যে দিয়ে জমিকে আগাছা মুক্ত করে দেওয়া ভালো। অল্প অল্প করে কোপ দিয়ে সারির মাঝের আগাছা সরিয়ে ফেলতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগ দমন (Pest and Disease Control)
অ্যানথ্রাকনোজ, ড্যাম্পিং অফ, রাস্ট, পাউডারি মিলিডিউ ইত্যাদির মতন রোগ মটরশুঁটিতে বেশিরভাগ সময় আক্রমণ করে। এই রোগগুলি চারা থাকাকালীনই আক্রমন করে বসে। ডাইথেন এম-৪৫ (২ গ্রাম/লিটার) কীটনাশকের প্রয়োগে এই রোগগুলিকে শেষ করা যায়। এক লিটার জলে রিডোমিল এম. জেড, ২ গ্রাম মিশিয়ে খেতে ভালো করে স্প্রে করে দিলে এই বিপদগুলির থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ফসল ক্ষতির অন্যতম কারণ কাটুই পোকাও বটে। ভোরের দিকে কেটে ফেলা চারাগুলির গোড়ার চারধার থেকে পোকা খুঁজে মেরে ফেললে এই পোকার আক্রমণ থেকে মটরশুঁটির খেতকে বাঁচানো যায়।
মটরশুঁটি বীজ পোঁতা হয়ে যাওয়ার এক থেকে দেড় মাসের মাথায় গাছে ফুল ধরে। ফুল আসার ২০-২৫ দিন পর বীজের জন্য শুটি সংগ্রহ করে নেওয়া ভালো। পূর্ণ আকার পাওয়া বীজ কিন্তু একটুও শক্ত নয়, এই অবস্থায় শুঁটি বা ফল সংগ্রহ করার ঠিক সময় বলে চাষিভাইরা মনে করেন।
আরও পড়ুন: Commercial Grain Cultivation: জেনে নিন বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যিক শস্য চাষের গুরুত্ব