কৃষিজাগরন ডেস্কঃ মহিষ একটি মূল্যবান গৃহপালিত প্রাণিসম্পদ। গ্রীষ্মপ্রধান ও অগ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলি মহিষ পালনের উপযোগী। তবে ভারত হচ্ছে বিশ্বের মহিষ উৎপাদনের উবর্রভুমি। তাই মহিষ পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। নিন্মে মহিষের তিনটি মারাত্মক রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে দেওয়া হল।পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের অধিকাংশ মানুষ কোন না কোন কৃষি কাজের সাথে জড়িত। কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রাণিসম্পদের ভূটিকা অপরিসীম। মহিষ পালন তার মধ্যে অন্যতম।
মহিষের তড়কা রোগ
রোগের কারণ
ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
লক্ষণ
১। সুস্থ পশু হঠাৎ লাফ দিয়ে অথবা টলতে টলতে খিচুনি দিয়ে মারা যায়।
২। শরীরের তাপমাত্রা ১০৪-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
৩। পশু মারা যাবার পর রক্ত জমাট বাঁধে না।
৪। মরার পর নাক-মুখ দিয়ে রক্তের ফেনা বের হয়। পেট ফুলে যায় ও মৃতদেহে দ্রুত পচন ধরে।
৫। ১-২ দিনের মধ্যেই পশু খুব দুর্বল ও অবশ হয়ে পরে এবং মারা যায়।
আরও পড়ুনঃ মৌমাছি পালন লাভজনক হবে,জানতে হবে ঋতুভিত্তিক পরিচর্যার কিছু উপায়
প্রতিরোধ
১। টিকা প্রদান করে রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
২। মৃত পশুকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।
৩। গোয়ালঘর জীবানুনাশক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।
চিকিৎসা
পেনিসিলিন দ্বারা মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে। তবে ক্রিস্টালাইন পেনিসিলিন দিয়ে শিরায় ইনজেকশন দিয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়।
মহিষের বাদলা রোগ
রোগের কারণ
ইহা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ হয়ে থাকে।
লক্ষণ
১। সাধারণত ৬-১৮ মাস বয়সী বাড়ন্ত স্বাস্থ্যবান বাচ্চুর বেশি আক্রান্ত হয়।
২। প্রথমে খুব জ্বর (তাপমাত্রা ১০৫-১০৬০ ফাঃ পর্যন্ত) হয়।
৩। এ রোগে পশুর মাংসপেশী আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়।
৪। ফুলা অংশের ভেতর পচন ধরে এবং টিপ দিলে পচপচ শব্দ হয়।
৫। ফুলা স্থান কাটলে বাতাস ও ফেনাযুক্ত তরল পদার্থ বের হয়।
৬। খাওয়া ও জাবর কাটা বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
০৬ মাস বয়য়ে এ রোগের প্রতিষেধক টিকা দিলে ০১ বছর পর্যন্ত এ রোগ হয় না ।আশঙ্কাযুক্ত এলাকায় প্রতি ১০০ কেজি ওজনের পশুর জন্য ০২ মিলি ব্ল্যাককোয়ার্টার অ্যান্টিসিরাম ইনজেকশন দিতে হবে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
এটি দূরারোগ্য ব্যাধি, তবে পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়।
ক্ষুরা রোগ
রোগের কারণঃ ইহা ভাইরাস দ্বারা ঘঠিত একটি রোগ।
লক্ষণ
১।মুখে, জিহ্বায় ও ক্ষুরে ঘা হয়।
২। মুখ দিয়ে লালা পড়ে।
৩। জ্বর হয় (শরীরের তাপমাত্রা ১০৫০ থেকে ১০৬০ ফাঃ পর্যন্ত) হয়।
৪। পশু কিছু খেতে পারে না।
৫। দুধাল গাভী মহিষের দুধ কমে যায়।
৬। পায়ের ক্ষুরায় ঘা হওয়ায় হাটতে পারে না।
৭। এ রোগে আক্রান্ত বাছুরের মৃত্যুর হার বেশি।
আরও পড়ুনঃউন্নত জাতের এই তিন মুরগী পালনে ফিরতে পারে ভাগ্য,জেনে নিন সঠিক পালন পদ্ধতি
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
টিকা প্রদান করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
দিনখ ও পায়ের ঘারের জন্য ফিটকারি বা পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট অল্প পরিমানে পানিতে মিশিয়ে দিনে।
২-৩ বার মুখ ও পা ধুইয়ে দিতে হবে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
১। দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এন্টিবায়োটিক যেমন সালফোনামাইড ইনজেকশন দিতে হবে।
২। পায়ের ঘা দ্রুত সারানোর জন্য সালফোনামাইড পাউডার ক্ষতস্থানে ব্যবহার করতে হবে।