অ্যালগি এক ধরনের উদ্ভিদ যা এককোষী থেকে বহুকোষী বিশাল বৃক্ষের মতও হতে পারে। তবে আমরা এখানে দুটি বিশেষ প্রজাতির এক কোষী অ্যালগি হিসাবে উল্লেখ করবো যা গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। এদের নাম হলো ক্লোরেলা এবং সিনেডসমাস। এরা সূর্যালোক, জলে দ্রবীভুত অক্সিজেন, কার্বন ডাই- অক্সাই্ড ও জৈব নাইট্রোজেন আহরণ করে সালোকসংশ্লেন প্রক্রিয়ার বেচে থাকে।
গোখাদ্য হিসেবে অ্যালগি: অ্যালগি সব ধরনের, সব বয়সের অর্থাৎ বাছুর, বাড়ন্ত গরু, দুধের বা গর্ভবতী গাভী, হালের বলদ সবাইকেই অ্যালগি খাওয়ানোর যায়।অ্যালগি খাওয়ানোর কোন বাঁধা নিয়ম নেই। এটাকে সাধারণ জলের পরিবর্তে সরাসরি খাওয়ানো যায়। এক্ষেত্রে গরুকে আলাদার করে জল খাওয়ানো প্রয়োজন নেই। দানাদার খাদ্য অথবা খড়ের সাথে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। অ্যালগির জলকে গরম করে খাওয়ানো উচিত নয়, এতে অ্যালগির খাদ্যমান নষ্ট হতে পারে।
অ্যালগির পুষ্টিমান: অ্যালগি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পুষ্টিকর খাদ্য যা বিভিন্ন ধরনের আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন-খৈল, শুটকি মাছের গুড়া ইত্যাদির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার হতে পারে। শুষ্ক অ্যালগিতে শতকরা ৫০-৭০ ভাগ আমিষ বা প্রোটিন, ২০-২২ ভাগ চর্বি এবং ৮-২৬ ভাগ শর্করা থাকে। এছাড়াও অ্যালগিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের বি ভিটামিন থাকে।
অ্যালগি চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ:
অ্যালগির বীজ, কৃত্রিম অগভীর পুকুর পরিস্কার স্বচ্ছ কলের জল, মাসকলাই বা অন্যান্য ডালে ভুষি এবং ইউরিয়া।
অ্যালগির উৎপাদন পদ্ধতি: প্রথমে সমতল, ছায়াযুক্ত জায়গায় একটি কৃত্রিম পুকুর তৈরী করতে হবে। পুকুরটি লম্বায় ১০ ফুট, চওড়ায় ৪ ফুট এবং গভীরতায় ১/২ ফুট হতে পারে। পুকুরের পাড় ইট বা মাটি তৈরী হতে পারে। এবার ১১ ফুট লম্বা, ৫ ফুট চওড়া একটি স্বচ্ছ পলিথিন বিছিয়ে কৃত্রিম পুকুরের তলা ও পাড় ঢেকে দিতে হবে। তবে পুকুরের আয়তন প্রয়োজন অনুসারে ছোট বা বড় হতে পারে। তাছাড়া মাটির বা সিমেন্টের চাড়িতে অ্যালগি চাষ করা যায়। ১০০ গ্রাম মাসকালাই (বা অন্য ডালের) ভূষিকে ১ লিটার জলে সারারাত ভিজিয়ে কাপড় দিয়ে ছেঁকে জলটুকু সংগ্রহ করতে হবে। একই ভূষিকে অন্তত তিনবার ব্যবহার করা যায়, যা পরবর্তীতে গরুকে খাওয়োনো যায়। এবার কৃত্রিম পুকুরে ২০০ লিটার পরিমান কলের পরিস্কার জল, ১৫-২০ লিটার পরিমান অ্যালগির বীজ, যা অ্যালগি ঘনত্বের উপর নির্ভর করে এবং মাসকালাই ভূষি ভেজানো জল নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ২-৩ গ্রাম পরিমান ইউরিয়া নিয়ে উক্ত পুকুরের জলে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।এরপর প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকাল কমপক্ষে তিনবার উক্ত অ্যালগির কালচারকে নেড়ে দিতে হয়। জলের ১-২ গ্রাম পরিমান ইউরিয়া ছিটালে ফলন ভাল হয়।এভাবে উৎপাদনের ১২-১৫ দিনের মধ্যে অ্যালগি জল গরুকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়। এসময় অ্যালগি জলের রং গাঢ় সবুজ বণের্র হয়। অ্যালগির জলকে পুকুর থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি গরুকে খাওয়ানো যায়।একটি পুকুরের অ্যালগির জল খা্ওয়ানো পর উক্ত পুকুরে আগের নিয়ম অনুযায়ী পরিমান মত জল সার এবং মাসকালাই ভূষি ভেজানো জল দিয়ে নতুন করে অ্যালগি কালচার শুরু করা যায়, এ সময় নতুন করে অ্যালগি বীজ দিতে হয় না।যখন অ্যালগি পুকুরে জলের রং স্বাভাবিক গাঢ় সবুজ রং থেকে বাদামী রং হয়ে যায়। বুঝতে হবে যে উক্ত কালচারটি কোন কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে নতুন করে কালচার শুর করতে হব। এ কারণে অ্যালগি উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত সাধানতা করা উচিত।
সাবধানতা: অ্যালগির পুকুরটি সরাসরি সূর্যালোকের নিচে না করে ছায়যুক্ত স্থানে করা উচিত। কারণ অতি আলোকে অ্যালগি কোষের মৃত্যু হয়।কখনোই মাসকালই ভূষি ভেজানো জল বর্ণিত পরিমানের চেয়ে বেশী দেয়া উচিত নয়, এতেও অ্যালগি কোষ মারা যেতে পারে।অ্যালগি পুকুরের জলকে না দিলে কোষের উপর কোষ থিতিয়ে কালচারটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।যদি কখনো অ্যালগি পুকুরের জল গাঢ় সবুজ রংয়ের পরিবর্তে হালকা নীল রং ধারনকরে তখন তা ফেলে দিয়ে নতুন করে কালচার শুরু করতে হবে। কারণ নীল রঙের অ্যালগি/ছত্রাক ভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত।
ফলন ও খরচ: উপরোক্ত নিয়মে অ্যালগি উৎপাদন করলে প্রতি ১০ বর্গ মিটার পুকুর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লিটার অ্যালগির জল বা ১৫০ গ্রাম শুষ্ক অ্যাজোলা উৎপাদন সম্ভব। উৎপাদন সামগ্রীর দাম অনুসারে প্রতি লিটার অ্যালগির উৎপাদন করতে সর্বোচ্চ পাঁচ পয়সা খরচ পড়তে পারে। সবচেয়ে বড় সুবিধা এই যে, অ্যালগি উৎপাদন করতে কোন আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ীতে যে কোন ছায়াযুক্ত সমতল স্থানে এমনকি ঘরের ভিতরে বা দালানের ছাদেও করা যায়।
- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)