ছাগল আমদের দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের এক অন্যতম প্রধান উৎস। বাংলাদেশের গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা রোজিনা বেগম তার বাড়ির ছাদে (Terrace Farming ছাগল পালন করে আজ অসামান্য সাফল্য পেয়েছেন। ছাগলের সাথে সাথে হাঁস-মুরগী, পায়রা এবং গরুও পালন করেন তিনি। জেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার সহায়তায় এই প্রাণীপালন করে আজ তার মাসিক আয় একজন সাধারণ খামারীর তুলনায় অনেকটাই বেশি। তার মতো ছাদে ছাগল পালনের জন্য শহরের খামারীদেরও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আজ আমরা ছাগল পালন (Goat farmingসম্পর্কেই সম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করতে চলেছি।
ছাগল পশ্চিমবঙ্গের অতি গুরুত্বপূর্ণ পশু সম্পদ। উল্লেখ্য যে, এ রাজ্যের ছাগলের অধিকাংশই ব্ল্যাক বেঙ্গল প্রজাতির। বাংলার কালো ছাগল প্রজাতির নাম হলেও কালো রঙ ছাড়া বাদামী এবং সাদা রঙের প্রজাতির ছাগল কম সংখ্যায় দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ মৌমাছি পালনের ব্যবসা: এই ব্যক্তি মৌমাছি পালন করতে চাকরি ছেড়ে এখন আয় করছেন লাখ টাকা
ছাগল পালন পদ্ধতি (Goat farming)
ছাগলের ঘর শুষ্ক, উঁচু, জল জমে না, এমন স্থানে স্থাপন করা উচিৎ। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি, দক্ষিণ দিক খোলা এমনভাবে করতে হবে। এছাড়া জল নিষ্কাশনের জন্য উত্তম ব্যবস্থা আছে, এমন স্থানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ছাগল ঠাসাঠাসি অবস্থায় বাস করতে পছন্দ করে না। এরা মুক্ত আলো, বাতাস এবং পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন স্থানে থাকতে পছন্দ করে।
এক জোড়া ছাগলের জন্য ৫ ফুট লম্বা, ১.৫ ফুট চওড়া এবং ৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট খোঁয়াড় প্রয়োজন। প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক ছাগলের জন্য গড়ে ১০-১৮ বর্গফুট এবং বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য ৩-৮ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। ছাগলের ঘর খড়, টিন বা ইঁট নির্মিত হতে পারে। তবে ঘরের ভিতর বাঁশ বা কাঠের মাচা প্রস্তুত করে তার ওপর ছাগল রাখা উচিৎ। মাচার উচ্চতা ১ মি. (৩.৩৩ ফুট) এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৬-৮ ফুট হবে। মল-মূত্র নিষ্কাশনের গোবর ও চনা সুবিধার্থে বাঁশের চটা বা কাঠের মাঝে ১ সেমি. ফাঁক রাখতে হবে।
বৃষ্টি যেন সরাসরি ঘরের ভিতর প্রবেশ না করতে পারে, সেজন্য ছাগলের ঘরের চালা ১-১.৫ মি. (৩-৩.৫ ফুট) ঝুলিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। শীতকালে রাতের বেলায় মাচার উপরের দেওয়ালকে চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পাঁঠার জন্য অনুরূপ ভাবে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ও মল-মূত্র নিষ্কাশনের উত্তম সুবিধাযুক্ত পৃথক খামার তৈরি করতে হবে। শীতকালে মাচার উপর ১.৫ ইঞ্চি পুরু খড় বিছিয়ে তার ওপর ছাগল রাখতে হবে। প্রতিদিন ভালোভাবে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকিয়ে পুনরায় খড় বিছাতে হবে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা (Feed management)
ছাগলকে রাস্তার ধার, পুকুর পাড়, জমির আল, পতিত জমি বা পাহাড়ের ঢালে বেঁধে বা ছেড়ে ৮ - ৯ ঘণ্টা ঘাস খাওয়াতে পারলে খুব উপকার হবে। এ ধরণের সুযোগ না থাকলে প্রতি ২০ কেজি ওজনের ছাগলের জন্য দৈনিক ০.৫ – ১ কেজি পরিমাণ কাঁঠাল, ইপিল, ঝিকা, বাবলা ইত্যাদি গাছের পাতা অথবা এদের মিশ্রণ দেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি ছাগলকে দৈনিক ২৫০ - ৩০০ গ্রাম ঘরে প্রস্তুতকৃত দানাদার খাদ্য দেওয়া যেতে পারে।
১০ কেজি দানাদার খাদ্য মিশ্রণে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজন, তা হল- চাল ভাঙ্গা ৪ কেজি, ঢেঁকি ছাঁটা চালের কুঁড়া ৫ কেজি, খেসারি বা অন্য কোন ডালের ভুষি ৫০০ গ্রাম, মিনারেল মিক্সচার ২০০ গ্রাম এবং লবণ ৩০০ গ্রাম।
ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত খড় ও সাইলেজ খাওয়ালে ভালো হয়। কারণ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে আমিষের পরিমাণ বেশী থাকে এবং পরিপাকও ভালোভাবে হয়। জন্মের পর থেকেই ছাগল ছানাকে আঁশজাতীয় খাদ্য যেমন কাঁচা ঘাস ইত্যাদিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর পর ছাগলকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিষ্কার জল খেতে দিতে হবে। বাড়ন্ত ছাগলকে দৈনিক প্রায় ১ লিটারের মতো জল পান করানো উচিৎ।
কাঁচা ঘাস কম বা এর অভাব ঘটলে ছাগলকে ইউরিয়া - চিটা গুড় মেশানো খড় নিম্নোক্ত প্রণালীতে বানিয়ে খাওয়াতে হবে।
ছাগলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, মুক্ত ভাবে ছাগল প্রতিপালনের তুলনায় আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন অনেক বেশী ঝুঁকিপূর্ণ।এ ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা ও প্রযুক্তির সমন্বয় না ঘটালে খামারীকে বিস্তর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।এজন্য ছাগলের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বাস্থ্যের প্রতি খামারীকে স্বতন্ত্রভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।ছাগলের খামারে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে।তাই বিভিন্ন রোগ দমনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত নেওয়া জরুরি।তা না হলে খামার থেকে লাভের আশা করা যায় না।
আরও পড়ুনঃ
খামারে ছাগল আনার পর থেকে প্রতিদিনই প্রতিটি ছাগলের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। প্রথম পাঁচ দিন সকাল ও বিকালে দু’বার থার্মোমিটার দিয়ে ছাগলের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। হঠাৎ কোন রোগ দেখা মাত্রই পশুচিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
তীব্র শীতের সময় ছাগী বা বাচ্চাদের গায়ে চট পেঁচিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মাচার নিচ এবং ঘর প্রতিদিন সকালে পরিষ্কার করতে হবে এবং কর্মসূচী অনুযায়ী জীবাণুনাশের ব্যবস্থা নিতে হবে।
কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ – সকল ছাগলকে নির্ধারিত মাত্রায় বছরে দু’বার কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে। কৃমিনাশক কর্মসূচী অনুসরণের জন্য পশু চিকিৎসকের ব্যবস্থা পত্র অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।