আপনি কি জানেন, কাঁকড়া চাষ করে আপনি তিন মাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন। কাঁকড়া চাষের প্রধান সুবিধা হল শ্রম খরচ খুবই কম, উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং এরা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। যথাযথ যত্ন ও ব্যবস্থাপনার দ্বারা চিংড়ি (Shrimp farming) চাষের থেকে কাঁকড়া চাষের ব্যবসা থেকে বেশি আয় করা যেতে।
দুধরনের কাঁকড়া রয়েছে।
বাণিজ্যিক উৎপাদনের (Commercial Cultivation) জন্য দু প্রকার প্রজাতির কাঁকড়া ভালো- গ্রিন মাড কাঁকড়া ও রেড ক্ল।
-
গ্রিন মাড কাঁকড়া আকারে বড় হয়। এরা ২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
-
রেড ক্ল সাধারণত গ্রিন মাড কাঁকড়ার থেকে ছোট হয়। এরা সাধারণত ১.২ কেজি পর্যন্ত হয়।
কাঁকড়ার চাষ –
সুন্দরবনের নদী-নালা-খাল-বিল থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিবছর বহু মানুষ বাঘ-কুমিরের শিকার হয়। বিকল্প এই ধরণের কাঁকড়া চাষ রাজ্যে তেমন না থাকায় জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সংঘাত লেগেই থাকে। কয়েকটি জেলায় বেসরকারি উদ্যোগে সম্প্রতি কাকড়া চাষ শুরু হলেও তা খুব একটা লাভজনক হয়নি। কারণ বদ্ধ জলাশয়ে হাজারে হাজারে কাঁকড়া থাকলে, নিজেদের মধ্যে মারামারিতেই অধিকাংশ মারা যায়, ফলে আশানুরূপ উৎপাদন পাওয়া যায় না।
পাশাপাশি যে কাঁকড়াগুলি পাওয়া যাচ্ছে, তা অনেক সময়েই রপ্তানির উপযুক্ত হচ্ছে না। ফলে চাষ করেও বিশেষ লাভের মুখ দেখছেন না মৎস্যজীবীরা। ফলে জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার প্রবণতা এখনও সমানভাবেই চলছে। বাক্সে কাঁকড়া চাষ যদি সফলভাবে করা যায়, তাহলে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে না গিয়ে, অনেক মৎস্যজীবীই বাক্সে কাঁকড়া চাষ করবেন। কারণ, বাক্সে চাষ করা হলে, কাঁকড়ার মৃত্যুর সম্ভাবনাও কমে যায়।
এর ফলে জঙ্গলে মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাতও এড়ানো সম্ভব হবে । চাহিদা মতো উৎপাদনও করাও সম্ভব হবে । বাংলাদেশে ইদানীংকালে এই চাষ বেশ জনপ্রিয় এবং লাভজনক হয়েছে। সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে সমুদ্রে বাক্সে কাঁকড়া চাষের পরীক্ষামূলক চেষ্টা করা হয়েছে।
কাঁকড়ার চাষের পদ্ধতি -
দুইভাবে এই চাষ করা যেতে পারে। গ্রো আউট সিস্টেম এবং ফ্যাটেনিং সিস্টেম। প্রথম সিস্টেমে কাঁকড়াদের ৫ থেকে ৬ মাস চাষ করা হয় যতক্ষণ না তারা বাজারে বিক্রির জন্য উপযুক্ত হয়। ফ্যাটেনিং সিস্টেমে কাঁকড়ার চাষে সময় কম লাগে আর এটি বেশী লাভজনক। কাঁকড়ার চাষে জল খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাঝে মাঝে জল পরিবর্তন করা ভালো, ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে, কাঁকড়ার শরীরের ওজনের ৫-৮% খাবার এদের প্রয়োজন।
কাঁকড়ার খাদ্য -
আপনি কম খরচে আপনার কাঁকড়াকে পচা মাছ, মুরগির বর্জ্য ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন। একসাথে সব খাবার দেবেন না। পরিবর্তে দিনে দুবার দিতে পারেন। সন্ধ্যা বেলায় বেশী খাবার দিতে হয়। সঠিক সাইজের কাঁকড়াকে বাজারে বিক্রি করতে হবে। গ্রো আউট সিস্টেমে কাঁকড়া সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাসে আর ফ্যাটেনিং সিস্টেমে কাঁকড়ার আকারের উপর নির্ভর করে বাজারে চালান করা হয়। এদেরকে খুব ভোরে আর নাহলে সন্ধ্যাবেলাতে জল থেকে তোলা উচিত। সরাসরি সূর্যের আলো থেকে এদেরকে বাঁচানো উচিত, কারন সূর্যের আলো এদের পক্ষে ভালো না।
একই পুকুরে পাঁচবার কাঁকড়া চাষ করা যায়। কাঁকড়া চাষ করে ভালো মুনাফা করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে চাষ করলে এক বিঘা পুকুরে কাঁকড়া চাষ করে তিন মাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব বলে মত অভিজ্ঞদের। ধীরে ধীরে এটি একটি লাভজনক ব্যবসা রূপে গড়ে উঠছে।