কৃষিজাগরন ডেস্কঃ বোয়াল মাছ প্রচন্ড রাক্ষুসে ধরনের মাংসাশী মাছ। এরা বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র মাছ এবং প্রাণীকে জল থেকে খায়। ছোট বোয়ালগুলি বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র মাছ এবং কীটপতঙ্গ খায়। বোয়াল একটি উচ্চ শক্তিপন্ন মাছ। গভীর সমুদ্রের মাংসাশী মাছ হাঙরের সাথে তুলনা করা হয় । এদের মাংস খাওয়ার প্রবণতা ও এই মাছের হিংস্রতার জন্য এই মাছকে মিষ্টিজলের হাঙর বলা হয়। বোয়াল মাছের আবার একটি খুব অদ্ভুত চরিত্র রয়েছে যে দিনের বেলা মাছটি শান্ত এবং আক্রমণাত্মক নয়। বোয়াল মাছ রাতেই খাবার খায়। একটি পরিনত বোয়াল মাছ ২৪০ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ৪৫.০ কেজি ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে।এই মাছ বড় নদী, হ্রদ, এবং জলা জায়গাতে পাওয়া যায়। এই মাছটি ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং আরো অনেক দেশে পাওয়া যায়।
শারীরিক বৈশিষ্ট্যাবলী
বোয়াল মাছের শরীর দীর্ঘ হয়, উভয় পাশ চাপা হয় এবং ক্রমশ লেজের দিকে সরু হয়। পিছনের দিক সোজা হয়।মুখ বড় আকারের এবং মুখের মধ্যে কিছু দাঁত আছে।মাথা নরম ত্বক দিয়ে আচ্ছাদিত হয়।নিম্ন চোয়াল উপরের চোয়ালের তুলনায় দীর্ঘ।দুই জোড়া গোফ আছে এবং এক জোড়া খুব দীর্ঘ হয়।তাদেরকে এই গোফের জন্য ক্যাটফিশ বলা হয়।পৃষ্ঠদেশীয় পাখনা ছোট এবং কোনো কাঁটা নেই।বক্ষের দিকে পাখনায় কাঁটা থাকে।পায়ূ খুব দীর্ঘ হয়।লেজের পাখনা দুই ভাগে বিভক্ত।বোয়ালের শরীরের রঙ ফ্যাকাশে সাদা।তাদের শরীরের কোন আঁশ নেই।একটি বড় আকারের বোয়াল মাছ ১৩০ সেমি দীর্ঘ হতে পারে।বয়স্ক বড় আকারের মাছের ওজন প্রায় ২০-২৫ কেজি।বোয়াল একটি উচ্চ শক্তিপন্ন মাছ।
চাষ পদ্ধতি
বোয়াল মাছ এখন বিপন্ন প্রায়। তবে বেশি বেশি চাষ করেই এর বংশ রক্ষা করা সম্ভব। কেননা প্রাকৃতিক অভয়াশ্রম নষ্ট হওয়ায় মাছটি আগের মত পাওয়া যায় না। তবে বোয়াল একটি রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ। কাজেই এ মাছকে প্রজননের আওতায় এনে উৎপাদন করতে কয়েকটি বিশেষ দিকে খেয়াল রাখতে হয়। বৃষ্টির সময় বোয়াল মাছ প্রজনন করে। তারা সাধারণত জুলাই থেকে আগস্ট মাসে ডিম পাড়ে। তারা উভয় আবদ্ধ এবং খোলা জলাধারে ডিম পাড়ে। প্রজননের সময় খুব সহজেই পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে শনাক্ত করা যায়।
আরও পড়ুনঃ কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশি? কৃষি জাগরনের মতে তিনটি সেরা জাত
প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী মাছের পেটভর্তি ডিম থাকে আর পুরুষ মাছের পেট সাধারণ মাছের মত থাকে। তাছাড়া পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিলে সাদা মিল্ট বের হয়। এভাবেই বোয়ালের পুরুষ-স্ত্রী শনাক্ত করা যায়। স্ট্রিপিং বা চাপ পদ্ধতিতে বোয়াল মাছের কৃত্রিম প্রজনন কিভাবে করা যেতে পারে । বোয়াল মাছকে পিজি (পিটুইটারি গ্ল্যান্ড) হরমোন দিয়ে ইঞ্জেকশন করলেই ডিম দিয়ে থাকে।
প্রথম ডোজের সময় শুধু স্ত্রী মাছকে ইঞ্জেকশন দিতে হয়। ডোজের মাত্রা ২ মিগ্রা বা কেজি। ৬ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয় ৪ মিগ্রা বা কেজি। দুটি পদ্ধতিতে বোয়ালের ডিম সংগ্রহ করা যায়। বোয়াল মাছকে পিজি হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে আলাদা আলাদা হাপাতে রাখতে হয়। দ্বিতীয় ডোজের ৬ ঘণ্টা পর সাধারণত বোয়াল মাছ ডিম দিয়ে থাকে। খেয়াল রাখতে হবে, যখনই ২-১টি ডিম বের হবে; তখনই মাছগুলোকে একে একে হাপা থেকে তুলে আনতে হবে।
তবে বোয়াল মাছের পোনা খুবই রাক্ষুসে। ডিম থেকে ফোটার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই একটি আরেকটিকে খেতে শুরু করে। অন্য মাছের রেণু পোনা ডিমের কুসুম বা ক্ষুদ্র আকৃতির প্ল্যাংকটন খেলেও বোয়ালের পোনা ডিমের কুসুম বা কোনো ধরনের প্ল্যাংকটন খায় না। সে ক্ষেত্রে তাদের জীবিত অবস্থায় মাছের রেণু বা পোনাকে খেতে দিতে হয়। এভাবে ৮-১০ দিনেই ২ ইঞ্চি সাইজের পোনায় পরিণত হয়।
আরও পড়ুনঃ বোয়াল মাছের বৈশিষ্ট্য
বোয়াল মাছ এককভাবে চাষ লাভজনক নয়। তাই এদের বিভিন্ন মাছের সাথে চাষ করে ভালো ফল পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র: সুমন কুমার সাহু, মৎস্যচাষ সম্প্রসারন আধিকারিক, হলদিয়া