হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গাভি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদনকারী গাভি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত দুধের প্রায় ৫০% হোলস্টাইন থেকেই উৎপাদিত হয়। হোলস্টাইন অর্থ সাদা-কালো ডোরাকাটা আর স্থানের নাম ফ্রিসল্যান্ড এর সঙ্গে মিলিয়ে এই গরুর নাম হয় হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান। বাভারিয়া (বর্তমান জার্মানি) ও ফ্রিসল্যান্ড (বর্তমান নর্থ হল্যান্ড) এই গরুর আদি উৎসস্থান।
বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা
হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান তাদের সাদা কালো রং তাদেরকে সহজেই চেনার উপায় করে দিয়েছে। একটা হোলস্টাইন জাতের পূর্ণ বয়স্ক গাভীর ওজন ৮০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ১১০০ কেজি পর্যন্ত হয় এবং উচ্চতা ৫৫- ৭০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। একটা হোলস্টাইন গভীর বাছুর এর ওজন ৪০ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত হয়। পৃথিবীর সর্বোচ্চ দুধ উৎপাদনের যত রেকর্ড সবই এই সাদা কালো বাহিনীর দখলে এবং মাংসের বাজারেও তাদের সরব উপস্থিতি। মূলত সাদা কালো হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা এটা বিভিন্ন রঙের গরুর সাথে ক্রস মাধ্য়মে বিভিন্ন রং ও বৈশিষ্ঠের হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরু দেখা যায়। মা অথবা ষাঁড় এর রং এর নির্ভর করে লাল সাদা ফ্রিজিয়ান ও দেখা যায়। নরম জাতের এবং দুর্বল হজম ক্ষমতার গরু হিসাবে পরিচিত হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান সাদা খুব বিশিষ্ট হয়ে থাকে। মাথার উপরে সাদা টিক দেখে সহজে সনাক্তযোগ্য হলেও বিশুদ্ধ কালো জাতের গরু ও দেখা যায়।
দুধ ও মাংস উৎপাদন
এক ল্যাক্টেশন পিরিয়ড এ হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান অ্যাভারেজ ৯০০০ থেকে ১২০০০ কেজি দুধ দেয় এবং দুধ উৎপাদনকাল ৩০০-৩১০ দিন। মিল্ক ফ্যাট ৩.৮ থেকে ৪.৮ এবং মিল্ক প্রোটিন ২.৮ থেকে ৩.৭ এবং ল্যাক্টোজ ৩.৭ থেকে ৫.৩ ( ডাচ হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, জাত ভেদে পরিবর্তন হতে পারে)। মাংস উৎপাদন এই জাতের গরু পালনের মূল উদ্দেশ্য না হলেও মাংসের বাজারে রয়েছে ফ্রিজিয়ানের বহুল উপস্থিতি কারণ পৃথিবীর মোট গরু পালনের ৫০% এর উপরে শুধু এই জাত পালন করা হয়। হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় সাইজে বেশ বড় হওয়ায় মাংস উৎপাদন ও সন্তোষজনক, যে কারণে এটা ডুয়াল পারপাস (মাংস ও গরু) গরু না হয়েও এটা অলিখিত ডুয়াল পারপাস গরু।
আরও পড়ুনঃ
হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান পালনে সমস্যা
পৃথিবীর প্রধান দুধ উৎপাদনকারী জাত হলেও এই জাতের রয়েছে কিছু সমস্যা যেটা অনেক খামারি কাটিয়ে উঠতে পারেনা। এই জাতের গরু পালন অভিজ্ঞ এবং ট্রেনিংপ্রাপ্ত খামারি ছাড়া খুব কঠিন। আর একটা বড় সমস্যা হলো প্রজনন সমস্যা। হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরু প্রায়ই প্রজনন অক্ষম হয়ে পড়ে। তাছাড়া প্রজননে দুর্বল হওয়ায় গড়ে ৪ স্ট্রও দরকার হয় যা বেশিরভাগ গরুর ক্ষেত্রে আরো কম। এছাড়া এই জাতের গরু স্বাস্থ্যের বেলায় বেশ অনুভূতিশীল এবং চিকিৎসা খরচ সবচে বেশি। এছাড়া নতুন আবহাওয়া তে মানিয়ে নিতে দীর্ঘ সময় লাগে। খাবার এবং রক্ষনাবেক্ষন খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে এই জাতের গরু থেকে সহজে লাভ তুলতে পারেনা।
আরও পড়ুনঃ