কৃষিজাগরন ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গে তৈলবীজ উৎপাদনকারী শস্যগুলির মধ্যে সরিষা অন্যতম। অন্নান্য ফসলের মতো সরিষাতেও প্রধান কয়েকটি রোগ দেখা যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাতা ধ্বসা, শিকড় ফোলা, সাদা মরচে, ডাউনি মিলডিউ, পাউডার রোগ, কাণ্ড পচা প্রভৃতি। এরমধ্যে প্রধান রোগ হলো ধ্বসা রোগ। যার ফলে সরষের ফলন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। সময়মতো জমি পরিদর্শন করে আগাম প্রতিকার ব্যবস্থা নিলে অধিকাংশ রোগ দমন করা সম্ভব। নিচে বিভিন্ন প্রকার রোগ, তার লক্ষণ ও তার প্রতিকার ব্যবস্থা সম্বন্ধে আলোচনা করা হল।
সাদা মরচে (White rust)
ঠাণ্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ধ্বসা রোগ আক্রমণের পরে পরে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। প্রথমে নিচের দিকের পাতার নীচে সাদাটে হলুদ সামান্য উঁচু ছত্রাক পুসটুল দেখা যায়। পরে একটার সঙ্গে অন্য একটা দাগ মিশে গিয়ে পাতায় পচন ধরে। এই দাগ কাণ্ড ও পুষ্পস্তবকে দেখা যায়। ফুল বিকৃত হয় এবং বন্ধ্যা হয়। ফুলের মঞ্জরি অংশে পাতার মতো বৃদ্ধি দেখা যায়। ফুলের পাপড়ি সবুজ ও পুংদন্ড সবুজ গদার মতো হয়। শিকড় ছাড়া গাছের সমস্ত অংশ আক্রান্ত হয়।
আরও পড়ুনঃ ফসলের জন্য ক্ষতিকর ,ভুল করেও এই গাছ মাঠে লাগাবেন না
প্রতিকার
(১) জলদি বীজ বোনা, ফসলে অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলা প্রয়োজন।
(২) প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ৪ গ্রাম মেটাল্যাক্সিল ৩৫% মিশিয়ে বীজ শোধন করা হয়।
(৩) আক্রান্ত গাছে প্রতি লিটার জলে ২.৫ গ্রাম মেটাল্যাক্সিল + ম্যানকোজেব গুলে স্প্রে করা হয়।
ডাউনি মিলডিউ (Downy mildew):
মাটির উপরে গাছের সকল অংশে এই রোগের লক্ষণ দেখা গেলেও মূলত পাতা ও পুস্পমঞ্জরী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঐ দাগের বিপরীতে পাতার নিচের দিকে সাদা ছত্রাকের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। প্রকট আক্রমণে পুস্পমঞ্জরী বিকৃত হয়। পাকানো এবং সাদা পাউডারে ছেয়ে যায়। আক্রান্ত পুস্পমঞ্জরীতে কোন শুঁটি ধরে না। পাতা আক্রান্ত হলে সেই গাছে ফুল আসতে চায় না বা আসলেও শুঁটি তেমন ধরে না। শুঁটি অপুষ্ট দানা হয়। ঠাণ্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় রাই সর্ষে তে এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়। ফসলের অবশিষ্টাংশ ও আগাছার মধ্যে রোগ জীবাণু আশ্রয় নেয়।
প্রতিকার
(১) প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি মিশিয়ে বীজ শোধন কত্রা হয়।
(২) আক্রান্ত অংশে প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড বা ২.৫ গ্রাম মেটাল্যাক্সিল + ম্যানকোজেব গুলে স্প্রে করা হয়।
পাউডার রোগ (Powdery mildew):
প্রথমে গাছের গোড়ার দিকে পাতার ওপর সাদা পাউডারের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায় এবং পাতার সবুজ অংশ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সাদা পাউডার আবৃত দাগগুলি আয়তনে বাড়ে এবং পাতায় নিচের দিকেও সাদা পাউডার দেখা যায়। প্রকট আক্রমণে পাতার দু পাশ সাদা পাউডারে সম্পূর্ণ ঢেকে যায়। তারপর পাতা হলুদ হয়ে অকালে ঝরে পড়ে। গাছের সালোকসংশ্লেষ ব্যাহত হয় এবং বৃদ্ধিও কমে যায়।
আরও পড়ুনঃ সরিষার দুটি মারাত্মক রোগ ও তার প্রতিকার
আক্রান্ত গাছ তাড়াতাড়ি পেকে যায় এবং ফলন কম হয়। ঘন করে লাগানো গাছে আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত স্থানে সহজে এ রোগ ধরে।
প্রতিকার
(১) প্রতিরোধী জাতের চাষ।
(২) ক্ষেতে গাছের দূরত্ব যথাযথ রাখা দরকার।
(৩) আক্রান্ত গাছে ১৫ দিন অন্তর দু বার থায়োফেনেট মিথাইল (১ গ্রাম/ লি. জলে) বা কার্বেন্ডাজিম (১ গ্রাম/ লি. জলে) গুলে স্প্রে করা হয়।