মৎস্য চাষ কথার অর্থ হলো নিজস্ব বা ইজারা নেওয়া কোনো জলাশয়, পুকুর, বা কোনো আবদ্ধ জলাভুমিতে বাণিজ্যিকভাবে মাছের উৎপাদন করা যা কিনা আমাদের খাদ্যের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। সারা বিশ্বে বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ বিশেষ একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। মাছ আমাদের প্রোটিন খাদ্যের আধার বা উৎস। আধুনিক বিশ্বের মাছ বা মৎস্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই কারণে মাছের চাহিদা ও মূল্যবৃদ্ধি ক্রমাগত উর্দ্ধমুখী। বিশ্বে জনসংখ্যার দ্রুত হারে বৃদ্ধির ফলে চাহিদাও একটি উর্দ্ধমুখি পরিসংখ্যান পরিবেশন করেছে। এই চাহিদা বৃদ্ধিই হলো সারা বিশ্বে বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষ করা হয়ে থাকে। প্রধানত যে সমস্ত দেশগুলির বিস্তৃত উপকূলভাগ রয়েছে সেই সব দেশের মাছের উৎপাদন অনেক বেশি। বিভিন্ন দেশে এমন কতশত স্থান রয়েছে যেগুলিতে প্রধান উৎপাদিত বস্তু হলো মৎস্য, এবং এখানকার অধিবাসীরা অধিকাংশই মৎস্য চাষের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। যাই হোক এই বিষয়ের মাধ্যমে আমি মাছ চাষের কিছু সুবিধাজনক দিক আলোচনা করতে চলেছি।
বাণিজ্যিক মাছ চাষের বিভিন্ন সুবিধা
বাণিজ্যিক মাছ চাষের বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে যা কিনা আপনাকে বাণিজ্যিক সাফল্য দিতে পারে। আসুন দেখে নিই মাছ চাষের সুবিধাজনক দিক সমূহ কী কী
১) বাণিজ্যিক মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে ক্রেতার চাহিদা অনুসারে মৎস্য চাষ করা সম্ভব, কারণ সামুদ্রিক মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে সবসময় তা ভোগকারীর চাহিদা পূরণ করতে পারা যায় না, সেক্ষেত্রে বাণিজ্যিক মৎস্য চাষের মাধ্যমে যে কোনো রুচীর ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে মাছের উৎপাদন করে যোগান দেওয়া সম্ভব।
২) বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষ করলে যেকোনো ছোট বড় মাঝারি জলাশয়ে তা করা সম্ভব এবং তা বাজারজাত করাও বেশ সুবিধাজনক। এক্ষেত্রে সামুদ্রিক মাছ চাষের কোনো প্রয়োজন নেই, এছাড়াও বাণিজ্যিক মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রের কোনো ক্ষতি হয় না, তাছাড়া এইভাবে মাছচাষের খরচও অনেক কম।
৩) জংলী মাছের পুষ্টিগুণের তুলনায় বাণিজ্যিক মাছ চাষের পুষ্টিগুণ অনেক বেশী। মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছেদের অধিক পুষ্টিকর ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়ানো হয়ে থাকে। তাই বন্য মাছের তুলনায় বাণিজ্যিক মাছের পুষ্টিগুণ অনেক বেশী হয়ে থাকে।
৪) সারা বিশ্বে অনেক ধরণের জাতের মাছ পাওয়া যায়, বাণিজ্যিক মাছ চাষের ক্ষেত্রে আপনি আপনার পছন্দমত মাছের চাষ করতেই পারেন যা কিনা বাজারমূল্য হিসেবে বেশ লাভজনক হতে পারে।
৫) সারা বিশ্বে খাদ্য হিসেবে মাছ খুবই জনপ্রিয়। অর্থাৎ মাছের বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হয় না, একটি স্থায়ী মাছের বাজার সবসময়ই পাওয়া যায়। তাই মাছ বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে কোনো চিন্তার কারণ নেই।
৬) আপনি খুব স্বল্প অথবা বৃহৎ পরিসরে মাছের উৎপাদন শুরু করতে পারেন।
৭) যদি আপনার মূলধন কম থাকে তাহলে মাছ চাষ শুরু করবার জন্য ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করা যেতে পারে, অনেক ব্যাঙ্ক থেকে এই মাছ চাষের জন্য প্রারম্ভিক মূলধন যোগান দেওয়া হয়ে থাকে।
৮) বাণিজ্যিকভাবে মাছের উৎপাদন-এর ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে মৎস্য প্রোটিনের উপর ভিত্তি করে বসে থাকেন প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ, এদের মধ্যে কেউ প্রত্যক্ষভাবে আবার কেউ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য চাষের সাথে যুক্ত আছেন। ফলে, মৎস্য চাষ একটি বিশাল আয় ও কর্মসংস্থান তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। সারা বিশ্ব বাজারে মাছের আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতি বৎসর লক্ষ লক্ষ টাকার আয় হচ্ছে, যা কিনা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি উপার্জিত একটি কাজ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
৯) সাধারণত বাড়ির সামনে কোনো তালাব জলাশয় কিংবা পুকুরে আপনি আপনার পারিবারকে সঠিক পুষ্টিমানের মৎস্য পরিবেশন করবার জন্য ছোট করেও এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে আপনাদের মাছের প্রতিপালন সম্পর্কে নূন্যতম ব্যবহারিক জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে, মাছের পরিচর্যার জন্য সবথেকে বেশী জরুরী বিষয় হলো সময় ও খাদ্য প্রদানের পরিমাপ, তাই প্রাথমিক জ্ঞান প্রাপ্তির জন্য আপনাদের আপনার নিকটবর্তী কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সাহায্য ও পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিৎ।
- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)