কৃষিজাগরন ডেস্কঃঅনেকেই থাই সরপুঁটি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এটি দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় সবাই এ মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এটি থাইল্যান্ডের বিশেষ প্রজাতির মাছ । দেশি সরপুঁটির মতো এটি দেখতে, তাই একে থাই সরপুঁটি বলা হয়। তবে এর বর্ণ দেশীয় সরপুঁটির চেয়ে আরও উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় রঙের। থাই সরপুঁটি খেতে বেশ সুস্বাদু। প্রতিকূল পরিবেশে কম অক্সিজেনযুক্ত বেশি তাপমাত্রার জলেও এ মাছ বেঁচে থাকতে পারে। বাড়ির আশপাশেই থাকা মাঝারি আকারের পুকুর কিংবা ডোবায় এ মাছ চাষ করা যায়। এসব পুকুর-ডোবায় বছরের অধিকাংশ সময়ই পানি থাকে না।
গ্রামাঞ্চলের পতিত এ পুকুর-ডোবাগুলো সামান্য সংস্কার করে খুব সহজেই চাষ উপযোগী করা যায়। এই মাছ চাষে কৃষকদের আর্থিক দিক থেকেও উন্নতি ঘটছে |বেকার যুবকরা স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচে এ ধরনের জলাশয়ে থাই সরপুঁটি মাছের চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। রুই জাতীয় মাছের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম খরচে, কম সময়েও সহজতর ব্যবস্থাপনায় এ মাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ Duck Farming: হাঁস পালন করবেন? শিখে নিন পদ্ধতি, মুরগির খেকে বেশি লাভ হবে
থাই সরপুঁটি চাষের পদ্ধতি
মিশ্র চাষ পদ্ধতি অর্থাৎ রুইসহ অন্যান্য উন্নত প্রজাতির মাছের সঙ্গেও এ মাছ চাষ করা যায়। ৬ মাসে একটি থাই সরপুঁটির পোনা গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনে পরিণত হয়। একই পুকুরে বছরে ২বার এ মাছের চাষ করা যায়।
মাছ চাষের ক্ষেত্রে পুকুর নির্বাচন করার পদ্ধতি
এ মাছ চাষের জন্য পুকুরের আয়তন ৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ হতে পারে। এর চেয়ে বেশি হলেও ক্ষতি নেই। তবে এক একরের বেশি না হলেই ভালো। পুকুরের গভীরতা হবে ১.৫ মিটার থেকে ২ মিটার অর্থাৎ তিন থেকে চার হাত। পোনা ছাড়ার আগে পুকুর ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে।শুকনো মৌসুমে পুকুরের সম্পূর্ণ পানি নিষ্কাশন করে তলার মাটি ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে রোদে শুকাতে হয়। এরপর লাঙল দিয়ে কর্ষণ করে নিতে হবে। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী মেরে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এ পর্যায়ে পুকুর প্রস্তুতির জন্য প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
খাদ্য
পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটনের পর্যাপ্ত মজুদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে প্রতি শতাংশে ১.৫ ইঞ্চি থেকে ২ ইঞ্চি সাইজের ৬০-৬৫টি থাই সরপুঁটির পোনা ছাড়া যেতে পারে। পুকুরে যে পরিমাণ মাছ আছে, সে মাছের মোট ওজনের শতকরা চার থেকে ছয় ভাগ হারে চালের কুড়া বা গমের ভুসি সম্পুরক খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে দুবার পুকুরের সব জায়গায় ছিটিয়ে দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ Profitable Fish Farming: মাছ চাষের অভিনব পদ্ধতি,শিখে নিলে লাভ হবে দ্বিগুন
প্রতি মাসে একবার জাল টেনে মাছের গড় ওজন নির্ধারণ করে খাবারের পরিমাণ ক্রমশ বাড়াতে হবে। পুকুরে মাছের খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতি শতাংশে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ওই পরিমাণ টিএসপি সার প্রয়োগ করা অত্যাবশ্যক। থাই সরপুঁটি সাধারণত নরম ঘাস পছন্দ করে। তাই এ মাছের জন্য ক্ষুদে পানা, টোপা পানা, নেপিয়ার ঘাস, কলাপাতা ইত্যাদি প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে হলেও সরবরাহ করা গেলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
থাই সরপুঁটির রোগ ও প্রতিকার:
মাছ নিয়মিত বাড়ছে কিনা এবং মাছ রোগাক্রান্ত হচ্ছে কিনা জাল টেনে মাঝে মাঝে তা পরীক্ষা করতে হবে।* ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, ফাংগাস জনিত কোন রোগ যেন না হয় তার জন্য আগে থেকেই প্রতি শতাংশ ১ গ্রাম হারে Timsen (টিমসেন) ১৫ দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে।ক্ষত রোগের প্রাদুর্ভাব হলে পুকুরে জীবানুনাশক (টিমসেন – ৮০ গ্রাম/বিঘা (১ম ডোজ) ও ৫০ গ্রাম/বিঘা (২৪ ঘন্টা পর ২য় ডোজ) ব্যবহার করতে হবে। একই সাথে এন্টিবায়োটিক হিসাবে ২ গ্রাম অক্সিটেট্রাসাইক্লিন প্রতি কেজি খাবারের সাথে মিশিয়ে ৭ দিন প্রয়োগ করতে হবে ।
মাছ সংগ্রহ পদ্ধতি
এই প্রক্রিয়ায় ৫-৬ মাস পালনের পর এক একটি মাছের ওজন দাঁড়াবে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম। এ সময় মাছ বাজারজাত করার পুরোপুরি উপযোগী হয়। সুস্বাদু মাছ হিসেবে বাজারে এ মাছের চাহিদাও প্রচুর।মাছ বাজারজাত করার পুরোপুরি উপযোগী হয় এবং সর্বনিম্নে ৮০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি করা যায়। সুস্বাদু মাছ হিসেবে বাজারে এ মাছের চাহিদাও থাকে প্রচুর।