মৌমাছিকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করাকেই বলা হয় মৌমাচি পালন। পালনের জন্য ভারতীয় জাতের মৌমাছি সবচেয়ে উপযোগী। ছোট সেনালি বর্ণের ও সাদা ডোরাকাটা এ মৌমাছিরা গাছের গর্তে বা অন্যকোন গহ্বরে একাধিক সমান্তরাল চাক তৈরি করে বসবাস করে। গর্তে প্রবেশ পথের সঙ্গে চাকগুলো সমান্তরালভাবে সাজানো থাকে। মৌমাছিদের এরূপ বাসস্থানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয় কাঠের বাক্স। কাঠের মৌবাক্সে মৌমাছি পালনই আধুনিক ব্যবস্থা। লোকালয় ও বিভিন্ন বনাঞ্চলের মৌচাক থেকেই তো এই মধু আর মোম সংগ্রহ করা সম্ভব । তবু কেন এই মৌমাছি পালন?
(১) মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের সময় সাধারণত চাকটিকে নষ্ট করে ফেলা হয়। এ কাজের সময় অনেক ক্ষেত্রে বিপুলসংখ্যক মৌমাছিও মারা পড়ে। এছাড়াও চাকে অবস্থিত ডিম ও বাচ্চা নষ্ট হয়। এর ফলে দিন দিন মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ইদানিং ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে লোকালয়ে আশঙ্কাজনকভাবে মৌমাছির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এতে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মৌমাছির সংখ্যাকে বাড়ানো সম্ভব।
(২) মৌমাছির বঞ্চিত মধু আমরা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকি। মধুর পুষ্টিগুণ চাড়াও নানাবিধ রোগ উপশমকারী ক্ষমতা রয়েছে। সাধারণ নিয়মে মৌচাক চেপে মধু বের করা হয়। এতে চাক থেকে মধু নিষ্কাশন যেমন সম্পূর্ণ হয় না তেমনি সেই মধুতে রয়ে যায় মোম, মৌমাছির ডিম ও বাচ্চা নিস্পোষিত রস এবং অন্যান্য আবর্জনা। পালন করা মৌমাছির চাক থেকে যান্ত্রিক উপায়ে নিষ্কাশিত মধু যেমন বিশুদ্ধ, তেমনি নিষ্কাশনও হয় পুরোপুরি।
(৩) মৌচাক থেকে মোম পাওয়া যায়, কিন্তু পালন করা মৌমাচির চাক থেকে মোম সংগ্রহ করা হয় না। মোম সংগ্রহ করলে চাক নষ্ট হয়। নতুন চাক বানাতে মৌমাছির অনেক সময় লাগে। এতে মধু নিস্কাশনের পর চাক অক্ষত থাকে বলে মৌমাছিরা সাথে সাথেই আবার শুন্য কুঠুরিগুলোয় মধু জমাতে থাকে এই মধু যেমন বিশুদ্ধ, তেমনি নিষ্কাশনও হয় পুরোপুরি।
(৪) এছাড়া মৌ-বাক্সে ভেতরে যে কাঠের ফ্রেম থাকে তাতে মোমের তৈরি ছাঁচ বা 'কম্ব ফাউন্ডেশন সিট' দিলে মৌমাছিরা তাড়াতাড়ি চাক তৈরি করতে পারে। এজন্য মৌমাছি পালনের মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক বেশী মধু পাওয়া সম্ভব।
(৫) ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় মৌমাছিরা তাদের পা এবং বুকের লোমের ফুলের অসংখ্য পরাগরেণু বয়ে বেড়ায়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে পড়লে পরাগায়ন ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় ফল। এভাবে মৌমাছিরা পরাগায়নের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে ফল ও ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। বিশেষ মৌসুমে যখন কোনো বাগান বা ফসলের ক্ষেতে প্রচুর ফুল ফোটে তখন মৌমাছিসহ বাক্সকে সেখানে স্থানান্তর করলে একদিকে প্রচুর মধু সঙগৃহীত হবে, অন্যদিকে ফল বা ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।
(৬) মৌমাছি পালনকে কুটির শিল্প হিসাবে গ্রহণ করে বর্তমানে অনেক বেকারের কর্মসংস্থার হচ্ছে। গ্রামের স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে মৌমাছি পালন একটি বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে।
মৌমাছি পালন সম্পর্কে আরো জানতে কৃষি জাগরণ পত্রিকার নভেম্বর সংখ্যাটি পড়ুন।
- রুনা নাথ