দুগ্ধ একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য । গবাদিপশু যেমন গরু, মহিষ ইত্যাদি প্রাণীর দুগ্ধ আমরা পান করে থাকি। তাই আমাদের এই ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হওয়া দরকার যে, আমরা যে দুগ্ধ পান করি সেটি যেন স্বাস্থ্যকর হয়। পরিষ্কার দুগ্ধ বলতে বোঝায়, একটি রোগমুক্ত সুস্বাস্থ্যযুক্ত গাভী থেকে পরিষ্কার ভাবে দুগ্ধ উৎপাদন, যেখানে অপদ্রব্য এবং জীবাণু অনেক কম পরিমাণে উপস্থিত থাকবে। পরিষ্কার দুগ্ধ উৎপাদন করলে সেটি যেমন একদিকে কৃষকদের জন্য বেশি অর্থ উপার্জনের পথ খুলে দেবে, তেমনি যারা এই দুগ্ধ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করবে তারাও উপকৃত হবে।
পরিষ্কার দুগ্ধ উৎপাদনের পদ্ধতি:
সর্বপ্রথমে আমাদের খেয়াল রাখা উচিৎ, আমাদের গবাদি পশুদের স্বাস্থ্যের উপর। যে সমস্ত গবাদিপশুকে আমরা পালন করে থাকি, সেগুলি সব সময় সমস্ত ধরনের রোগ-জীবাণু থেকে মুক্ত হওয়া উচিৎ। পশুদের নিয়মিত সময় অন্তর পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা দরকার। তাদেরকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের প্রতিকারের জন্য টিকাকরণ করা দরকার। গবাদিপশু যদি রোগগ্রস্থ হয়, তখন তার দুগ্ধের মধ্যেও সেই রোগের জীবাণু উপস্থিত থাকতে পারে। এই দুগ্ধ যদি সেই গাভীর বাছুর অথবা একজন মানুষ গ্রহণ করে, তাহলে তারাও রোগগ্রস্থ হতে পারে। অতএব, গাভির স্বাস্থ্যের দিকে সর্বদা খেয়াল রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।
গবাদি পশুদের সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিৎ। তাদের নিয়মিত সময় অন্তর পরিষ্কার জলে স্নান করানো দরকার। বিশেষত দুগ্ধ দোহন করার পূর্বে গাভীর বাঁট অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে, যাতে দুগ্ধের মধ্যে কোন ধুলোবালি বা অন্যান্য জীবাণু না আসতে পারে।
পশুদের যে স্থানে রাখা হয়, অর্থাৎ গোয়ালঘরটিকে সব সময় পরিষ্কার রাখা দরকার। সেখানে যেন পশুদের মলমূত্র না জমে থাকে, সে ব্যাপারে নজর রাখা উচিৎ। অনেক সময়ই গরুর গোবর তার গায়ে এবং বাঁটে লেগে থাকে । এর ফলে দুগ্ধ দোহন করার সময় দুগ্ধের মধ্যে গোবর বা ধুলোবালি মিশে যেতে পারে। এই ব্যাপারগুলি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
যে ব্যক্তি দুগ্ধ দোহন করবেন, তাঁকেও অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। তিনি যেন অবশ্যই পরিষ্কার জামাকাপড় পরিধান করেন। তাঁকে নখ ছোট করে কাটতে হবে এবং তিনি দুগ্ধ দোহন করার সময় যেন কথা না বলেন অথবা থুতু না ফেলেন।
যে পাত্রে দুগ্ধ সংগ্রহ করা হবে, সেটিও অবশ্যই পরিষ্কার থাকা দরকার। দুগ্ধ সংগ্রহ করা করার পরেই পাত্রটিকে একবার জল দিয়ে ধুয়ে নেওয়া দরকার এবং পরে সেটিকে ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করা উচিৎ। যে পাত্রে দুগ্ধ দোহন করা হবে তার মুখের দিকটি বেশি চওড়া না হওয়া বাঞ্ছনীয়। এর ফলে বাইরে থেকে ধুলোবালি দুগ্ধের মধ্যে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা কম হবে । বালতি বা এই জাতীয় পাত্র ব্যবহার না করাই উচিৎ।
দুগ্ধ সংগ্রহ করার পর তা একবার ছেঁকে নেওয়া দরকার। ছাঁকনি হিসেবে কোন শুকনো পরিষ্কার কাপড় কে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এটি যেন ধুলোবালি অথবা জীবাণুমুক্ত হয়। অন্যথায় এর মাধ্যমে দুগ্ধটি কলুষিত হতে পারে।
দুগ্ধ দোহনের কমপক্ষে এক ঘন্টা পূর্বে পশুদের খাবার দেওয়া দরকার। দুগ্ধ দোহনের সময় অল্প কিছু দানাশস্য দেওয়া যেতে পারে। এটি পশুদেরকে ব্যস্ত রাখবে।
দুগ্ধ সংগ্রহের পরে তাকে শীতল জায়গায় সংরক্ষিত করা দরকার। গ্রীষ্মকালে সম্ভব হলে পাত্রের চারিদিকে বরফ দিয়ে ঠান্ডা রাখতে হবে। সংগৃহীত দুগ্ধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা উচিৎ।
কৃষকেরা যদি পরিষ্কার দুগ্ধ উৎপাদন করেন, তাহলে তাঁরা সেই দুগ্ধ বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। অপরদিকে যাঁরা পরিষ্কার দুগ্ধ গ্রহণ করবেন, তারাও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন এবং রোগ মুক্ত থাকতে পারবেন।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
তথ্যসূত্র - ড. প্রসন্ন পাল (অ্যানিমাল ফিজিওলজি বিভাগ, আইসিএআর-রাষ্ট্রীয় ডেয়ারী অনুসন্ধান সংস্থান, কার্নাল, হরিয়ানা)