রান্নাতে টমেটো না দিলে যেন রান্নার স্বাদ জমে না। ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি গুণে ভরা এই ফসল শীতকালে সবথেকে বেশি পরিমাণে চাষ হয়। টমেটোর মধ্যে উপস্থিত বেটা কেরোটিন ভিটামিন চোখের দৃষ্টি উন্নত করে। এছাড়াও টমেটোয় উপস্থিত শর্করা, খনিজ এবং অন্যান্য দরকারি পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এক বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে। নিয়মিত টমেটো খেলে ক্যান্সারের মতন দুরারোগ্য ব্যাধি দূরে থাকে। টমেটোর মধ্যে থাকা লাইকোপেন নামের উপাদানটি পাকস্থলী, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়, প্রোস্টেট, মূত্রাশয়কে ক্যান্সারের থাবা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
বীজতলা তৈরি
টমেটো চাষ করতে গেলে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ উপযুক্ত সময়। এইসময়ের মধ্যে টমেটোর বীজতলা বানানো উচিত।
টমেটো চাষ পদ্ধতি (Tomato Farming)
বেলে দোঁ-আশ মাটি টমেটো চাষের জন্য একদম উপযুক্ত মাটি। এছাড়াও সব ধরনের মাটিতেই টমেটো চাষ করা যায়। কার্তিকের শেষ সপ্তাহ থেকে অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ টমেটো চারা লাগানোর সঠিক সময়। টমেটোর চারা লাগানো হয়ে গেলেই জলের ব্যবস্থা করতে হবে। নজরে রাখা উচিত সারি থেকে সারির দূরত্ব কম করে যাতে ৫০ সেমি এবং চারা হতে চারার দূরত্ব হবে কম করে যাতে ৫০ সেমি হয়।
টমেটো চাষের জমি এবং সার (Land preparation and Fertilizer)
টমেটো চাষ করতে গেলে জমিতে তিন চারটি চাষ ও মই দিতে হবে। নির্ধারিত পরিমাণ গোবর সারের অর্ধেক এবং পুরো টিএসপি সার ছিটিয়ে দিয়ে আগের মতন চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি, শেষ চাষের আগে করতে হবে। বাকি থাকা গোবর চারা লাগানো যখন হবে তখন মাটির গোড়ায় দিয়ে দিতে হবে। সমান ভাবে ভাগ করে নিয়ে ইউরিয়া ও পটাশ চারা লাগানোর ১৫ এবং ৩৫দিন পর দিতে হবে।
সেচ (Irrigation)
টমেটো চাষ শুখা আবহাওয়ায় হলে জল সেচ দেওয়া দরকার। মাটি ও ফসল বুঝে নিয়ে মোট বার তিনেক সেচ দেওয়া গেলে ভালো।
জমির সঠিক পরিচর্যা: (Land Care)
টমেটো গাছে হালকা ভাবে জল ছিটিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় চারা লাগানোর পর আগাছা দেখা দেয়। এইসময় হাল্কাভাবে আগাছাগুলো উঠিয়ে জমি সাফসুতরো করে দিতে হবে। টমেটো গাছে ভালো ফলন পেতে বাঁশের ঠেকনা দেওয়া দরকার। টমেটো গাছে যাতে ঝোপালো না হয়ে ওঠে, তারজন্য অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে দেওয়া উচিত। সার দেওয়ার দুই কিস্তির সময় পার্শ্বকুশি ছাঁটাই করতে হবে। পার্শ্বকুশি ছেটে দিলে পোকামাকড় বা রোগের হানা কমে যায়। এর ফলে টমেটো গাছে ফলনও ভালো হয়। সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে জমি আগাছামুক্ত থাকে।
আরও পড়ুন: Betel cultivation in shade net: শেড নেট পদ্ধতিতে পান চাষে বিঘা প্রতি ব্যাপক আয়ের সুযোগ
পোকামাকড় ও রোগ দমন (Pest control)
ফল ছিদ্রকারী পোকা টমেটো চাষ করার সময় গাছে আক্রমণ করে। এই পোকার থেকে ফলন বাঁচানোর জন্য সবিক্রন ৪২৫ ইসি জলে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করে দেওয়া উচিত। কৃমি রোগ, গোড়া পচা রোগও টমেটো চাষের অন্যতম অন্তরায়। এর থেকে গাছকে বাঁচানোর জন্য জমিতে ছাড়া বসানোর আগে ফুরাডন-৩ জি দিয়ে মাটি শোধন করে নেওয়া ভালো। এর ফলে গাছে পোকার আক্রমণ ঘটে না।
ফসল তোলা (Harvest)
টমেটো চারা লাগানো হয়ে গেলে ৬০ থেকে ৯০ দিনের মাথায় টমেটো পেকে ওঠে। এরপরই সেই টমেটো ক্ষেত্রে থেকে সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়ে পড়ে। টমেটো গাছ থেকে একাধিক বার টমেটো তোলা যায়। টমেটোর নিচের দিক লাল বর্ণ হয়ে উঠলে তা তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:Amarnth Cultivation Process: ডাটা শাক চাষের পদ্ধতি