ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষি। যদিও মোট অভ্যন্তীরণ উৎপাদনের (GDP) ২০ শতাংশ আসে কৃষি ও তার অনুসারী উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে, কিন্তু ৭০ শতাংশ ভারতবাসী কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। ৬ লক্ষের বেশি গ্রামে ১৬ কোটি হেক্টরের বেশি চাষযোগ্য জমিতে প্রায় ২৭.৫ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়। নিবন্ধের শুরুতেই, কৃষিজাগরণ সেই সকল মহিলা কৃষকদের (Women farmers) কুর্নিশ জানাচ্ছেন যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলাচ্ছেন |
কৃষিতে নারী:
ভারতে নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান। সেটা ভারতের কৃষি (Agriculture) অর্থনীতিতেও প্রযোজ্য। কিন্তু অনান্য ক্ষেত্রের মতো গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীদের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত থেকে যান। কৃষিক্ষেত্রে নারী শ্রমিকেরা পারিশ্রমিকে এবং বিনা পারিশ্রমিকে নিযুক্ত হয়ে থাকেন। চাষের কাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়ির মহিলারা নিযুক্ত থাকেন। বীজ বোনা, আগাছা তোলা যাকে নিড়ানি বলে, ফসল কাটা, ফসল ঝাড়াই এবং ফসল ঘরে তোলার সময় পুরুষদের পাশাপাশি নারীও পরিশ্রম করেন। তাঁদের এই সব কাজ বিনা মজুরিতেই করতে হয়। আবার এই সব কাজের জন্য মহিলাদের ভাড়াও করা হয়। এই মহিলা শ্রমিকেরা অন্য রাজ্য বা অন্য জেলা থেকে আসেন।
স্বামী, স্ত্রী দুজনেই চাষের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু দেখা গিয়েছে, নারী শ্রমিকদের মজুরি, পুরুষ শ্রমিকদের মজুরির তুলনায় কম। চাষের জমির মালিকানার দিকে নজর দিলেও বৈষম্যটা চোখে পড়ে। কিছু চাষের জমির মালিকানা (১৩ শতাংশ) মহিলাদের, তবে সেই জমির পরিমাণ বেশির ভাগই ছোট ও প্রান্তিক (২ হেক্টরের কম)। মহিলারা যখন চাষের পুরো প্রক্রিয়াটা দেখভাল করেন, তখনও তাঁদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। বীজ পাওয়ার ক্ষেত্রে, ঋণ পাওয়ার সময়ে, শ্রমিক ভাড়া করার সময়ে, সেচের ব্যবস্থা করতে গিয়ে এবং সর্বোপরি ফসল বিক্রি করার জন্য বাজারের সংস্থান করতে গিয়ে।
আরও পড়ুন - Jangal Jalebi Fruit Farming: জঙ্গল জালেবি বা মিষ্টি তেতুঁলের চাষ পদ্ধতি ও স্বাস্থ্যগুণ
মহিলাদের কৃষিতে অবদান (Role of women farmers):
তবে, বর্তমানে মহিলারা কৃষকরা অনেকটা এগিয়ে গেছেন | অনেকেই নানা প্রতিকূলতা পার করে সফল হয়েছেন | জাতীয় নমুনা সমীক্ষার বিভিন্ন পর্যায় থেকে জানা যায়, ভারতে কৃষি শ্রমিকদের ৩০ শতাংশ নারী শ্রমিক, বাংলাদেশে এই অনুপাত ৫০ শতাংশের মতো। আবার মোট নারী শ্রমিকদের ৫৬ শতাংশ কৃষিকাজে যুক্ত। গ্রামীণ নারীদের জমি, জল, বীজ, ঋণ, বাজার ইত্যাদি ঠিক ভাবে ব্যবস্থা করলে, সঙ্গে ঠিক ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং ঠিক তথ্য সরবরাহ করলে তাঁদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং সেটা উপরোক্ত লক্ষ্যমাত্রাগুলি পূরণের সহায়তা করবে।
এ বারের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় আশঙ্কা করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনিয়মিত বৃষ্টির জন্য, তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধির জন্য সেচবিহীন চাষে বার্ষিক কৃষি আয়ের পরিমাণ ২০% থেকে ২৫% পর্যন্ত কমতে পারে। আমাদের দেশে ৩৬ শতাংশ কৃষিজমিতে সেচ ব্যবস্থা আছে; তা হলে আগামী দিনে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কৃষি অর্থনীতি ব্যপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ (Development of rural economy):
কৃষিক্ষেত্রে আয়ের অনিশ্চয়তার দরুন এবং গ্রামাঞ্চলে বিকল্প কাজের সুযোগের অভাব থাকায় পুরুষেরা গ্রাম থেকে শহরে কাজের সন্ধানে যাচ্ছেন।
এর ফলে গ্রামীণ কৃষিক্ষেত্রে কখনও চাষি হিসাবে, কখনও শ্রমিক হিসাবে আবার কখনও উদ্যোগপতি হিসেবে মহিলাদের ক্ষমতায়ণ হয়েছে। চাষ শুরুর সময় থেকে ফসল কাটা, মজুত করা এবং বাজারজাত করার সময় মহিলাদের ভুমিকা ক্রমে বাড়ছে। তাই মহিলাকেন্দ্রিক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং বাজেটে সেই মতো বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গ্রামে মহিলাদের ক্ষমতায়ণের জন্য স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলোকে আরও কার্যকরী হতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে গ্রামের মহিলাদের এই ক্রমবর্ধমান ভূমিকার জন্য কৃষি দফতর প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর মহিলা কৃষক দিবস হিসেবে পালন করে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Melon Farming: জেনে নিন সহজ উপায়ে মেলন বা ফুটি চাষ পদ্ধতি