কৃষিজাগরন ডেস্কঃ যেসব গাভী সন্তোষজনক পরিমাণ দুধ দেয় তাদের ভাল দুগ্ধবতী গাভী বলা হয়। সাধারণত দুগ্ধবতী গাভীর দুধের পরিমাণ দেখে দুগ্ধবতী গাভীর মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এছাড়া শুষ্ক গাভী, গর্ভবর্তী গাভী যখন দুধ দেয় না এবং বকনা অবস্থায়ও কতিপয় বৈশিষ্ট্য দেখে এরা দুগ্ধবতী হবে কিনা তা বোঝা যায়। উৎকৃষ্ট গাভীর নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকে।
-
দৈহিক গঠনঃ বৃহৎ দেহ, ঝুড়িশিখিল পা, চওড়া কপাল, ছোট মাথা, চামড়া পাতলা, বুক বেশ গভীর ও প্রশস্ত এবং দেহ অতিরিক্ত মাংসল ও চর্বি বহুল হবে না।
-
গোঁজ আকৃতির দেহঃ ড্রল জাতের গাভীকে পিছনের দিক থেকে গোঁজাকৃতির ন্যায় দেখা যাবে। প্রশস্ত চওড়া পাছা ও পিছনের পা দুটোর মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক থাকবে যার ফলে ওলান বড় হওয়ার সুযোগ থাকে।
-
ওলান ও বাঁটঃ ওলান বেশ বড়, চওড়া, মেদহীন ও কক্ষগুলো সামাঞ্জস্যপূর্ণ হবে। বাঁটগুলো প্রায় একইমাপের এবং পরস্পর থেকে সমান দূরে হবে।
-
দুধের শিরাঃ গাভীর পেটের নিচে ওলানের সাথে সংযুক্ত শাখা প্রশাখাযুক্ত দুধের শিরা থাকবে।
-
প্রকৃতিঃ দুগ্ধবতী গাভী শান্ত, ধীর স্থির মাতৃভাবাপন্ন প্রকৃতির হবে।
-
বয়সঃ সাধারণত একটি পাতী প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন করে। সুতরাং গাভীর বয়স জানা আবশ্যক।
-
দুধ উৎপাদনঃ পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনকারী গাভী উৎকৃষ্ট হিসাবে বিবেচিত হয়। দুধে চর্বির পরিমাণ যাচাই কওে গাভীর উৎকৃষ্টতা বিচার করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ গবাদি পশুর উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
গরুর উন্নত জাত,উন্নত জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য ও বাসস্থান ব্যবস্থাপনা
গরুর উন্নত জাত নির্বাচন
-
আমাদের দেশে অধিক পরিমাণে দুধ উৎপন্ন করে এমন গরুর জাত হিসাবে শাহীওয়াল, সিন্ধি, হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান সংকর জাতের গরু পরিচিত।
-
দেশী জাতের মধ্যে শাহজাদপুর, পাবনা,মুন্সিগঞ্জ,মাদারিপুর এবং চট্টগ্রাম এলাকায় গরু দেশের অন্যান্য এলাকার গরু অপেক্ষা উন্নত ও দুধ বেশী দেয়।
খাঁটি জাতের শাহিওয়াল গরুর বৈশিষ্ট্যঃ
-
শাহিওয়াল গরুর দেহের রং হালকা লাল বা বাদামী রঙের।
-
এদের কুঁজ কিছুটা উঁচু এবং গল কম্বল বড় ও ঝুলানো হয়। নাভীও বেশ ঝুলানো থাকে।
-
এ জাতের গরুর মাথা খাটো, শিং ছোট, কপাল ও দুই শিং এর মধ্যবর্তী স্থান উঁচু হয়।
-
এ জাতের একটি গাভীর ওজন ৪০০-৫০০ কেজি হয়ে থাকে।
-
একটি গাভী বছরে ৩০০ দিন পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।
-
প্রতি গাভী হতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ লিটার দুধ পাওয়া যায়।
-
এ জাতের বকনা ২-২.৫ বছর বয়সে প্রথম প্রজনন উপযুক্ত হয়।
আরও পড়ুনঃ মৌপালনের বাক্স ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
খাঁটি জাতের সিদ্ধি গরুর বৈশিষ্ট্যঃ
-
সিদ্ধি গাভীর গায়ের রং গাঢ় কালচে হলুদ বা গাঢ় বাদামী হয়।
-
এদের কুঁজ কিছুটা উঁচু এবং গল কম্বল বড় ও ঝুলানো হয়।
-
এ জাতের গরুর শিং মোটা, খাটো এবং পিছনের দিকে বাঁকানো থাকে।
-
এ জাতের একটি গাভীর ওজন ৩০০-৪০০ কেজি হয়ে থাকে।
-
গাভীর ওলান বেশ বড় হয়। একটি গাভী বছরে ২৮০-৩০০ দিন দুধ দেয় এবং বার্ষিক দুধ উৎপাদন ২০০০- ৩০০০ লিটার।
-
এ জাতের বকনা ২-২.৫ বছর বয়সে প্রথম প্রজনন উপযুক্ত হয়।
খাঁটি জাতের ফ্রিজিয়ান গরুর বৈশিষ্ট্যঃ
-
ফ্রিজিয়ান জাতের গরু আকারে অনেক বড় হয়। এদের কুঁজ উঁচু হয় না।
-
এদের গায়ের রং সাধারণত সাদা-কালো মিশানো হয়। এ জাতের একটি ষাঁড়ের ওজন ৮০০-৯০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ৫০০-৬০০ কেজি, এমনকি আরও বেশী হয়ে থাকে। এ জাতের গরু থেকে মাংসও বেশী পাওয়া যায়।
-
এ জাতের গাভী অনেক বেশী দুধ দেয়, একটি গাভী দিনে ২৫ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয় এবং বাচ্চা দেয়ার পর থেকে পরবর্তী বাচ্চা প্রদান পর্যন্ত একটানা দুধ দিয়ে থাকে।
সংকর জাতের গরুর বৈশিষ্ট্যঃ
-
আমাদের দেশে প্রায় বেশীর ভাগই গরুই দেশী জাতের।
-
দেশী জাতের গরু থেকে দুধ ও মাংস উৎপাদন পাওয়া যায় কম, কিন্তু এদের কাজ করার ক্ষমতা তুলনামূলক বেশী।
-
বিদেশী উন্নত জাতের গাভী হতে অনেক বেশী দুধ পাওয়া যায়। কিন্তু এসব বিদেশী জাতের গাভী আমাদের দেশের জলবায়ু ও আবহাওয়ায় এবং গ্রামীণ ব্যবস্থাপনায় লালন উপযোগী নয়।
-
আমাদের দেশে তাই বিদেশী ও দেশী জাতের সংমিশ্রণে সংকর জাতের গরু পালনের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
-
সংকর জাতের গাভী আমাদের দেশের জলবায়ু ও আবহাওয়ায় এবং গ্রামীণ ব্যবস্থাপনায় উপযোগী।
ভাল দুগ্ধবতী গাভীর বৈশিষ্ট্য:
-
দেহের সম্মুখভাগ হালকা ও পেছনের অংশ ভারি হবে এবং শরীরের গঠন ঢিলে-ঢালা হবে, চামড়া পাতলা হবে, দেহে অপ্রয়োজনীয় চর্বি থাকবে না।
-
ওলান বড় হবে এবং দেহের সাথে সুন্দরভাবে লেগে থাকবে। ওলানের গঠন সুন্দর এবং বাঁটগুলো একই আকারের এবং সুন্দরভাবে একই দূরত্বে সাজানো থাকবে। ওলানের গঠন দেখে দুধ উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা করা যাবে।।
-
দুধের শিরাগুলো মোটা ও স্পষ্ট হবে এবং নাভির দু'পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকাভাবে ছড়িয়ে থাকবে। দুধের শিরাগুলো ওলানেও স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।
-
উন্নত জাতের গাভী প্রতিবছর বাচ্চা দেয়।