আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক এবং পুষ্টিগত অবস্থা উন্নয়ণের সহায়ক হিসাবে গরু, ছাগল, মহিষ ও মেষ পালন এক অন্যন্য স্থানে রয়েছে। অতি সামান্য খরচ ও সহজ পরিচর্যায় গরু পালন করা যায়। যে কোন চারণ ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কাঁচা ঘাস খাইয়ে অল্প খরচে বৎসরের শুকনা মৌসুমে প্রায় সব সময়ই গো পালন করা যায়। গো পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে অতিরিক্ত আয়ের জন্য দরকার গাভীন গরুর যত্নে কিছু নিয়মাবলী পালনের।
গাভীন গরুর যত্ন ও পরিচর্যা:-
- ভালো বাছুর পেতে হলে গাভীন-গরুটির যত্ন নিতে হবে। গাভীন গরুটিকে গাভীন হওয়ার ৬-৭ মাস পর্যন্ত ভালো পুষ্টিগুন সম্পন্ন খাবার দিতে হবে। সবুজ গোখাদ্য যেমন - ঘাস জাতীয় খাবার অবশ্যই দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে দানা খাদ্যও দিতে হবে। গাভীন গরুর ৬-৭ মাস হয়ে গেলে খাবারের পরিমান অল্প অল করে কমিয়ে দিতে হবে কারন এই সময় গাইয়ের পেটে বাছুরের আয়তন বেশী হওয়ায় গাই বেশী খেতে পারে না এবং বেশী খেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গাভীন গরুটিকে চরতে ছাড়তে হবে। এতে তার শারীরিক ক্রিয়া হবে এবং বাছুরের স্বাস্থ্য ভালো হবে। তবে চড়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, অন্য গরুর সাথে যেন লড়াই না করে বা লাফ ঝাঁফ না করে, এতে বাছুরটির ক্ষতি হবে।
- গাভীন গরুকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নারকেলের ছোবড়া বা খড় দিয়ে গা ঘষে দিতে হবে ও জল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। গাভীন গরুকে অন্যান্য গরুর থেকে একটু তফাতে রাখতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য বা কৃমিনাশক জাতীয় ওষুধ গরুকে বুঝে খাওয়াতে হবে। তবে ৩-৭ মাসের গাভীন হওয়ার পরে এই জাতীয় ওষুধগুলি না খাওয়ানোই বাঞ্ছনীয়।
- গাভীন গরুর প্রসবকালে / বাচ্চা হওয়ার সময় একজন পশুদের ডাক্তারের উপস্থিতি কাম্য। যদিও সবক্ষেত্রে ডাক্তারের প্রয়োজন নাও পড়তে পারে। গরুর প্রসব হওয়ার আগে আগে গরুটির বসার জন্য বা শোওয়ার জন্য শুকনো পরিষ্কার ঘাস চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রসবের পরে দুই থেকে তিনদিন গরুটিকে ভুষি খাওয়াতে হবে। বিয়ানোর পরে পরেই গরুকে উষ্ণ গরম জলে গুড় মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
বাছুরের যত্ন-
- বাছুরটির জন্মের সাথে সাথে বাছুরটির দেহ থেকে ও নাক-মুখ থেকে শ্লেম্মা জাতীয় জিনিসগুলি ভালো করে মুছে নিতে হবে। ভালো শুকনো পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে বাছুরটিকে পরিষ্কার করে দিতে হবে। তবে গরুটি নিজেই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে চেটে বাছুরটিকে পরিষ্কার করে দেয়।
- এরপর বাছুরটির নাভি কেটে দিতে হবে। এক ইঞ্চি মত রেখে যে জায়গায় কাটা হবে, তার দুই পাশে ক্লিপ জাতীয় জিনিস লাগিয়ে নাভিটি কেটে দিতে হবে। কাটা নাভির জায়গায় টিংচার আয়োডিন দিয়ে দিতে হবে, না হলে নাভি পেকে যেতে পারে। এইভাবে তিনদিন পর্যন্ত আয়োডিন লাগাতে হবে, যাতে নাভি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
- বাছুরের জন্মের পরপরই গরুটির পালানে যে হালকা হলুদ রঙের দুধ আসে,
যাকে গাঁজলা দুধ বলে তা অবশ্যই খাওয়াতে হবে। এই দুধ বাছুরের স্বাস্থ্যের পক্ষে
ভীষণ উপকারী। তিনদিন পর্যন্ত বাছুরকে ঐ গাঁজলা দুধ খাওয়াতে হবে। এতে
বাছুরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে।
- বাছুরটিকে মায়ের কাছে শুধু দুধ খাওয়ানোর সময়ই রাখতে হবে, বাকী সময়
তাকে খোলামেলা জায়গায় অন্য গরুর থেকে একটু আলাদা রাখতে হবে। বাছুরটিকে রোজ শরীর আঁচড়ে বা ঘষে দিতে হবে। এতে গায়ে ময়লা জমবে না ও দেহের ঔজ্জ্বল্য বাড়বে। বাছুরটির ১.৫-২ মাস বয়স হলে তাকে ছোট কচি ঘাস খাওয়ানো শুরু করতে হবে।
দুগ্ধবতী গাভীর পরিচর্যা:-
- দুগ্ধবর্তী গাভীকে পর্যাপ্ত পরিমান সবুজ ঘাস বা পাতা খাওয়ানো দরকার। এর সাথে মাঝে মাঝে দানা খাদ্যও খাওয়াতে হবে। দুগ্ধবতী গাভীকে দোয়ানোর সময় হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে এবং যে পাত্রগুলি ব্যবহার করা হবে, সেগুলি যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়।
- দুধ দোওয়ানোর আগে ও পরে গাইয়ের পালান ও বাঁট দুটিই আয়োডিন জল দিয়ে ও তারপর হালকা উষ্ণ গরম জলে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। দুধ দোওয়ানো হয়ে গেলে বাঁটের মুখে একটু আয়োডিন লাগিয়ে দিতে হবে। এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, দুধ দোয়ানোর পরে পরেই গরুটি যেন মাটিতে না বসে, এতে ঠুনকো রোগ বা পালান প্রদাহের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।
- দুগ্ধবতী সংকর গাভীকে দিনে দুইবার দোয়ানো দরকার, একবার দোয়ালে গরুটির দুধ উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়, সেই কারনে সকালে ও বিকালে দুইবার দুধ দোয়াতে হবে।
- দুগ্ধবতী গরুটি যখন গাভীন থাকবে তখন বাচ্চা বিয়ানোর ৪০-৬০ দিন আগে
থেকেই গরুটিকে আন্তে আস্তে শুকিয়ে আনতে হবে। যাতে পরবর্তী বিয়ানে গরুটি ভালো দুধ দিতে পারে। কমপক্ষে ৩০-৪৫ দিন পর্যন্ত গরুটিকে শুকনো রাখতেই হবে।
নিবন্ধ লেখক - ড. মানস কুমার দাস (বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, জলপাইগুড়ি)
Image Source - Google
Related Link - (Prevent coronavirus infection in dairy farms) ডেয়ারি ফার্মে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু অতি সক্রিয় পদক্ষেপ
(Turkey farming) পশ্চিমবঙ্গে টার্কিচাষ এনেছে মহিলাদের জীবনে নতুন অধ্যায়