কৃষিজাগরন ডেস্কঃ ভারতে সিসল জমির পরিমান সঠিকভাবে নিরূপন করা মুসকিল। তবে বেশ কিছু বছর আগে প্রকাশিত সিসলের জরিপ সম্মন্ধীয় একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ভারতে সিসলের মোট জমির পরিমান মাত্র ৪৩৩১ হেক্টর। যার মধ্যে বেশির ভাগটাই ওড়িশাতে (২১৯৭ হেক্টর), এছাড়াও মহারাষ্ট্রে (৭২৬ হেক্টর), অন্ধ্রপ্রদেশে (৬৩২ হেক্টর), পশ্চিমবঙ্গে (৪১৬ হেক্টর), ঝাড়খন্ডে (৩৩৩ হেক্টর) ও মধ্যপ্রদেশে (২৭ হেক্টর) সিসল চাষ হয়। ভারতে সিসল মূখ্য ফসল হিসাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে সংগঠিত ভাবে চাষ করা হয় না। বরং আদিবাসী মানুষেরা বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছুটা তাদের ব্যবহার্য তন্তুর জন্য, কখনো মূল ফসলের জমির চারধারের বেড়া হিসাবে (সিসলের পাতায় কাঁটা থাকায়) লাগান। তবে গত কয়েক দশক ধরে সিসল বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি এবং অসরকারি সস্থার উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। তা স্বত্বেও বিভিন্ন কারণে ভারতে সিসলের মোট জমির পরিমান মাত্র ২২০০ থেকে ২৮০০ হেক্টরের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং এর থেকে তত্ত্ব উৎপাদন ১৪৩০-১৮২০ টনের কাছাকাছি হয়।
ভারতে সিসলের উন্নয়ণের কিছু উদ্যোগ
কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যসরকারগুলি, অসরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি তাদের নিজ নিজ এক্তিয়ার ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী সিসলের উন্নয়ণের চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিভাগের অধীনস্ত সংস্থা - ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, উড়িষ্যার সম্বলপুরে ১৯৬২ সাল থেকে সিসল
আরও পড়ুনঃ নীতি এবং নিয়ন্ত্রক ল্যান্ডস্কেপ মধ্যে পুনর্নবীকরণ
গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে সিসল বিষয়ে গবেষণা, উন্নয়ণ ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত আছে। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের উপজাতি উপ-পরিকল্পনার STribal Sub PlanV আর্থানুকুল্যে এবং সিসল গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে -ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ছত্রিশগড়, অঅন্ধ্রপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যে সিসলের প্রসারের চেষ্টা করছে। বর্তমান লেখক গত চার বছরের (২০০৮-২০১২) বেশি সময় ধরে ওড়িশার ঐ সিসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান হিসাবে সিসল গবেষণা ও প্রসারের কাজে নিযুক্ত থেকে মালভূমি অঞ্চলের অনেক জায়গাতেই আদিবাসীদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছেন এবং তার ফলে সিসলের জমির পরিমান বেড়েছে। ওড়িশার রাজ্যসরকারও তাদের মৃত্তিকা সংরক্ষণ বিভাগের মাধ্যমে প্রধানত মাটি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সিসল চাষ/ রোপণ, প্রতিপালন করে। উড়িষ্যাতে এই সরকারি বিভাগের বেশ কয়েকটি সিসল খামার আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- নীলডুংরি, বেলডুংরি, বড়গাঁও, ইতমা, সুন্দরগড়, রাজগাঙ্গপুরের খামারগুলি।
আরও পড়ুনঃ উত্তর-পূর্ব FPO-এর অগ্রাধিকার চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন
পশ্চিমবঙ্গের লাল (ল্যাটেরাইট) মাটির অঞ্চলে যেমন বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে সিসল বিষয়ে সরকারি স্তরে কিছু চেষ্টা হয়েছে। বীরভূমের রাজনগর সিসল ফার্ম, কেলেঘাই সিসল গবেষণা কেন্দ্র, পশ্চিম মেদিনীপুরের আবাস সিসল ফার্ম সেই চেষ্টার নিদর্শন। তবে বিভিন্ন কারণে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের এই সিসল খামারগুলি সক্রিয় অবস্থায় নেই বললেই চলে। ছত্রিশগড় সরকারের বন উন্নয়ণ পর্ষদ- সিসল চাষ ও ব্যবহারের মাধ্যমে আদিবাসীদের কর্মসংস্থান ও আর্থিক উন্নয়ণের চেষ্টা করছে। এই রাজ্যের বাস্তার ও রাজনন্দগাঁও জেলায় সিসাল চাষ শুরু হয়েছে এবং সিসল চাষিরা সমবায়ের মাধ্যমে এই সিসলের উৎপাদন ও বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করেন। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে বেশকিছু বেসরকারি সংস্থা বা ব্যাক্তি সিসল চাষের মাধ্যমে মুনাফা করতেন। তবে স্বাধীনতার পরে এবং ঐ ব্যাক্তিদের নিজস্ব কারণে সিসল চাষে ভাটা পড়ে। তবে ইদানিং আবার কিছু অসরকারি সংস্থা সিসল চাষে উৎসাহ দিচ্ছেন। যেমন ওড়িশার কোরাপুট সিসল বিকাশ পরিষদ কোরাপুট, কাকিরগুমা, নন্দপুর, মুচকুন্দ ইত্যাদি অঞ্চলে সিসল চাষ করে সাফল্য পেয়েছে। জব্বলপুর জেলার কিছু অসরকারি সংস্থা তাদের চাযি সদস্যদের সিসল চাষের প্রশিক্ষণ এবং সিসলের উন্নত গুনমানের চারাও বিতরণ করেছে। আশার কথা যে দিল্লীতে একটি সিসলজাত সামগ্রীর উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য বেসরকারি সংস্থা তৈরী হয়েছে। তবে এই বিচ্ছিন্ন অথচ সাধু প্রচেষ্টাগুলিও ভারতের মতো বিশাল দেশের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই এখনো ভারতের সিসলের মোট চাহিদার বেশিরভাগটাই আমদানি করতে হয়।