সমস্ত গাছেই ঔষধি গুণ বর্তমান, শুধুমাত্র তার সঠিক প্রয়োগ জানা দরকার, নতুবা হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে অ্যান্টিবায়োটিক -এর ক্ষেত্রে যেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, ঔষধি গাছের ক্ষেত্রে তার কোন ভয় নেই। শুধু ঠিক রোগে ঠিক গাছপালা ব্যবহার করতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা জানব গবাদিপশুর কোন রোগে কোন উদ্ভিদ/লতাপাতা কীভাবে ব্যবহার করলে উপকার হবে। গ্রামবাংলায় আমরা যেসব গাছপালা দেখি, তার সাহায্যেই গবাদিপশুর অধিকাংশ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশেষত যদি আশেপাশে প্রাণী চিকিৎসক উপস্থিত না থাকেন, তবে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা যায়।
বন্ধ্যাত্ব (Infertility) –
ডাক না আসা একটা খুব বড় সমস্যা। এর সমাধানের জন্য প্রতিদিন সকালে ২০০ গ্রাম করে অঙ্কুরিত ছোলা পনেরো দিন খাওয়াতে হবে। এরপর যখন গরু গরম হবে, তখন ১০০ মিলি. নিমতেল খাইয়ে, তারপর কৃত্রিম প্রজনন (AI) করানোর পর টানা এক সপ্তাহ ধরে একমুঠো কারিপাতা খাওয়াতে হবে।
ডাক না রাখা (Breeding) –
গরুর ডাক না আসা যেমন একটি সমস্যা, তেমনি সমস্যা ডাক না রাখতে পারা। এর সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় –
১) কৃত্রিম প্রজননের পর প্রতিদিন দুমুঠো কারিপাতা খাওয়াতে হবে একটানা দশ দিন।
২) ২০০ গ্রাম করে লজ্জাবতী গাছ নিয়ে পাচন তৈরী করে তিনদিন খাওয়াতে হবে।
ফুল না পড়া –
অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চা হওয়ার পরেও গরুর ফুল (placenta) আটকে থাকে। এর সমাধানের জন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় –
১) এক কেজি লজ্জাবতী পাতা দিনে একবার করে দুদিন খাওয়াতে হবে।
২) একমুঠো বেলের পাতা, ৬ টি রসুনের কোয়া, দশটা গোলমরিচ ও ২ টি পেঁয়াজ নিয়ে ভালো করে পিষে একটু দুধের সাথে মিশিয়ে দিনে একবার করে খাওয়াতে হবে।
চর্মরোগ –
১) যে কোন চর্ম রোগের জন্য নিম এক অব্যর্থ ওষুধ, শুধু সঠিক প্রয়োগবিধি জানা দরকার। চর্মরোগ সারাতে নিমের ছাল, পাতা ফুল একসাথে পিষে মণ্ড তৈরী করতে হবে। তারপর সেটা আক্রান্ত অংশে দিনে তিনবার লাগাতে হবে। এছাড়া নিমফল বেঁটে রস বের করে সেটি দিনে দু’-তিনবার লাগালেও কাজ হবে।
২) আমরা বলি বেগুনের কোন গুণ নেই। কিন্তু বেগুনের অনেক গুণ, সেটা ক্রমশঃ প্রকাশ্য। চর্মরোগ নির্মুল করতে বেগুনের সাথে জোয়ারের গুঁড়ো মিশিয়ে আক্রান্ত অংশে লাগাতে হবে।
আরও পড়ুন - পশুপালন খাত উন্নত করতে সরকারের ৫০০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রচলন
পরিশেষে একটি কথা বলা দরকার, এখানে যেসব পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, সেগুলি সবই দেশীয় ও সাবেকি পদ্ধতি। তবে এসমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করেও যদি গবাদিপশুর রোগ না সারে, তাহলে দেরী না করে অবশ্যই কোন প্রাণী চিকিৎসক এর সাথে যোগাযোগ করবেন। সবার কাছে একটি বিশেষ অনুরোধ, প্রাণী চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বা কোন অ্যালাপথি ঔষধ ব্যবহার করবেন না, তাতে হিতে বিপরীত হবে।
আরও পড়ুন - রাজ্যের বেকার যুবকদের কম মূলধন বিনয়োগ করে অধিক লাভজনক মাছ চাষের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন