মাটি উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রধান উপাদান। একটি মজবুত পদ্ধতিতে মৃত্তিকা গঠন এবং উর্বরতার ব্যবস্থাপনা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় | উপযুক্ত মাটি না হলে অর্থাৎ ফসলের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ মাটি না হলে কাক্সিক্ষত ফসল পাওয়া যায় না। মাটি উর্বর হলেই ফসলের গুণমান বৃদ্ধি পাবে তেমনি ফসল উৎপাদনের হারও বৃদ্ধি পাবে | এই নিবন্ধে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য যে ব্যবস্থা (Soil fertility improvement methods) নেওয়া উচিত সেগুলি আলোচনা করা হলো,
১) সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ(Fertilizer):
ফসল পুষ্টির জন্য মাটি থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান গ্রহণ করে | বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসল আবাদের ফলে মাটির উর্বরতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। বিভিন্ন ফসল মাটি থেকে বিভিন্ন পরিমাণে পুষ্টি উপাদান ক্রমাগত গ্রহণ করতে থাকে। তাই ঘাটতি পূরণের জন্য জমিতে জৈব ও রাসায়নিক সারের সমন্বয়ে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা উচিত। জৈব সার প্রয়োগে মাটির উর্বরতা দ্বিগুন হরে বৃদ্ধি পেতে থাকে |
২) উপযুক্ত শস্য বিন্যাস অনুসরণ:
জমিতে প্রতি বছর একই ফসল বা একই ধরনের ফসলের চাষ করলে একটি নির্দিষ্ট স্তরের নির্দিষ্ট পুষ্টি, উপাদান নিঃশোষিত হয়ে উর্বরতা বিনষ্ট হয়। তাই পর্যায়ক্রমে গুচ্ছমূল জাতীয় ফসলের পর প্রধান মূলজাতীয় ফসল, একবীজপত্রীর পর দ্বিবীজপত্রীর ফসল এবং অধিক খাদ্য গ্রহণকারীর পর অল্প খাদ্য গ্রহণকারী ফসল আবাদ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মাটি, প্রভৃতি এবং ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে উপযুক্ত শস্য বিন্যাস অনুসরণ করতে হবে।
আরও পড়ুন -Seed Germination Process: বীজ অঙ্কুরোদগম পদ্ধতিগুলি কি কি?
৩) ভূমি ক্ষয় রোধ:
মাটির উপরিভাগ সাধারণত ৭"-৮" ইঞ্চি গভীরতা পর্যন্ত ফসলের পুষ্টি উপাদান থাকে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, জল প্রবাহ, বাতাসের গতিরোধ ইত্যাদি কারণে উপরিভাগের মাটি স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে সঞ্চিত পুষ্টি উপাদান বিনষ্ট হয়ে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। তাই বৃষ্টির জল গড়ানের সময় যাতে জমির উপরিভাগের মাটি অপসারিত না হয় এবং নালা ও খাদের সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৪) জৈব পদার্থ ব্যবহার:
মাটির ভৌতিক ও রাসায়নিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য জৈব পদার্থের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি উদ্ভিদের খাদ্যোপাদান সরবরাহ, মাটির অম্ল ও ক্ষারত্বের তারতম্য রক্ষা এবং রাসায়নিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। তাই জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গোবর সার, কম্পোস্ট, খামারজাত সার ইত্যাদি প্রয়োগ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত। সবুজ সার ও বিভিন্ন ফসলের অবশিষ্টাংশ মাটিতে মিশিয়ে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। আদর্শ মাটিতে কমপক্ষে ৫% জৈব পদার্থ থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুবই কম। সুতরাং যত বেশি পারা যায় জমিতে জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।
৫) ডালজাতীয় ফসলের চাষ:
বিভিন্ন ধরনের ফসল মাটি থেকে অধিক পরিমাণ নাইট্রোজেন গ্রহণ করে। ফলে মাটিতে বেশি পরিমানে নাইট্রোজেনের অভাব দেখা দেয়। জমিতে মাঝে মধ্যে ডাল জাতীয় ফসলের চাষ করে এ ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করা যায়। কারণ এগুলো শিকড়ের শুঁটিতে রাইজোবিয়াম নামক ব্যাকটোরিয়া বসবাস করে এবং বায়ু থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে গুটিতে সঞ্চয় করে | ফলস্বরূপ, মাটিতে নাইট্রোজেন বেড়ে মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
৬) সেচ:
প্রয়োজনীয় সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে মাটির উর্বরতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই জমিতে পরিমিত সেচ দিতে হবে ও অতিরিক্ত জল দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।
৭) মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ:
মাটির অম্লত্ব ও ক্ষরত্ব অতিরিক্ত বেড়ে গেলে উর্বরতা হ্রাস পায় এবং ওই অবস্থায় অনেক খাদ্যোপাদানে ফসলের গ্রহণ উপযোগী হয় না। তাই প্রয়োজনে জৈবসার প্রয়োগে অম্লত্ব ক্ষারত্ব কমাতে হবে।
৮) জমিকে বিশ্রাম দিতে হবে:
দীর্ঘদিন ধরে কোনোরূপ বিশ্রাম ছাড়া নিবিড় চাষাবাদ করা হলে মাটির ভৌত রাসায়নিক ও জৈব গুণাবলির অবনতি ঘটে। তাই কয়েক বছর পর অন্তত এক মৌসুমের জন্য জমি পতিত রেখে বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন। অবশ্য এ সময়ে জমিতে সবুজ সারের চাষ বা নিয়মিত পশু চারণের ব্যবস্থা করলে ভূমির উর্বরতা আরও বৃদ্ধি পায়।
৯) আগাছা দমন:
আগাছা মাটি থেকে খাবার গ্রহণ করে ভূমির উর্বরতা নষ্ট করে ও শস্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই জমিতে কখনও আগাছা বাড়তে দেওয়া উচিত নয় এবং চাষের জমি পরিষ্কার রাখা উচিত |
১০) মাটির জীবাণু সংরক্ষণ:
মাটিতে অসংখ্য হিতকর জীবাণু থাকে এবং এরা ফসফরাস, লৌহ প্রভৃতি অদ্রবণীয় পদার্থসমূহকে জলে দ্রবণীয় পদার্থে রূপান্তর করে | এবং বায়ু থেকে মাটিতে নাইট্রোজেন সংযুক্ত করে ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। তাই মাটিকে এমনভাবে পরিচর্যা করা দরকার যেন মৃত্তিকা জীবাণুসমূহের বসবাসের পরিবেশ ঠিক থাকে |
আরও পড়ুন -Biofloc Fish Farming: বায়োফ্লক পদ্ধতিতে কিভাবে মাছ চাষ করবেন? জেনে নিন পদ্ধতি