স্বপরাগযোগী সবজির ক্ষেত্রে – এসব ক্ষেত্রে ফুলের গঠনের জন্য স্বপরাগযোগ নিশ্চিত থাকে ফলে চাষীদের বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয় না। টমাটো, বরবটি, সিম ইত্যাদই সবজির ক্ষেত্রে পরিণত ফলের বীজ সংগ্রহ করলে ঐ স্ত্রী গাছের মতই গাছ পাওয়া যায়। তবে সবজির রকমভেদ অনুযায়ী বীজ উৎপাদনের জন্য ফসলের অন্য একই ধরণের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বা অন্তরন দূরত্ব (সাধারন ক্ষেত্রে ১০০ মিটার) রাখতে হবে। এতে মিশ্রণ ও অন্যান্য পরাগযোগের সম্ভাবনা থাকবে না।
ভালোভাবে নিজের সবজির বীজ নিজেই রাখতে হলে নির্দিষ্ট কতগুলি ধাপ অনুসরণ করে এগোতে হবে, যেগুলি নিচে দেওয়া হল (Vegetable Seed Process) –
-
উন্নত ও বেশী ফলনযুক্ত মা গাছ নির্বাচন – যে সবজি ফসলের যে জাতের বীজ রাখার কথা চাষি ভাই /বোন ভাববেন তার ২/৪ টি খেপের ফলন তোলার পর রোগমুক্ত, বেশী ফলদায়ী, বেশী বাড়-বৃদ্ধির সমন্বিত মাঠের মধ্যে থেকে নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে, আলের ধারের বা সীমানার দিকের গাছ না বেছে মাঠের ভিতর ভালো পর্যবেক্ষণ করে বেশ কয়েকটি গাছ বাছতে হবে। যে পরিমান বীজ রাখবেন সেই অনুযায়ী গাছ বাছা উচিত, তবে কোন মতেই রোগাক্রান্ত, অপুষ্ট গাছ বাছা চলবে না।
-
এবার নির্বাচিত গাছগুলিকে কোন ট্যাগ / দড়ি বা কিছু দিয়ে চিহ্ন দিতে হবে।
-
নির্বাচিত গাছগুলির ফল সব তুলে ভালো করে সার জল দিয়ে পরিচর্যা করতে হবে, যাতে ঐ গাছগুলিতে প্রভূত ফুল আসে।
-
আশেপাশের গাছ / লতা (কুমড়ো জাতীয় সবজির ক্ষেত্রে) কিছুটা সরিয়ে, প্রয়োজনে তুলে দিতে হবে।
নিশ্চিন্ত স্বপরাগযোগ –
এবারকার গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হল নির্বাচিত ‘মা’ গাছগুলিরই স্বপরাগযোগ নিশ্চিন্ত করা। স্বপরাগযোগী সবজিতে (টমাটো, বীন, সিম, বরবটি) আপনাআপনি স্বপরাগযোগ ঘটার ফলে চাষি ভাই/ বোনকে নিজে থেকে কিছু করতে হবে না। নির্বাচিত ‘মা’ গাছের ফুল থেকে যখন ফল হবে তার বীজ রাখলেই চলবে।
আরও পড়ুন - রাইজোবিয়াম সার প্রয়োগে মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ও ফসলের ফলন বৃদ্ধি (Rhizobium Fertilizer)
তবে ইতরপরাগযোগী সবজি যেমন সকল কুমড়ো সবজিতে নিচের মত ধাপ অবলম্বন করে স্বপরাগযোগ নিশ্চিত করতে হবে –
-
প্রথমে বাছাই গাছের সকল ফোটা ফুল/ ফলযুক্ত ফুল ফেলে আগামী দিনে ফুটবে এমন ফুলকে কাগজের প্যাকেট পরাতে হবে।
-
পরের দিন ঐ মা গাছেরই পুরুষ ফুল তুলে প্যাকেট খুলে স্ত্রী ফুলে রেণু লাগিয়ে দিতে হবে। পারলে যে পুরুষ ফুলটিকে দিয়ে পরাগযোগ করা হবে বলে ঠিক করা হয়েছে তাকেও স্ত্রীফুলের প্যাকেট পরাবার সময় আলাদা করে প্যাকেট পরিয়ে রাখতে হবে, যাতে ঐ পুরুষফুলের উপর অন্য কোন জাত/ অবাছাই গাছের রেণু না পড়ে থাকে।
-
কৃত্তিম পরাগযোগ নিশ্চিত করে আবার নিষিক্ত স্ত্রীফুলকে প্যাকেট পরিয়ে বোঁটায় কোন নির্দিষ্ট রঙের সুতো লাগিয়ে দিতে হবে ও আবার প্যাকেট পরিয়ে ২/৪ দিন রাখলে ফলের চিহ্ন পাওয়ামাত্রই প্যাকেট খুলে সুতো লাগানো ফলকে বাড়তে দিতে হবে।
-
ঐ ফলের বীজ নিষ্কাষণ করলে ‘মা’ গাছ বা বাছাই জাতের মতই আর বেশী ফলনযুক্ত গাছের বীজ পাওয়া যাবে।
-
কিছুটা স্ব ও ইতরপরাগযোগী সবজিতে (লংকা, বেগুন, ভেন্ডি) লংকার ক্ষেত্রে নির্বাচিত গাছগুলিকে পুরো ৪০ /৫০ মেশ মশারি দিয়ে ঢাকা দিতে হবে।
-
অন্যান্য সবজি যেমন বেগুন, ভেন্ডি ইত্যাদির ক্ষেত্রে ফোটা ফুল সব ফেলে আগামী দিন ফুটবে এমন ফুল নির্বাচন করে বিকেলে ট্যুইজার/ সন্না দিয়ে আফোটা পাপড়ি খুলে পুরুষ অংশ বাদ দিতে হবে।
আগামী দিন সকালের মধ্যে ঐ নির্বাচিত গাছেরই পুরুষ ফুলের রেণু দিয়ে প্যাকেট খুলে পরাগযোগ করে আবার প্যাকেট পরিয়ে দিতে হবে। আর সুতো দিয়ে ঐ স্বপরাগযোগ ঘটানো ফুলটিকে চিহ্নিত করতে হবে। ফল সামান্য নিশ্চিত হলেই প্যাকেট খুলে ফল পাকিয়ে বীজ রাখতে হবে।
আরও পড়ুন - কপি সবজির জন্য জৈব চাষ প্যাকেজ (Organic cultivation)