সবজির চারাতলাই কৃমির আঁতুরঘর। প্রধানত দুই প্রজাতির কৃমি, শেকড়ফোলা এবং রেনিফর্ম বা বৃক্কাকার কৃমি বীজতলায় সমস্যা করে। এরা উভয়ে মাটিতে থাকে। শেকড়ফোলা কৃমির আক্রমণ হলে শেকড়ে গল্ বা আব তৈরি হয়। তবে রেনিফর্ম কৃমি শেকড়ে কোনও গল তৈরি করে না। শেকড়ে অন্তঃপরজীবী হিসাবে বসবাস করে। এদের আক্রমণে বীজের অংকুরোদগম নষ্ট হয় এবং যথেষ্ট সংখ্যক চারা তৈরি করতে সমস্যা হয়।
কৃমি আক্রমণের ফলে সাধারণভাবে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো, দুর্বল চারা, পাতা হলদে ও কম বাড়-বাড়ন্ত। সাধারণত টমেটো, বেগুন, লঙ্কা ইত্যাদি ফসলে কৃমি-আক্রান্ত চারার মাধ্যমে কৃমিটি চারাতলা থেকে মূল জমিতে ছড়ায়। এখন কৃমির উপদ্রব থেকে রেহাই পেতে হলে – কৃমিমুক্ত চারা তৈরি করতে হবে। কৃমিমুক্ত চারা তৈরি করতে হলে সঠিক জমি নির্বাচন, বীজ শোধন ও বীজতলার পরিচর্যা করা দরকার। চাষি ভাইদের জানা প্রয়োজন তার জমির চরিত্র এবং জমির স্বাস্থ্য। যেমন `জমির উর্বরতা, অবস্থান, জৈব উপাদান, রোগ-জীবাণু, কৃমির উপদ্রব ইত্যাদি।
বীজতলা নির্বাচন:
কৃমির সমস্যা থাকলে সেই জমিতে চারতলা না করাই ভাল। জমিতে কৃমি আছে কিনা তা জানার দুটো সহজ উপায় হল, জমিতে বিভিন্ন আগাছা ও আগের ফসলের মুড়োগুলো তুলে যাচাই করা। শেকড়ে গল বা গাঁট থাকলে বুঝতে হবে সেই জমিতে শেকড় ফোলা কৃমির সমস্যা আছে। তাছাড়া কাছাকাছি কৃমি গবেষণা কেন্দ্র যেমন সর্বভারতীয় কৃমি প্রকল্প কেন্দ্র-কল্যাণী, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পুন্ডিবাড়ি বা মাঝিয়ান কেন্দ্র, যেখানে মাটি পরীক্ষা করার সুযোগ আছে।
আরও পড়ুন -Weather forecast: শক্তি বাড়াচ্ছে জোড়া ঘূর্ণাবর্ত, বৃষ্টি সাময়িক কমলেও নিস্তার নেই
বীজতলার পরিচর্যা:
(গ্রীষ্মকালে জমি চাষ) যদি কৃমিমুক্ত জমি না থাকে তা হলে, আগে থেকে একফালি জমি গ্রীষ্মকালে ভালভাবে ২-৩ বার ১০-১৫ দিন অন্তর চাষ দিয়ে মাটি শুকিয়ে কৃমির সংখ্যা কমিয়ে নিতে হবে।
বীজতলা শোধন:
মে-জুন মাসে জল দিয়ে মাটি ভিজিয়ে স্বচ্ছ পলিথিন চাদর (২৫-১০০ মাইক্রন) দিয়ে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ ঢেকে রাখলে কৃমি ছাড়াও অন্যান্য রোগের-বীজাণু এবং আগাছা দমন করা সম্ভব। এর সঙ্গে বীজতলায় জৈবনাশক যেমন পারপুরোসিল্লিয়াম লিলাসিনাম (২০ গ্রাম প্রতি বর্গ মিটার), ট্রাইকোডারমা (২০ থেকে ৪০ গ্রাম প্রতি বর্গ মিটার), পোকোনিয়া ক্লামাইডস্পরিয়া (২০-৪০ গ্রাম প্রতি বর্গ মিটার), সিউডোমোনাস ফ্লোওরোসন্স (২০-৪০ গ্রাম প্রতি বর্গ মিটার), ইত্যাদি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এগুলো বাজারে পাউডার ফর্মুলেশন হিসাবে পাওয়া যায়। জৈবসারের সঙ্গে (এক কেজি জৈবনাশক ১ টন পর্যন্ত পচা ও শুকনো গোবরসার) মিশিয়ে ছায়াতে ১৫ দিন জাগ দিয়ে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। নিমের খোল প্রতি বার্গ মিটারে ৫০০ গ্রাম বাবহার করা যেতে পারে। তবে ন্যূনতম ২০ দিন পচনের সময় দিতে হবে।
বীজ শোধন:
জৈবনাশকগুলো দিয়ে বীজশোধনে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি কেজি বীজ শোধন করতে ১৫-২০ গ্রাম লাগবে। কৃমির উপদ্রব থেকে রেহাই পেতে হলে উপযুক্ত চারতলা নির্বাচন, বীজ শোধন এবং চারতলার পরিচর্যা করুন। মনে রাখবেন রোগমুক্ত, কৃমিমুক্ত সুস্থ এবং সতেজ চারাই অধিক ফলন দিতে পারে। যদি কৃমিমুক্ত জমি না থাকে তা হলে, আগে থেকে একফালি জমি গ্রীষ্মকালে ভালভাবে ২-৩ বার ১০-১৫ দিন অন্তর চাষ দিয়ে মাটি শুকিয়ে কৃমির সংখ্যা কমিয়ে নিতে হবে।
আরও পড়ুন -Successful malta farming: মাল্টা চাষে লাখ টাকার ওপরে উপার্জন কৃষক আমিনের