রঙিন মাছ পালনের মাধ্যমে শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে বিকল্প আয়ের পথ খুলে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন মৎস্য আধিকারিকরা। শুধু রঙিন মাছ চাষ করা নয়, মাছের খাবার, অ্যাকোরিয়াম প্রভৃতি বিক্রি করেও প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব। কলকাতার গালিফ স্ট্রিট, দাসনগরের বাজারে রঙিন মাছ বিক্রির লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা চলে প্রতিদিন। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ বিভিন্ন জেলার নানা জায়গায় রঙিন মাছের বাচ্চা উৎপাদন ও তা বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা করছেন অনেকে। এ রাজ্য থেকে সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, জাপান, জার্মানি, মালয়েশিয়ায় রঙিন মাছ রপ্তানি হচ্ছে। কলকাতা, মুম্বই ও চেন্নাই রঙিন মাছের বৃহৎ প্রজননকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
কলকাতার অবস্থিত সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফিশারিজ এডুকেশনে রঙিন মাছ পালনের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সাতদিন থেকে ২ মাসের কোর্সে কীভাবে রঙিন মাছ পালন করতে হয়, তার খুঁটিনাটি শেখানো হয়।
গাপ্পি, মলি, প্ল্যাটি, সোর্ডটেল প্রভৃতি রঙিন মাছ দিয়ে চাষ শুরু করা যেতে পারে। এসব মাছ চাষ করা সহজ এবং বাজারে চাহিদাও রয়েছে। পরবর্তী ধাপে গোল্ডফিশ, অ্যানজেল, বার্ব টেট্রা, শার্ক প্রভৃতি মাছ চাষ করতে পারেন। জলাধারে মাছের বাচ্চা ছাড়ার সময় নুন বা হাল্কা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট জলে ডুবিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তার পর ছাড়তে হবে। গাপ্পি মাছ ৫মাস বয়স থেকে বাচ্চা দিতে শুরু করে। বাচ্চা দেওয়ার পরই সেগুলিকে আলাদা করে ফেলতে হবে। না হলে গাপ্পি নিজের বাচ্চাকেই খেয়ে নেয়। গাপ্পি বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়।
রঙিন মাছ চাষে চৌবাচ্চা এমন জায়গায় করতে হবে, যেখানে আলো-বাতাস থাকবে। কিন্তু চড়া রোদ পড়বে না। চৌবাচ্চার উপর ফাঁস জালের ছাউনি দিতে হবে। যাতে পাখি উৎপাত করতে না পারে। চৌবাচ্চার জল পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। চৌবাচ্চার জলের তাপমাত্রা যেন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চৌবাচ্চার উচ্চতা আড়াই ফুটের বেশি দরকার নেই। চৌবাচ্চার সঙ্গে জলের লাইন, বিদ্যুৎ, এয়ার ব্লোয়ার, ওয়াটার হিটার রাখতে হবে। পি এই চ পেপার এবং ওয়াটার থার্মোমিটারও রাখা দরকার। চৌবাচ্চায় জল ভরার সময় কয়েক চামচ খাবারের লবন মিশিয়ে দিতে পারলে ভালো। সরাসরি পুকুর, টিউবওয়েল বা শহরের নলবাহিত ক্লোরিন মেশানো জল চৌবাচ্চায় ভরা উচিত নয়। ওই জল দু’দিন রেখে থিতিয়ে নিতে হবে। রঙিন মাছের চৌবাচ্চার জলে বেশি মাত্রায় পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ব্যবহার করা যাবে না। এখন বাজারে ফাইবার গ্লাসের চৌবাচ্চা পাওয়া যায়। এগুলি ব্যবহার করা ও জায়গা পরিবর্তন করার কাজে সুবিধা হয়।
শখের রঙিন মাছ পোষার জন্য কাচের অ্যাকোরিয়ামই ভালো। অ্যাকোরিয়ামটি এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেখানে আলো-বাতাস পায়। অ্যাকোরিয়ামের নীচে মোটা বালি ও নুড়ি দিতে হবে। অ্যাকোরিয়ামের পিছনের দিক ২ ইঞ্চি পুরু করে বালি দিতে হবে। এর পর ঢাল করে অ্যাকোরিয়ামের সামনের দিকে বালি ১ ইঞ্চি পুরু হবে। এতে সামনে থেকে অ্যাকোরিয়ামের পিছন দিকে থাকা মাছেদেরও ভালোভাবে দেখা যাবে। তাছাড়া অ্যাকোরিয়ামের ভিতর যে নোংরা জমা হবে তা ঢাল বেয়ে সামনের দিকে চলে আসবে। ফলে পরিস্কার করতে সুবিধা হবে। অ্যাকোরিয়ামে বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাছের খাবার দেওয়ার জন্য কাপ রাখা দরকার। কম খাবার দিতে হবে। কারণ, বেশি খাবার দিলে অ্যাকোরিয়ামের জল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। মাছেদের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে শ্যাওলা, জলের নীচে বেঁচে থাকে, এমন গাছ রাখতে হবে।
নিয়ম মেনে পরিচর্যা করলে রঙিন মাছের রোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। শুকনো ও জীবন্ত খাবার দিতে হবে। সপ্তাহে একবার করে জল পাল্টাতে হবে। অ্যাকোরিয়ামে গাছ বসানোর আগে শোধন করে নিতে হবে। দুর্বল ও অসুস্থ মাছকে অ্যাকোরিয়াম থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। ত্বকে ঘা নজরে এলে জাল দিয়ে সেই মাছ তুলে অন্য পাত্রে রেখে চিকিৎসা করতে হবে। আক্রান্ত মাছটি যে পাত্রে রয়েছে, তার জলে ২ শতাংশ মারকিউরোক্রোম দ্রবণ প্রতি লিটার ২ ফোটা হিসেবে দিনে একবার যোগ করতে হবে। প্রতিদিন ওই পাত্রের জল পাল্টাতে হবে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে অনেক সময় মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগ দেখা দেয়। এর ফলে মাছের সাঁতার কাটার ক্ষমতা কমে। চিকিৎসায় দেরি হলে মাছ মারা যায়। আক্রান্ত মাছকে লবন দ্রবণে রাখতে হবে। মাছের গায়ে ছোট সাদা দাগ দেখা যায়। মাছ শক্ত কিছুর সঙ্গে গা ঘষতে থাকে। আক্রান্ত মাছ তুলে আলাদা পাত্রে রেখে তার জলে ৫ শতাংশ মিথিলিন ব্লু ৫ লিটার জলে ১ ফোটা হিসেবে দিতে হবে। অনেক সময় মাছের গা হলদেটে হয়ে যায়। দ্রুত চিকিৎসা না করলে মাছ মারা যায়। ম্যালাকাইট গ্রিন দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
তথ্যসূত্র: বর্তমান পত্রিকা
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)