বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালনের ব্যবসা উপার্জনের এক দুর্দান্ত উত্স রূপে প্রমাণিত হচ্ছে। ডিম ও মাংসের জন্য হাঁসের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। অনেক সফল কৃষক আছেন যারা হাঁস চাষের ব্যবসা থেকে ভাল লাভ করছেন।
ভারতে অনেকেই হাঁস পালন করেন। আমাদের দেশে হাঁস চাষকেন্দ্রিক ব্যবসার সুবিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্বে এটি বেশীরভাগ বাড়িতে ডিমের জন্য লালন করা হত, তবে এখন এটি কর্মসংস্থানেরও মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ আমরা এই প্রবন্ধে হাঁসের কিছু উন্নত প্রজাতি এবং তার পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব।
হাঁসের কিছু উন্নত প্রজাতি হল (Duck Breed) -
১. খাকি ক্যাম্পবেল
২. নাগেশ্বরী,
৩. ইন্ডিয়ান রানার,
৪. চরা চেম্বল্লি
মাংসের জাতের জন্য -
১. পেকিন,
২. চীন হাঁস,
৩. মস্কোভি,
৪. রুয়েল কাগুয়া
ডিম দেওয়ার জাতগুলির মধ্যে ‘খাকি ক্যাম্পবেল’ হল সেরা। এই প্রজাতির হাঁসের মধ্যে ডিম দেওয়ার ক্ষমতা ২৪০ থেকে ২৮০ টি ডিম প্রতি পাখি/বছর।
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ওজন (Information About Khaki Campbell) –
স্ত্রী হাঁসের ওজন প্রায় ২ থেকে ২.২ কেজি এবং পুরুষ হাঁসের ওজন ২.২ থেকে ২.৪ কেজি হয়। ডিমের আকার ৬৫ থেকে ৭৫ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।
বেশী পরিমাণ ডিম উৎপাদনের জন্য পরিপূরক খাদ্য ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। হাঁসের খামারে কনসেন্ট্রেড ফিডের সাথে কমপক্ষে অর্ধেক ডোজ প্রস্তাবিত খাবার দিয়ে প্রত্যহ পরিপূরক খাবার দেওয়া উচিত। খাদ্যের মধ্যে ১৬% প্রোটিন এবং ব্রয়লার ফিনিশার পাখির জন্য ২০% প্রোটিন থাকা আবশ্যক। স্টার্টার রেশন (০-৮ সপ্তাহ) এবং গ্রোয়ার রেশনে যথাক্রমে ২২-২৪ এবং ২০% প্রোটিন থাকা উচিত। এক সপ্তাহ বয়সের একটি হাঁসের বাচ্চাকে ১৫ গ্রাম অনুপাতে খাবার দেওয়া দরকার। ২ সপ্তাহের হাঁসের বাচ্চার ক্ষেত্রে খাবারের পরিমাণ হবে ২৫ গ্রাম। ৩ সপ্তাহের ক্ষেত্রে খাবারের পরিমাণ ৪০ গ্রাম। ৪ সপ্তাহের ক্ষেত্রে খাবার লাগবে ৫০ গ্রাম। ৫ মাসের পর থেকে সপ্তাহে ১৪০ গ্রাম খাবার দেওয়া উচিত। যাঁরা বাজার থেকে কেনা খাবার খাওয়ান, তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে, খাকি ক্যাম্পবেল বাচ্চার ১দিন থেকে ২ মাস বয়স পর্যন্ত ডাক স্টার্টার, ২ মাস থেকে ৫মাস পর্যন্ত ডাক গ্রোয়ার ও ৫ মাসের পর থেকে লেয়ার খাবার দিতে হবে।
বর্ষায় পরিচর্যা –
বর্ষায় খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস যেন কোনওভাবেই না ভেজে। হাঁসের খাবার খোলা জায়গায় বেশিক্ষণ রাখা চলবে না। হাঁসের খাওয়ার জল শোধন করে দিতে হবে। হাঁসের থাকার ঘর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এই সময় হঠাৎ করে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। হাঁসের খাবার যেন বৃষ্টিতে না ভেজে। তা হলে খাবারে থাকা লবণাক্তভাব নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খাবার স্বাদহীন হয়ে পড়ে। ওই খাবার হাঁস খেতে চায় না। দিনেরবেলায় হাঁস রান এরিয়া অর্থাৎ আকাশের নিচে রাখতে হয়। কিন্তু রোদ গায়ে লাগলে হাঁসের কষ্ট হতে পারে। সেজন্য শেডের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। হাঁস যখন চাইবে, তখন খোলা জায়গায় থাকবে। যখন মনে করবে শেডের নিচে চলে আসবে।
নিয়মিত হাঁসকে প্রতিষেধক দেওয়া উচিত। হাঁসের বাচ্চার থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দিতে হবে। হাঁসের ঘরে লিটারের উপর ৯:১ অনুপাতে চুন ও ব্লিচিং ছড়াতে হবে। এতে লিটার ঝুরঝুরে এবং দুর্গন্ধমুক্ত থাকবে।
খাকি ক্যাম্পবেল সাড়ে ৪ মাসের পর থেকে ডিম দেওয়ার অবস্থায় চলে আসে। হাঁসের ঘরে রাতে আলো জ্বেলে রাখতে হবে। দেড় মাস থেকে ২ মাস পর্যন্ত হাঁসকে জলে নামতে দেওয়া যাবে না। ডাঙায় পালন করতে হবে। হাঁসের ঘরের তাপমাত্রা ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকা উচিত। একটি হাঁসের জন্য রাতে আড়াই বর্গ ফুট জায়গা দরকার। হাঁসকে সবসময় টাটকা খাবার দিতে হবে।
আরও পড়ুন - Cow Rearing – গো-পালন করেন? গো-পালনে লাভ করতে হলে গাভী সম্পর্কে অবশ্যই জানুন এই তথ্যগুলি
রোগ প্রতিরোধ -
সাধারণভাবে খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের রোগব্যাধি কম হলেও কিছু রোগ হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আগাম প্রতিষেধক দিতে হবে। তা হলে সমস্যা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। খাকি ক্যাম্পবেলের প্লেগ রোগ হয়। এই রোগ হলে হাঁস ঝিমোয়। চোখ বন্ধ হয়ে যায়। নাক-মুখ দিয়ে জল বেরতে থাকে। সবুজাভ-সাদা পাতলা মলত্যাগ করে। তিন-চারদিনেই হাঁস মারা যায়। প্রতিষেধক হিসেবে প্রথমে ২ সপ্তাহে, পরে ১০ সপ্তাহে, শেষে ২৪ সপ্তাহে টিকা দিতে হবে। তার পর বছরে একবার করে টিকা দেওয়া দরকার। যদি খামারের মধ্যে রোগ হয় তবে তাড়াতাড়ি নিকটতম পশুচিকিত্সককে নিয়ে আসুন এবং যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করুন।