আঙ্গুরের ইতিহাস
আজ থেকে প্রায় ৬,০০০-৪,০০০ বছর আগে পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলের দিকে আঙ্গুরের চাষ শুরু হয়। ৪,০০০ বছর আগে জর্জিয়ায় ওয়াইন তৈরির প্রমাণ খুব ভালোভাবে পাওয়া গেছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় যে, ১৩০০ শতাব্দীতে পার্শিয়ানরা ভারতীয় উপ-মহাদেশে প্রথম আঙ্গুর চাষ প্রবর্তন শুরু করেন,যা পরবর্তীতে ভারতের দক্ষিনাঞ্চলে বিস্তার আকার লাভ করে। ভারতের দক্ষিনাঞ্চলের উঞ্চ আবহাওয়ায় সফলভাবে আঙ্গুরের চাষ হয়ে থাকে।
আঙুর (Vitis vinifera) এক প্রকারের ফল যা লতা জাতীয় দ্রাক্ষালতা (Grape Fruit গাছ থেকে পাওয়া যায়। আঙুর একটি অতীব পরিচিত ফল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। এটা একটা বহুবর্ষজীবি বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ যা সুস্বাদু রসালো ফল দিয়ে থাকে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন৷ এটি যেমন ফল হিসেবে খাওয়া হয় তেমনি এটা হতে জ্যাম, জেলি, ভিনেগার, জুস ও বীজ হতে তেল তৈরি করা যায়। কিন্তু আমদের দেশে এই আঙুরের তেমন চাষ হয় না। তবে বর্তমানে বেশ কিছু যায়গায় আঙুরের চাষ করা হচ্ছে।
প্রবাদ আছে আঙ্গুর ফল টক। আর এ কথাটি আমাদের জন্য বেশ কার্যকর এ কারণে যে এই ফলটি আমরা এদ্দিন ফলাতে পরিনি। পুরোটাই আমদানী করে যেতে হয়। উচ্চমূল্যের কারণে বরাবরই সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বইরে থাকে। কখনও কেউ অসুস্থ হলে কিংবা কালেভ্রদ্রে সাধারণ পরিবারে আঙ্গুর খাওয়া হয়। কিন্তু আমদের মাটি ও জলবায়ু আঙ্গুর চাষের জন্য উপযোগী, এটা সমপ্রতি প্রমাণিত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃলাউ চাষে এখন বাম্পার ফলন হবে, চাষিদের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে
আঙ্গুর চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন
দো-আঁশযুক্ত লালমাটি, জৈবিক সার সমৃদ্ধ কাঁকর জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক মাটিতে আঙ্গুর চাষ ভাল হয়। জমি অবশ্যই উঁচু হতে হবে যেখানে জল দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যের আলো পড়বে এমন জায়গা আঙ্গুর চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
টবের আকৃতি বাছাই
আঙুর একটি অতিলতানো গাছের ফল। সাধারণত আঙুর চাষের জন্য আপনি ছোট টব বা পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি মাঝারি সাইজের টব বা বড় বোতল বা অন্য কোন পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বাড়ির উঠোনে বা আঙ্গিনায় মাচা করে এই আঙুরের চাষ করতে পারেন।
বপন পদ্ধতি
Root cutting পদ্ধতি ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে করা হয়। Knifing method এর জন্য ৩*৩ মিটার দূরত্ব এবং arbor method এর জন্য ৫*৩ মিটার দূরত্বে বপন করতে হবে এবং এগুলো ১ মিটার গভীরে বপন করতে হবে।
আঙুরের জাত বাছাই করা
আমাদের দেশে সাধারণত আঙুর চাষ খুব কম হয়। কিন্তু যা চাষ হয় তাঁর মধ্যে জাককাউ, ব্ল্যাক রুবী ওব্ল্যাক পার্ল অন্যতম। এগুলোই আমাদের দেশের জন্য ভাল জাতের আঙুর।
আরও পড়ুনঃজিরা চাষ: আপনি যদি প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে চান, তাহলে জিরা চাষ করতে ভুলবেন না।
বীজ বপন ও জল সেচ
আঙুর লাগানোর ক্ষেত্রে আপনাকে সর্বপ্রথম চারা সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ নার্সারীতে যোগাযোগ করতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে যেখানে প্রচুর সূর্যের আলো পড়ে এমন যায়গায় আঙুর চারা লাগাতে হবে। এরপর আঙুর চারা গোড়ার মাটির বলসহ গর্তে রোপন করতে হবে। চারা লাগানোর পর একটি কাঠি গেড়ে গাছকে বেঁধে দিতে হবে এবং হালকা পানি সেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগ
রোপণের ১ মাসের মধ্যে বাড়বাড়তি না হ’লে গোড়ার মাটি আলগা করে তাতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা দরকার। ১-৩ বছরের প্রতিটি গাছে বছরে ১০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম পটাশ, ৫০০ গ্রাম ফসফেট এবং ১০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ সার ব্যবহারে আঙ্গুর মিষ্টি হয় এবং রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম হয়। বয়স্ক গাছের জন্য প্রতি বছর এপ্রিল মাসে দুই কেজি তেলের খৈল, এক কেজি হাড় চূর্ণ এবং এক পোয়া সালফেট অব পটাশ ব্যবহার করা যায়।
গাছের কান্ড ছাঁটাই
রোপণের পরবর্তী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মাচায় ছড়িয়ে থাকা আঙ্গুর গাছের কান্ড ছেঁটে দিতে হবে। কান্ড ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে আঙ্গুর গাছের ফলন বৃদ্ধি হয় এবং ফুল ঝরে পড়া কমে যায়। ছাঁটাইয়ের ৭ দিন আগে এবং পরে গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হয়। গাছ রোপণের পর মাচায় ওঠা পর্যন্ত প্রধান কাণ্ড ছাড়া অন্য সকল পার্শ্বের শাখা ভেঙ্গে ফেলতে হবে।
পোকামাকড় দমন ও কীটনাশক
আঙুর গাছে সাধারণত পিঁপড়া ও বিভিন্ন ধরণের পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। এসব পিঁপড়া ও পোকামাকড়ের হাত থেকে আঙুর গাছ কে রক্ষ করতে হলে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করে দিতে হবে।
সংগ্রহ
আঙুর ফল মূলত যখন ফল পরিপক্কভাবে পাকে তখনই ফল সংগ্রহ করতে হয়। তবে এপ্রিল-মে মাসে ফুল দেখা দেয় এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পুরোপুরি ভাবে আঙুর ফল পাকে। সাধারণত গ্রীষ্মকালে আঙুর ফল সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন আঙুর ফল পাকতে পাকতে বর্ষাকাল না চলে আসে। কারণ বর্ষা চলে এলে ফল মিষ্টি হয় না।