জীবীকার লক্ষ্যে যে সমস্ত প্রাণী পালন করা হয়ে থাকে তার মধ্যে ছাগল পালন অন্যতম। প্রাচীনকাল থেকে গ্রামের মানুষ সামাজিক ও আর্থিক সুবিধার জন্য ছাগল পালন করে আসছে। ছাগলকে গরীব মানুষের গরু বলা হয়, কেননা তাদের অর্থনীতিতে ছাগলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই প্রাক্ ঐতিহাসিক যুগ থেকে ছাগল পালন করে আসছে। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা সভ্যতার শিলমোহরে ছাগলের ছবি পাওয়া গেছে।
পশ্চিমবঙ্গের উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ছাগল খুব সহজেই পালন করা যায়। ছাগল পুষতে খরচ কম, লাভ বেশি, ঝামেলাও কম। কথায় বলে ছাগলে কিনা খায় অর্থাৎ ছাগলের খাবারে কোনপ্রকার বাছ-বিচার নেই। বাংলার দেশী ছাগল একসাথে ২-৩টি বাচ্চা দিতে পারে। মাত্র ৬-৭ মাস বাচ্চাকে পালন করলে ৭-৮ কেজি ওজন হয়।
আরও পড়ুনঃ ব্যবসা ভিত্তিক ছাগল পালনে কীকী ঝুঁকি থাকতে পারে?
ছাগল পালনে বাড়তি আয়ের উৎস
ছাগলের লোম বা চুল দড়ি, ব্যাগ, পোশাক, টুপি, বিছানার ও ঘরের নানান উপকরণ ও অন্যশিল্পে ব্যবহৃত হয়। অ্যাংগোরা ছাগল থেকে প্রাপ্ত মোহেয়ার এবং চেণ্ড ও চ্যাংথাঙ্গী ছাগল থেকে প্রাপ্ত পশমিনা থেকে উৎপন্ন শীতবস্ত্র বিদেশে রপ্তানি করা হয়। কাশ্মীরি কার্পেট, শাল তৈরিতে ছাগলের পশমিনা বা লোম মহামূল্যবান দ্রব্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
ছাগলের মল মার্টির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন ও ফসফরিক অ্যাসিড থাকে যা গরু বা মহিষের মলের চেয়ে অনেক বেশি যা মাটির চাষের পক্ষে উপযুক্ত। ছাগলের মুত্রে প্রায় একই রকম নাইট্রোজেন ও পটাশ থাকে যা কোন প্রাণীর চেয়ে মূল্যবান। একটি ছাগল বছরে প্রায় ১৩০ কেজি মলত্যাগ করে, এতে রেসিডুয়াল ইফেক্ট থাকে যা মাটির pH কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ হাঁস পালনের আগে জানতে হবে হাঁসের এই মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে
বর্তমানে ছাগল পালন অত্যন্ত লাভজনক পদ্ধতি। এতে অল্প সময়ের মধ্যে আয় উঠে আসে। দু'চারটা ছাগল পালন করে পরিবারের আয় যেমন বাড়ানো সম্ভব তেমনি বড় আকারের খামার স্থাপন করে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ছাগল পালন করা যেতে পারে। আকৃতির দিক থেকে ছাগল ছোট হওয়ার জন্য খুব কম জায়গা লাগে। এদের মুক্তাঙ্গন পদ্ধতিতে পালন করা যায়। এতে ছাগল সারাদিন চরে খায়, ফলে খাবারের খরচ প্রায় লাগে না বললেই চলে। খাবারের কোন বাছবিচার থাকে না। মাঠের ঘাস, লতা-পাতা, শাক্-সব্জি, রান্নাঘরের আনাজের খোসা প্রভৃতি খেতে পারে। তবে প্রকৃত লাভের জন্য বিজ্ঞানসম্মত চাষ করা, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।