ভারতে স্বাদু জলের মাছের বাণিজ্য বেশ বিস্তৃত। এর সাথে দেশে ঠান্ডা জলের মাছের চাষও সমান ভাবে হয়ে আসছে। ঠান্ডা জলের মাছ চাষ মূলত ৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার জলে হয়ে থাকে। গরম কালেও ঠান্ডা জলের মাছ চাষের জন্য যে জল সংরক্ষণ করা হবে তা যেন ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে না যায়।
ঠান্ডা জলের মাছেদের বাসস্থান ( Place of Cold Water Fishes)
ঠান্ডা জলের মাছ চাষের এই শর্তগুলি মূলত হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়। ভারতে প্রচুর পার্বত্য জায়গা রয়েছে, যেখানে এই হিমশীতল নদী এবং জলের উৎস খুঁজে পাওয়া যাবে। হিমালয় পার্বত্য পঞ্চলে মানুষরা অনেকে এই কৃত্রিম ভাবে তৈরি জলাশয়েও এই জাতীয় মাছের চাষ করে থাকেন।
হিমালয় অঞ্চল জুড়ে ১৬ টি বড় এবং ছোট নদী রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন আকারের নানাবিধ হ্রদ, যাতে বিভিন্ন ঠান্ডা জলের মাছ রয়েছে। ভারত সরকার প্রতিষ্ঠিত National Research Centre on Cold Water Fisheries (NRCCWF) এই ঠান্ডা জলের মাছ চাষ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে চলেছে। ঠান্ডা জলের মাছ চাষ নিয়ে, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাঞ্চল, নাগাল্যান্ড, কেরালার মতন রাজ্যে ভালো মতনই সচেতনতা রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে যেই ঠান্ডা জলে মাছ চাষ হয়, সেই জলের অক্সিজেনের পরিমাণও অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। কার্বণ-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ জলে কম থাকার জন্য, এই ঠান্ডা জলের মাছেদের বৃদ্ধি খুব ভালো হয়।
জনপ্রিয় পার্বত্য অঞ্চল অথবা ঠান্ডা জলের মাছ (Famous Cold Water Fishes)
১) মাহশির- এই মাছের মাথা বড় হওয়ার কারণে এই মাছের এই নামকরণের কারণ। জুলাই-সেপ্টেম্বর নাগাদ এই মাছগুলি ডিম পাড়ে। ১.৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এই মাছগুলি কাশ্মীর, সিকিম এবং আসামের নদীগুলিতে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও এই মাছগুলিকে দাক্ষিণাত্যের কিছু নদীতেও পাওয়া যায়। ১৮.৫ থেকে ২৭.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এই মাছগুলি ভালো ভাবে বেড়ে ওঁঠে।
২) বোরোলি-এই ঠান্ডা জলের মাছ আসাম, পাঞ্জাব, কুমায়ুন, নীলগিরি এবং আসামে পাওয়া যায়। এই মাছগুলিকে পার্বত্য ট্রাউটও বলা হয়।
৩) লেবিও কালবাসু- পার্বত্য নদীর এই মাছগুলি ব্যবসায়িক চাষে বেশি ব্যবহৃত হয় না।
৪) গাররা- হিমালয়ান নদীগুলিতে এই মাছের প্রজাতি পাওয়া যায়। এই মাছগুলি মানুষের খাওয়ার জন্য না হলেও, অন্যান্য মাছেদের খাবার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন: PM-Kisan Yojana: স্বামী, স্ত্রী কি দুজনেই পিএম কিষানের সুবিধা পাবেন? নিবন্ধটি পড়ুন
গোটা দেশ জুড়ে বর্তমানে ঠান্ডা জলের মাছের চাষ হচ্ছে। আমাদের বাংলাতেও এই ঠান্ডা জলের মাছ চাষ বহুল পরিমাণে হচ্ছে। উত্তরবঙ্গেও যে ঠান্ডা জলের মাছ পাওয়া যায়, সেই মাছের চাষও বর্তমানে সমতলে কৃত্রিম উপায়ে হচ্ছে। ঠান্ডা জলের মাছের স্বাদ অত্যন্ত ভালো হওয়ায় সাথে এই মাছ অত্যন্ত পুষ্টিকর হওয়ায়, এই মাছের বিক্রি বাজারে খুব ভালো। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ঠান্ডা জলের মাছ চাষের খামার গড়ে উঠেছে। সেখানে কৃত্রিম ভাবে ঠান্ডা জলের মাছের প্ৰজনন ঘটানো ছাড়াও, এই জাতীয় মাছ নিয়ে নিত্যনতুন গবেষণাও চলছে।
আরও পড়ুন: Hydroponics Farming: হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতিতে চাষ করে হয়ে উঠুন লাভবান